ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে প্রমত্তা পদ্মা নদী। সেই পদ্মা ভেঙে নিচ্ছে অনেকের বাপ-দাদার ভিটা, করে দিচ্ছে নিঃস্ব। আর এ উপজেলার চর মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মৈনট ঘাটে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। ভাঙনকবলিত মৈনট ঘাট ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ভ্রমণ পিপাসুদের কল-কাকলিতে মুখরিত মৈনট ঘাটে ভেসে আসে নদী ভাঙনে নিঃস্ব হওয়াদের করুণ সুর।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ কেউ পদ্মা পাড়ে এসে নিঃশব্দে নদীর দিকে তাকিয়ে চোখের জলে বুক ভেজায়। আবার কেউ বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা আর জলকেলিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রকিব উদ্দিন নামে এক যুবক প্রায়ই মৈনট ঘাটে এসে চোখের পানি ফেলেন। কান্নার রহস্য জানতে চাইলে নদীর দিকে ইশারা করে তিনি বলেন, ‘ওই যে ওই দূরে আমাগো বাড়ি আছিলো। সুখেই ছিলাম আমরা। কিন্তু সর্বনাশা পদ্মা আমাগো সব কাইরা নিছে। এখন আমাগো থাকার কোনো জায়গা নাই। মাইনষ্যের বাড়িতে কাম কইরা খাই। এই ঘাটের সামনে আসলেই সেই আগের কথা মনে পড়ে। তাই চোখে পানি রাখতে পারি না। একলাই পানি আইস্যা পরে।’
ঢাকা থেকে মৈনট ঘাটে ঘুরতে এসেছেন রবিন নামে এক যুবক। দৈনিক আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘ঢাকার অতি নিকটেই নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপের মতো একটা বিনোদন স্পট হয়েছে। অনেক দিন ধরেই আসতে চাইছিলাম, কিন্তু সুযোগ হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আজ এসে খুব ভালো লাগছে। মানুষের মুখে যা শুনেছি তার থেকেও জায়গাটি অনেক সুন্দর।’
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা রুকন নামে এক যুবক বলেন, ‘দোহারে আমার নানু বাড়ি কিন্তু অনেক বছর হলো এখানে আসা হয় না। ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে এলাম। জায়গাটি সত্যি চমৎকার।’
মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাটের বয়স কত, তা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারে না। তবে মিনি কক্সবাজার হিসেবে নয়া পরিচিতির বয়স বছর দুই হলো, মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এই পরিচিতি।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, মৈনট ঘাটের এই হঠাৎ খ্যাতি ঘাটের কাছেই দক্ষিণ পাশের চরটির জন্য। ঘাটের মাঝি চর মোহাম্মদপুরের আসলাম দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘২০১৫ সালের দিকে নদীর পাশের এই নিচু জমিটি বন্যায় তলিয়ে যায়। উত্তর পাশে বালু পড়লেও দক্ষিণের অংশে পলি পড়ে। পানি নেমে যাওয়ার পরে পলি মাটি জমে থাকা জায়গাটি অনেকটা সমুদ্র সৈকতের মতো দেখায়। ফলে নদী পারাপারের সময় অনেকে এখানে এসে ছবি তোলেন। ফেসবুকে সেই ছবি দিতে থাকেন। সেই ছবি দেখে ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে বেড়াতে আসেন। ঈদ, পূজা ও বিভিন্ন উৎসবের মতো শুক্র-শনি ছুটি থাকায় লোক সমাগম বেশি হয়।’