বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন

দক্ষিণ আফ্রিকার বিমানবন্দরে মোদির সাথে কী হয়েছিল?

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩
  • ৪২ বার

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে সদ্য-সমাপ্ত ব্রিকস বৈঠকে যোগ দেয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সেদেশের গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার গণমাধ্যমের একাংশে দাবি করা হয় যে- মোদির বিমান যখন জোহানেসবার্গ বিমানবন্দরে অবতরণ করে, তখন তিনি বাইরে আসেননি কারণ তাকে স্বাগত জানাতে একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী পাঠানো হয়েছিল।

তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত বলে মন্তব্য করেছে।

বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে এই বিতর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অরিন্দম বাগচি বলেন, এটা সম্পূর্ণ ভুল। সত্যি কথা বলতে, এটা কারো বিশুদ্ধ কল্পনার ফল। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারও এই তথ্য ভুল বলে খারিজ করে দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট বিমানবন্দরে ছিলেন এবং তিনিই প্রধানমন্ত্রী মোদিকে স্বাগত জানান।

নরেন্দ্র মোদি ‘বিমান থেকে নামতে অস্বীকার করেন’?
দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদ পোর্টাল ডেইলি ম্যাভেরিক ২৩ আগস্ট একটি খবর প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল ‘জটিল প্রেম কাহিনী : রামাফোসার নজর ছিল শি জিনপিংয়ের দিকে, মোদি অসন্তোষ প্রকাশ করে বিমান থেকে নামতে অস্বীকার করেন’।

দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইস প্রেসিডেন্টের মুখপাত্রও ডেইলি ম্যাভেরিকের প্রতিবেদনটিকে সরাসরি খারিজ করে দিয়ে বলেন যে- ওইরকম কোনো পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বলেছে, ব্রিকসের সব সদস্য দেশকে আগে থেকেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল যে কে কোন রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানাবেন।

‘চীনা প্রেসিডেন্টকে বেশি খাতির’?
সংবাদপত্রটি তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে যে- দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসা চীনা প্রেসিডেন্টকে বেশি খাতির করেছিলেন আর নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানাতে একজন মন্ত্রীকে পাঠিয়েছিলেন। এই কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বিমান থেকে নামতে অস্বীকার করেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে স্বাগত জানাতে স্বয়ং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গিয়েছিলেন।

পত্রিকাটি লিখেছে যে- সিরিল রামাফোসা শি জিনপিংকে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘অর্ডার অফ সাউথ আফ্রিকা দিয়ে ভূষিত করেন। সেই উপলক্ষ্যে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বেশ কিছু যৌথ কর্মসূচি পূর্ব নির্ধারিত ছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি শুরু হয় যে- সিরিল রামাফোসা যখন শি জিনপিংকে স্বাগত জানাতে ব্যস্ত ছিলেন, অন্যদিকে ওয়াটারক্লুফ বিমানঘাঁটিতে মোদিকে অভ্যর্থনা জানাতে তার মন্ত্রীপরিষদের একজন সদস্যকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী তাকে স্বাগত জানাতে আসায় অখুশি হন মোদি, এমনো লেখা হয় সেদেশের সংবাদমাধ্যমে।

বিষয়টি যখন বেশ জটিল হয়ে যায়, তখন তড়িঘড়ি ভাইস-প্রেসিডেন্ট পল শিপোক্সা মাশাতিলেকে বিমানবন্দরে পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন রামাফোসা, এমনটাই লিখেছে ডেইলি ম্যাভেরিক।

মোদি দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছনোর পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে যে টুইট করা হয়েছিল, সেখানেও উল্লেখ করা হয় যে প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট পল শিপোক্সা মাশাতিলে।

ডেইলি ম্যাভেরিকে সাইবার হামলা?
বিষয়টি নিয়ের শোরগোল শুরু হওয়ার পরে ডেইলি ম্যাভেরিক তার সামাজিক মিডিয়া হ্যান্ডেলে দাবি করে যে- ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে তারা সাইবার হামলার শিকার হয়েছে।

