গবেষকরা বর্তমানে মনে করছেন যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে ৫ থেকে ৪০ জন মারা যেতে পারে, তবে বিজ্ঞানীরা জোরালোভাবে মনে করেন যে, প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে ৯ জন হয়তো মারা যান। অর্থাৎ এই হার এক শতাংশের সমান।
যদিও মৃত্যুর বিষয়টি আরো অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে, যেমন বয়স, লিঙ্গ ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং আপনি যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রয়েছেন তার অবস্থা কেমন সেটিও দেখার বিষয়।
মৃত্যুহার বের করা কতটা কঠিন?
মৃত্যুহার বের করাটা বেশ কঠিন। এমনকি কতজন মারা গেল তা গণনা করাটাও জটিল।
বেশিরভাগ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হিসাবের বাইরে থেকে যায় কারণ মৃদু উপসর্গ থাকলে কেউই চিকিৎসকের কাছে যেতে চায় না। ভাইরাসের ভিন্নতার জন্য বিশ্বজুড়ে যে মৃত্যু হার জানা যাচ্ছে তাও যথোপযুক্ত নয়।
ইম্পেরিয়াল কলেজের এক গবেষণা বলছে, মৃদু সংক্রমণ শনাক্তের ক্ষেত্রে কিছু দেশ পারদর্শী হলেও অনেক দেশে আবার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। যার কারণে আক্রান্তের হিসাব রাখাটা কঠিন।
তাই সব আক্রান্তের সংখ্যা লিপিবদ্ধ করা না হলে মৃত্যুহার অনেক বেশি বলে মনে হতে পারে, আবার বিপরীত হলে এর উল্টো চিত্রও হতে পারে।
সংক্রমণ ভালো হয়ে যাবে নাকি সেটি মৃত্যু ডেকে আনবে তা বুঝতে বেশ খানিকটা সময় লাগে।
আর এই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই যদি সব সংখ্যা লিপিবদ্ধ করা হয়, তাহলে মৃত্যুহার কম বলে মনে হবে, কারণ যারা শেষমেশ সংক্রমণে ভুগে মারা যাবে তাদের সংখ্যাটা সেসময় পাওয়া যাবে না।
বিজ্ঞানীরা এ ধরণের প্রতিটি ঘটনা একত্রিত করে মৃত্যুহার নিয়ে একটি সম্পূর্ণ চিত্র তৈরির চেষ্টা করেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিজ্ঞানীরা ছোট পরিসরে কঠোর পর্যবেক্ষণে রাখা নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের মধ্যে মৃদু উপসর্গের হার অনুমান করেন। পরে ওই সব ঘটনা থেকে ছোট ছোট পরিবর্তনও বড় পরিসরে বড় পরিবর্তনের সাথে যুক্ত করা হয়।
যেমন, যদি শুধু হুবেই থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করা হয় যেখানে অন্য জায়গার তুলনায় মৃত্যুহার অনেক বেশি, তাহলে সর্বমোট মৃত্যুহার আরো অনেক বেশি হবে।
তাই বিজ্ঞানীরা মৃত্যুহারের ক্ষেত্রে একটি ধারা বা পরিসীমা ব্যবহার করেন এবং সেই সাথে সর্বশেষ সম্ভাব্য ধারণাটিও জানিয়ে দেন।
কিন্তু এটিও আসলে পুরো ঘটনার পূর্ণ চিত্র দেয় না কারণ এর কোন একক মৃত্যুহার নেই।
সাধারণ মানুষের ঝুঁকি কতটা?
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কিছু মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়: যেমন যারা বয়স্ক, অসুস্থ আর পুরুষ।
চীনে সংক্রমণের শিকার ৪৪ হাজার মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রথম বড় আকারে যে বিশ্লেষণটি পাওয়া যায়, সেখানে দেখা যায় যে, মধ্য বয়সীদের তুলনায় বয়ো-বৃদ্ধদের মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার ১০ গুণ বেশি।
৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম- সাড়ে চার হাজার জন আক্রান্তের মধ্যে মাত্র ৮ জন মারা গিয়েছিল।
আর যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের মধ্যে মৃত্যুহার ৫ গুণ বেশি।
এই সবগুলো কারণই একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কযুক্ত।
তাই বিভিন্ন এলাকায় থাকা মানুষের জন্য ঝুঁকির হার কতটা রয়েছে তার কোন সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় না।
যেখানে বাস করছি সেখানে ঝুঁকি কতটা?
চীনে বসবাস করা ৮০ বছর বয়সী একদল মানুষের মধ্যে যে ঝুঁকি রয়েছে তা ইউরোপ কিংবা আফ্রিকায় থাকা একই বয়সী একদল মানুষ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এছাড়া কী ধরণের চিকিৎসা সেবা আপনি পাচ্ছেন সেটার উপরও আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা নির্ভর করে।
একই সাথে এটা নির্ভর করে প্রাদুর্ভাবটি কোন পর্যায়ে রয়েছে এবং কী ধরণের সুযোগ রয়েছে তার উপর।
যদি প্রাদুর্ভাব শুরু হয়ে যায়, তাহলে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রচুর বাড়বে এবং যেকোন নির্দিষ্ট এলাকায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বা ভেন্টিলেটর ব্যবস্থাও নির্দিষ্ট থাকে।
এটি কি ফ্লু এর চেয়ে বেশি বিপদজনক?
আমরা মৃত্যুহার তুলনা করতে পারি না, কারণ অনেক মানুষ রয়েছেন যারা ফ্লু-এ আক্রান্তর হওয়ার মৃদু উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের কাছে যান না।
কাজেই আমরা জানি না যে, প্রতিবছর ফ্লু-তে আক্রান্তের সংখ্যা কত হচ্ছে আর অন্য কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কত হচ্ছে।
কিন্তু যুক্তরাজ্যে এখনো বিশেষ করে শীতকালে ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যায়।
তাই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে বিজ্ঞানীরা একটা পূর্ণ চিত্র দিতে পারবেন যে, যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হলে কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে মৌলিক যে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে তা হলো, হাত ধুয়ে, কাশি বা সর্দিতে ভুগছেন এমন মানুষ থেকে দূরে থেকে এবং চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ তৈরি করে এমন সব ধরণের ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব।
সূত্র : বিবিসি