শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন

লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা বন্ধ

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩
  • ৫১ বার

যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং ভিসার কার্যক্রম এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক কষ্টে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীরা। একই সাথে পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ার কারণে অনেকে দেশেও ফিরতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

ক্ষুব্ধ লিবিয়া প্রবাসীদের অনেকে নানাভাবে বলার চেষ্টা করছেন, বেনগাজিসহ লিবিয়ার অনেক এলাকায় এখন পর্যন্ত পাসপোর্টের কার্যক্রম দূতাবাসের কর্মকর্তারা শুরু করতে পারেননি। লিবিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এই মুহূর্তে বহু বাংলাদেশী বৈধ-অবৈধ নাগরিক পাসপোর্ট সমস্যার মধ্যে রয়েছেন।

লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে লিবিয়ার ত্রিপোলি বাংলাদেশ দূতাবাসের এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য বলা হয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে দূতাবাসে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এবং মেশিন রিডেবল ভিসার (এমআরভি) কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে বর্তমানে দূতাবাসের পক্ষে পাসপোর্ট বা ভিসার আবেদন গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারিগরি ত্রুটি সমাধানের পরই দূতাবাস থেকে পাসপোর্টের কার্যক্রম পুনরায় চালুর বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে। তবে দূতাবাসের অন্যান্য কনসুলার ও কল্যাণ সেবা যথারীতি স্বাভাবিক রয়েছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করার কথা বলা হয়।

এ দিকে বাংলাদেশ থেকে নানাভাবে পাচারের শিকার হয়ে লিবিয়ার বেনগাজিসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করা শত শত বাংলাদেশী চরম বিপদের মধ্যে রয়েছেন। তাদের মধ্যে থেকে অনেকে দেশে ফিরতে প্রতিনিয়ত দূতাবাসের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। আকুল আবেদন জানিয়ে বলার চেষ্টা করছেন, তাদের পাসপোর্ট কবে আসবে আর কবে তাদের (অবৈধ) ফ্লাইট হবে? এর মধ্যে তানহা ইসলাম জান্নাত নামের একজন দূতাবাসের কাছে জানতে চাচ্ছেন, ফ্রি টিকিট কবে থেকে চালু হবে। এ সময় সজিব দারিয়া নামের একজন মন্তব্য করে বলেন, ‘আসলে জানা নেই। আমিও এক পাপী লিবিয়ায় বসে আছি, কপালটা খারাপ। দোয়া করবেন যাতে তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে আসতে পারি।’ তার এমন আকুতিতে মো: আরিফ নামের একজন মন্তব্য করে বলেন, সজিব দারিয়া ভাই ‘বুকে আসেন ভাই’। এমন অসংখ্য কষ্টদায়ক কথা প্রবাসীরা প্রতিনিয়ত দূতাবাসের উদ্দেশে বললেও এ ব্যাপারে দূতাবাসের পক্ষ থেকে তেমন সাড়া দেয়া হয় না। এসব বিষয়ে দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো না হলেও এখনো বাংলাদেশ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ লিবিয়ায় বৈধ শ্রমিক, সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সরা পাড়ি জমাচ্ছেন। যদিও অভিবাসন বিশ্লেষকরা আগে থেকেই আভাস দিচ্ছেন, লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানো অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ দেশটিতে এখনো দু’টি প্রশাসন বিরাজমান রয়েছে। এর ফলে মাঝে মধ্যে দেশটিতে গোলাগুলির ঘটনা; সংঘর্ষে প্রাণহানির খবর ওই দেশের মিডিয়াতে আসছে। এরপরও লিবিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশী ডাক্তার-নার্সদের দ্বিতীয় ব্যাচ গত ১৭ আগস্ট ত্রিপোলিতে নিরাপদে পৌঁছেছেন। পৌঁছানোর পরই লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।

সাক্ষাৎকালে দূতাবাসের মিনিস্টার (শ্রম) এবং লিবিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মানবসম্পদ বিভাগের মহাপরিচালক, নিয়োগ কমিটির প্রধান এবং রিক্রুটিং কোম্পানির পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার-নার্স নিয়োগের জন্য লিবিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এ সময় তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার-নার্সকে অভিনন্দন জানান এবং লিবিয়ায় তাদেরকে স্বাগত জানান। এ ছাড়াও তিনি তাদেরকে দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার আহ্বান জানান। তিনি ডাক্তার-নার্সদেরকে রোগীর চিকিৎসার সময় বিনয়ী ও সহানুভূতিশীল আচরণ করার পরামর্শ দেন। বৈঠকে রাষ্ট্রদূত আগত পেশাজীবীদেরকে লিবিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন। এ সময় লিবিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মানবসম্পদ বিভাগের মহাপরিচালক লিবিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা রাষ্ট্রদূতকে পৌঁছে দেন এবং তাদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন বলে দূতাবাসের দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, রবিনসহ একাধিক বাংলাদেশী নয়া দিগন্তকে বলেন, এই মুহূর্তে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি স্বাভাবিক থাকলেও মাঝে মধ্যে ঘটছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক তৎপর থাকার কারণে পরিস্থিতি আগের মতো ততটা খারাপ নয়। তবে বেনগাজির অবস্থা বরাবরের মতো এখনো খারাপ। সেখানে পাচার, কিডন্যাপ-সহ অপরাধমূলক কার্যক্রম এখনো সমানতালে চলছে। বিশেষ করে এখানে দু’টি প্রশাসন বিরাজমান থাকায় সার্বিক পরিস্থিতি পুরোপুরি অনুকূলে আসেনি। সেই হিসাবে দেশটিতে বাংলাদেশীরা এখনো সম্পূর্ণ ‘নিরাপদ’ নন বলে তারা মন্তব্য করেন। তারপরও যারা বৈধভাবে আসছেন তাদেরকে সাবধানে চলাচল করার জন্য তাদের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাবে দেশটিতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে (সাত মাসে) ১৯০ জন বৈধভাবে দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে তিনজন, মে মাসে ৪০ জন এবং জুলাই মাসে ১৪০ জন পাড়ি জমিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com