রাজশাহীতে গত কয়েক দিন ধরে বিরাজমান বৈরী আবহাওয়ার কারণে বাণিজ্যিকভাবে পালন করা অ্যালবিনো প্রজাতির অন্তত ৬০০টি ইঁদুর মারা গেছে। খামারিদের দাবি, তাপদাহের কারণে গত কয়েক দিনে ইঁদুরগুলোর হিট স্ট্রোক হয়ে মারা গেছে। এতে করে খামারিরা হঠাৎ করেই লোকসানের মুখে পড়েছেন।
এদিকে তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে ইঁদুরগুলোকে বাঁচাতে তাদের শীতলতম স্থানে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই জাতের ইঁদুরগুলো বেচাকেনা বন্ধ রেখেছেন খামারিরা।
রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটখালীর সমসাদিপুরে বেশ কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে অ্যালবিনো প্রজাতির সাদা ইঁদুর পালন করছেন সালাউদ্দিন মামুন। খামার থেকে তার প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা আয় হয়। প্রতিটি ইঁদুর বিক্রি করেন ১২০ টাকা দরে। কিন্তু গেল ১৫ দিনের তীব্র তাবদাহের কারণে মামুনসহ রাজশাহীর আরো অন্তত ২০ জন খামারির ইঁদুর মারা গেছে। গত কয়েক দিনে শুধু মামুনের ৩৫০টি ইঁদুর মারা গেছে।
সালাউদ্দিন মামুন বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় ৬০০ ইঁদুর বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) পর্যন্ত মারা গেছে। আমরা যারা খামারি আছি, তারাই ফ্যান দিয়ে ইঁদুর লালন-পালন করি। কোনো কোনো সময় ফ্যানও থাকে না। কিন্তু বিদেশে ল্যাবগুলোতে এসির ব্যবস্থা রয়েছে। একইভাবে দেশের সরকারি ল্যাবগুলোতেও এসি চলে। ফলে সেখানে এই ইঁদুরগুলোর গরমজনিত কারণে সমস্যা হয় না। আমাদের রাজশাহীতে তাপমাত্রা বেশি, গরম বেশি। গরমের তুলনায় আমরা তাদের শীতল জায়গার ব্যবস্থা করতে পারিনি। এসি কেনারও সামর্থ্য নেই। খামারগুলো টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি। ফলে প্রখর রোদে টিনের চালা আরো তেঁতে উঠে। এছাড়া ইঁদুর বাক্সের ভেতরে থাকে। ফলে তীব্র ভ্যাপসা গরমের মধ্যে পড়ে মারা যাচ্ছে।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ইঁদুর মারা যাওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। গত কয়েক দিন ধরে রাজশাহীতে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। সে কারণে হিট স্ট্রোকের মতো সমস্যা বাড়ছে প্রাণীদের। তাই তারা প্রাণিগুলোকে এখন সব সময় শীতলতম স্থানে রাখতে এবং অন্য গবাদি পশুদেরও গোসল করাতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সের ডেপুটি চিফ ভেটেরিনারিয়ান ডা. হেমায়েতুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, গরমেই যে ইঁদুরগুলো মারা গেছে বা যাচ্ছে, তা ময়নাতদন্ত ছাড়া এখনই বলা ঠিক হবে না। তবে গরম মৃত্যুর জন্য একটা ফ্যাক্টর হতে পারে। গরমের কারণে হিট স্ট্রোকও হতে পারে। কিন্তু হঠাৎ করে এতগুলো ইঁদুর মারা গেল, তা খাবারে টকসিনের কারণেও হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।