করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম হু হু করে বাড়ছে । বিশ্বের বড় বড় শেয়ারবাজারে ধস শুরুর পাশাপাশি হু হু করে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। বিশ্ববাজারে বর্তমানে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ২০১৩ সালের পর সর্বোচ্চ এক হাজার ৬৮৯ দশমিক ৩১ মার্কিন ডলারে।
বিশ্ববাজারের সাথে তাল মিলিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাও। দেশে বর্তমানে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ৬১ হাজার ৫২৭ টাকায়। বিশ্লেষকদের অনুমান, শেয়ারবাজারে পতনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে এবং জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকলে স্বর্ণের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারে বড় ধস নেমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে গতকাল ডাও জোন্স সূচক দর হারায় এক হাজার পয়েন্ট তথা তিন দশমিক ৫ শতাংশ। এক বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ দরপতন। অন্য সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকটির দর কমে তিন দশমিক তিন শতাংশ এবং নাসডাক সূচকের দর কমে তিন দশমিক সাত শতাংশ।
যুক্তরাজ্যের প্রধান পুঁজিবাজার লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ-ভিত্তিক এফটিএসই ১০০ সূচকটি লেনদেন শেষে কমে তিন দশমিক তিন শতাংশ। ২০১৬ সালের পর এত দরপতন দেখেনি এই সূচক। সে সময় যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়ার সিদ্ধান্তের কারণে পুঁজিবাজারে সূচকের ধস নেমেছিল। করোনা-আতঙ্কে ইতালির মিলান স্টক মার্কেটে সূচকের দর কমেছে ছয় শতাংশ।
জানা যায়, বিশ্ববাজারে চাহিদা নিয়ে উদ্বেগের কারণে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে তিন শতাংশ। লন্ডনের বুলিয়ান মার্কেটে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৬৮৯ দশমিক ৩১ মার্কিন ডলার। ২০১৩ সালের পর আর এতটা দাম বাড়েনি মূল্যবান এ ধাতুটির। বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা মুদ্রার বদলে স্বর্ণকে বেছে নেয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় ইতালির মিলান শেয়ারবাজারে সূচকের দরপতন হয়েছে ছয় শতাংশ। যুক্তরাজ্যের প্রধান শেয়ারবাজার লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ-ভিত্তিক এফটিএসই ১০০ সূচকটি লেনদেন শেষে কমেছে তিন দশমিক তিন শতাংশ, চার বছরে যা সর্বোচ্চ দরপতনের ঘটনা।
ইতালির মিলান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলসহ বিশ্বের নাম করা সব শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা গেছে। চীনের বাইরে সম্প্রতি এই দেশ দু’টি করোনাভাইরাস বিস্তারের শিকার হয়েছে মারাত্মকভাবে। ইউরোপের দুই শেয়ারবাজার জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট এবং স্পেনের মাদ্রিদে দরপতন হয়েছে চার শতাংশ। ফ্রান্সের প্যারিসে এ দরপতনের হার তিন দশমিক ৯ শতাংশ। করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা এখন দুই হাজার ৭০৫ জন। এ ছাড়া প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটিতে ৮০ হাজার ২৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১০। তবে চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ইরানে ১৫।
এ দিকে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীরাও। তাদের দাবি, আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে স্বর্ণ আমদানি না হলেও লাগেজ আইনে যারা বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনেন তাদেরকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে স্বর্ণের দাম। গত এক বছরে ভরিপ্রতি প্রায় আট হাজার টাকা দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস)। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ভরিপ্রতি দাম বাড়ানো হয় এক হাজার ১৬৬ টাকা। এতে করে স্বর্ণের বেচাকেনায় বেশ মন্দাভাব বিরাজ করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাদের অনুমান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে স্বর্ণের দাম আরেক দফা বাড়াতে পারে বাজুস।
বর্তমান দর অনুযায়ী, দেশের বাজারে ভালো মানের ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬১ হাজার ৫২৭ টাকা, যা গত বছরের এ সময়ে ছিল ৫৩ হাজার টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫৯ হাজার ১৯৪ এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ ৫৪ হাজার ১৭৯ টাকা। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ৪১ হাজার ৪০৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম বর্তমানে ৯৩৩ টাকা। এর আগে ৫ জানুয়ারি ও ১৯ ডিসেম্বর দুই দফায় স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছিল বাজুস।
জুয়েলারি সমিতি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক বছরে স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ২৫০ ডলার বা একুশ হাজার টাকা। করোনাভাইরাসের পাশাপাশি সদ্যসমাপ্ত চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের কারণেও স্বর্ণের দাম দফায় দফায় বেড়েছে বলে জানান, সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগরওয়াল। স্বর্ণের দাম সহসা কমার সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বাড়তি দামের কারণে দেশের বাজারে স্বর্ণের বেচাকেনায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।