খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে কোনো কূলকিনারা পাচ্ছে না বিএনপি। আইনি পথে মুক্তি হবে, এমন আশা নিয়ে গত দুই বছরে যতবারই দলটি আদালতে গিয়েছে, ততবারই হোচট খেয়েছে। জামিনে মুক্তির পথ এখন একেবারেই সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। অন্য দিকে এই মুহূর্তে কঠোর কোনো আন্দোলনেও মত নেই নীতিনির্ধারকদের। কেন্দ্র থেকে থেমে থেমে কিছু কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা পালিত হচ্ছে দায়সারাভাবে। এসব কর্মসূচি সরকারের ওপর কোনো ‘চাপ’ সৃষ্টি করতে পারছে না।
দলীয় সূত্র মতে, বেগম জিয়াকে ‘অন্যায়ভাবে’ বন্দী রাখার ইস্যুটি বহুবার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিমণ্ডলে তুলে ধরেছে বিএনপি। কিন্তু সে সব জায়গা থেকেও ফলপ্রসূ কোনো উদ্যোগ আসেনি। দেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী বেশ কয়েকটি দেশ অভ্যন্তরীণ আলোচনায় বেগম জিয়ার মুক্তির দাবির প্রতি সহমত প্রকাশ করলেও, ‘ভৌগোলিক রাজনীতি’র কারণে প্রকাশ্যে তারা কোনো কিছু বলতে চাইছে না।
আাইনি পথ রূদ্ধ, আন্দোলন গড়ে উঠছে না, নেই কোনো চাপÑ এমন একটি অবস্থায় অসুস্থ বেগম জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অত্যন্ত স্পষ্ট করেই বলেছেন, সরকারের ইচ্ছা ব্যতীত খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি কোনো দিন হবে না।
পরপর দুই দফা দেশের উচ্চ আদালতে বেগম জিয়ার জামিন না হওয়ায় হতাশ বিএনপি। ক্ষুব্ধ বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরাও। নেতাকর্মীরা বেগম জিয়ার মুক্তি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের ওপরও চরম ক্ষুব্ধ। প্রতিদিনকার আলোচনায়, খালেদা জিয়ার জন্য এখন পর্যন্ত বড় কোনো কর্মসূচি না দেয়ায় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন তারা।
নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সামনে হয়তো-বা প্যারোলে মুক্তির আবেদন করতে হবে, নতুবা আন্দোলনের পথেই ফিরে যেতে হবে বিএনপিকে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ওপর সরকারের প্রভাবের কারণে ন্যায়বিচার পাওয়াই কঠিন। আইনি লড়াইয়ে বেগম জিয়ার মুক্তির সম্ভাবনাও কম। সামনে আরো বড় কর্মসূচি দেয়ার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করছি। আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা গণতন্ত্রের নেত্রীকে মুক্ত করব।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এখনো আইনি পথ সম্পূর্ণরূপে রুদ্ধ হয়ে যায়নি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা নিয়ে আমরা আবার আপিল বিভাগেও যেতে পারি। তবে সেখানে রেজাল্ট কী হবে তা নিয়ে মোটেও আশাবাদী নই। আবার সর্বোচ্চ আদালত অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের কথা বলেছে। অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট নিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেই বিদেশে যান। সেই যুক্তিতে ম্যাডামকেও সর্বোচ্চ আদালত সে সুযোগ দিতে পারে। তারপরও আমি বলব, এই মামলা রাজনৈতিক। তাই সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা জরুরি। সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া বেগম জিয়ার মুক্তি মিলবে না। এ জন্যই আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আমাদের রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা এক নেতা বলেন, বেগম জিয়ার কারাগারে থাকা আমাদের দলের নেতাদের চরম ব্যর্থতা। এমন কর্মসূচি দেয়া উচিত যাতে বেগম জিয়াকে কারামুক্তি দিতে সরকার বাধ্য হয়। বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথেই ফিরে যেতে হবে বিএনপিকে। তাদের ভাষ্য, তৃণমূল প্রস্তুত থাকলেও বিএনপির নীতিনির্ধারকদের ধীরগতির নীতি গ্রহণে ক্ষুব্ধ মাঠের কর্মী-সমর্থকরা। তাদের অভিযোগ, বিএনপির ৫০২ সদস্যের ঢাউস নির্বাহী কমিটির সবাই মাঠে নামলে আজ বেগম জিয়ার এ অবস্থা হতো না। দলের ১১টি অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাও আছেন। তারাও এ ব্যাপারে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করছেন না।
খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্র জানায়, তারা বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য প্রয়োজনে প্যারোলের আবেদনেও প্রস্তুত। কিন্তু এ নিয়ে বেগম জিয়ার সম্মতি পাচ্ছেন না তারা। পরিবারের সদস্যরা জানান, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এ দিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্যারোল নিতে হলে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। বিষয়টি নিয়ে বেগম জিয়ার কাছে পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার বললেও তিনি নাকচ করে দেন। তিনি প্যারোল নয় জামিনে মুক্তি নিয়েই উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে চান।