শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন

শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশিদের নেয়ার বিষয়ে রিভিউ করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান অ্যামনেস্টির

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৪ জুন, ২০২৩
  • ৩৩ বার
ছবি : মানবজমিন

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশি আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ করার বিষয়ে জাতিসংঘকে রিভিউ করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, শান্তিরক্ষী মিশনে যারা নিয়োজিত হবেন তাদের কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড থাকা উচিত নয়। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সের বাংলাদেশ সফরের আগে নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সফরের সময় এখানকার নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়কে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রিভিউ করতে হবে ল্যাক্রোইক্সকে। নিশ্চিত করতে হবে এদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের যেন জাতিসংঘে নিয়োজিত করা না হয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সদস্যদের মোতায়েনের দীর্ঘ তিন দশকের ইতিহাস আছে বাংলাদেশের। এখাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শান্তিরক্ষী পাঠানো অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। অতীতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে র‍্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ বিষয়টি উদ্বেগজনক। র‌্যাব গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বাহিনী, বর্ডার গার্ড ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে।

 

তাদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, অন্যান্য অশোভন আচরণের অভিযোগ আছে। একই সঙ্গে বিরোধী রাজনীতিক, মানবাধিকারের পক্ষের কর্মী, ভিন্ন মতাবলম্বী এবং অধিকারকর্মীদের টার্গেট করার অভিযোগ আছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যখন র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, তখন তারা জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার, মানবাধিকারের পক্ষের কর্মী এবং নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে হুমকি, ভীতি প্রদর্শন এবং হয়রানি শুরু করে বলে রিপোর্ট আছে। যতক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত প্রমাণিত হবেন না, ততক্ষণ র‌্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব অভিযোগ বিবেচনা করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে র‌্যাব সদস্যদের ব্যবহার করা স্থগিত করা উচিত জাতিসংঘের।

 

ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, র‌্যাবের সঙ্গে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগের অন্য শাখাগুলোর কর্তৃপক্ষ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো রিপোর্ট করেছে। গত বছর সংবাদভিত্তিক নিরপেক্ষ একটি প্লাটফর্ম একটি বাহিনী পরিচালিত একটি গোপন কারাগারের খবর সবার সামনে তুলে ধরে। ওই গোপন কারাগারে জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটক রাখা হয় এবং নির্যাতন করা হয়। গত ডিসেম্বরে প্রতিবাদ বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এতে একজন নিহত ও প্রায় ৬০ জন আহত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে রাস্তায় হাজারো মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভকালে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও অন্য বাহিনী থেকে বেসামরিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় যাওয়া সদস্যরা সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে নির্যাতন করেছেন বলে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। তারা বিভিন্ন রকম নির্যাতন, যৌন অপরাধ এবং হত্যার মিথ্যা নাটক সাজানোসহ নানাবিধ অশোভন আচরণ করেছে। শান্তিরক্ষী মিশনে সেনাদের তালিকাভুক্ত করার আগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যথাযথ মূল্যায়ন করে থাকে জাতিসংঘ। এই ‘স্ক্রিনিং’ বা বাছাই প্রক্রিয়া শুধু উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। বিবৃতিতে বলা হয়, যেসব দেশ সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য শান্তিরক্ষীকে মিশনে পাঠায় সেখানে শান্তিরক্ষী নির্বাচনে জবাবদিহিতা এবং অধিক স্বচ্ছতা চালু করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ। তবে এই দাবির বেশির ভাগই উপেক্ষা করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অতীতে র‍্যাব এবং অন্য নিরাপত্তা বিষয়ক এজেন্সিগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় প্রামাণ্য আকারে ধারণ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো এবং জাতিসংঘও এসব নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয় জোরালোভাবে দেখলেও শান্তিরক্ষী মিশনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বাছাই করার সময় বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিষয়ক ৭৪৩৬ জন কর্মকর্তা। এই শান্তিরক্ষীদের মধ্যে আছেন সেনাবাহিনীর ২০ কন্টিনজেন্ট, নৌবাহিনীর দুটি এবং বিমান বাহিনীর চারটি কন্টিনজেন্ট। এর পাশাপাশি আছে বাংলাদেশ পুলিশের তিনটি। তারা জাতিসংঘের ১৪টি মিশন এবং এক্টিভিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। ৭৪৩৬ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে ৫৭২ জন নারী। জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অ্যান্ড ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেসে বলা হয়েছে যে, ‘সূত্রগুলো রিপোর্ট করেছে- পুলিশ, বর্ডার গার্ড, আনসার এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গড়ে ওঠা জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স র‌্যাব বারবার ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এর মধ্যে আছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম এবং তারা এক্ষেত্রে পুরো দায়মুক্তি ভোগ করে কর্মকাণ্ড  পরিচালনা করছে।’

নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের অপরাধ সংগঠনের ক্ষেত্রে দায়মুক্তির রেকর্ড আছে বাংলাদেশে। একই সঙ্গে জড়িতদেরকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলোর সমাধান করা উচিত বাংলাদেশের। জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। দায়মুক্তি বন্ধ করা উচিত। ল্যাক্রোইক্সের সফরের সময় প্রধান ফোকাস হওয়া উচিত বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের মানবাধিকারের রেকর্ড। এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে যে, শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োজিতদের নিজের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ইতিহাস নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com