সংবাদপত্রটি একের পর এক টুইট করে জানায় ওই সাইবার হামলার পরে ওয়েবসাইটের সুরক্ষার জন্য ভারতে তারা নিজেদের সাইট ব্লক করতে বাধ্য হয়।

সংবাদপত্রটি লিখেছে, এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে, আমরা ডিডিওএস আক্রমণের শিকার হয়েছি (এটি এক ধরনের সাইবার আক্রমণ)। সংবাদপত্রের নিরাপত্তা কোঅর্ডিনেটর বলেছেন যে- তাদের তদন্তে জানা গেছে যে এই হামলাগুলি বেশ কয়েকটি ভারতীয় সার্ভার থেকে করা হয়েছে। কিছু সময়ের জন্য ওয়েবসাইটটি যাতে ব্লক হয়ে যায়, তার জন্য হাজার হাজার ‘বট’ তাদের সাইটে হামলা চালিয়েছে।

‘ভারত থেকে অনলাইন ট্র্যাফিক আটকানোর জন্য সংবাদপত্রটি অস্থায়ীভাবে একটি ফায়ারওয়াল বসিয়েছিল। পত্রিকার সম্পাদক বলেছেন যে- সংবাদপত্রটির সুরক্ষার জন্য ভারতে এটিকে সম্পূর্ণরূপে ব্লক করা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই,’ জানিয়েছে ডেইলি ম্যাভেরিক।

সংবাদপত্রটি উল্লেখ করেছে যে- দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার তাদের প্রতিবেদনটি খারিজ করে দিলেও তারা এখনো তাদের প্রতিবেদনটিকেই দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। তারা চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে ভারতেও এই প্রতিবেদনটি পড়া যায়, তবে সেটা বেশ কঠিন কাজ।

ভিত্তিহীন খবর : দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদ পোর্টাল নিউজ টুয়েন্টিফোর জানিয়েছে যে- সেদেশের সরকার বলছে, ব্রিকস দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদের কে স্বাগত জানাবেন তা আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল।

প্রতিবেদনে দেশটির ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিভাগ’-এর (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) মুখপাত্র লুঙ্গা নাচেনগেলেলেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে- ভারতকে আগাম জানানো হয়েছিল যে একজন মন্ত্রীই মোদিকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন।

আবার দ্যা সিটিজেন পত্রিকাও লুঙ্গা নাচেনগেলেলের একটি বিবৃতি ছেপেছে, যেখানে তিনি ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সাথে মনোমালিন্যের খবর অস্বীকার করেছেন। ওই প্রতিবেদনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পান্ডোরকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে যে রাষ্ট্রপ্রধানরা সরকারি সফরে এলে তাদের স্বাগতর জন্য মন্ত্রীদের হাজির থাকাটা একটা নিয়মিত ঘটনা।

দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইস-প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ভুকানি এমদে আবার নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে ডেইলি ম্যাভেরিক-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি খারিজ করে দিয়ে সেটিকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন।

‘ভিওন টেলিভিশন’কে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ডেইলি ম্যাভেরিকে যা প্রকাশিত হয়েছে তার একটি শব্দও সঠিক নয়।

তিনি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনটিকে বানোয়াট ও মিথ্যা আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির আগমনের কথা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাশাতিলে আগে থেকেই জানতেন এবং তার বিমান নামার আগেই অভ্যর্থনা জানাতে তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছিয়ে গিয়েছিলেন।

ভুকানি এমদে বলেন, এটাও ভুল যে মোদি ক্ষুব্ধ হন, তাই শেষ মুহূর্তে ভাইস প্রেসিডেন্টকে যেতে হয় তাকে স্বাগত জানাতে।

এমদের প্রশ্ন, ‘এ ধরনের বানোয়াট কথা প্রচারের পেছনে পত্রিকাটির উদ্দেশ্যটা যে কী, সেটাই বুঝতে পারছি না।’
সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com