বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেছেন, জনসমর্থনহীন শাসকগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নির্মূলের মহাপরিকল্পনায় লিপ্ত। এ ক্ষেত্রে খাবারের মধ্যে বিষ প্রয়োগ থেকে শুরু করে বিচারের নামে প্রহসনের সাজা দেওয়া এবং গুম-খুন-গুপ্তহত্যার বিবিধ প্রণালী অবলম্বন করেছে সরকার। এটা নিশ্চিত যে, বন্দী বেগম জিয়াকে আওয়ামী সরকার সুপরিকল্পিতভাবে খাবারের মধ্যে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দেশবাসী মনে করে। আর এটির প্রকাশ হচ্ছে লন্ডনে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতায়। সেই বক্তৃতার মধ্যেই নিহিত ছিল বিচারবুদ্ধহীন ও বিবেচনা শক্তিহীন প্রতিশোধের ইঙ্গিত। বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় বাধাদান, সেটারই বড় প্রমাণ।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর নয়া পল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন রিজভী আহমেদ।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সময় হয়ে গেছে, এত কান্নাকাটি করে লাভ নাই। অর্থাৎ শেখ হাসিনা জানেন বেগম জিয়া কখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেন। কারণ বিষের কার্যকারিতার মেয়াদ একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই জানেন।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, উন্নত চিকিৎসা থেকে খালেদা জিয়াকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে পৃথিবী থেকে সরানো। ২০১৭ সালে বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়েছিলেন। তিন মাস পর সেপ্টেম্বরে তিনি যখন দেশে ফেরেন তখন তিনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। এর কয়েক মাস ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রয়ারি একটি মিথ্যা মামলার ফরমায়েশী রায়ে তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর দৃশ্য দেশবাসী সবাই ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে অবলোকন করেছে। খালেদা জিয়াকে হেঁটেই কারাফটক পার হয়েছেন। তাহলে সোয়া দুই বছরে তিনি কেন এত গুরুতর অসুস্থ হলেন?
রিজভী বলেন, হিংসা, রক্তপাত, দ্বেষ আর অসততার সংমিশ্রণে যদি রাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করা হয়, তাহলে ভয়ানক অশুভ কিছু ঘটানো যায়। স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনীতির নামে বিরোধী নেতাকে হত্যার নানা দৃষ্টান্ত আছে দুনিয়াজুড়ে। রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেকসাই নাভালিনের চায়ের মধ্যে বিষ মেশানো হয়, বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত যে, অসুস্থ ইয়াসির আরাফাতের মধ্যে বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ পলেনিয়ামের অস্তিত্ব শনাক্ত করেছেন। এটাই তার মৃত্যুর কারণ। চীনে চীন বংশের সম্রাট হুন কুয়াংশু ক্ষমতাচ্যুৎ হলে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় বিষ খাইয়ে তাকে মারা হয়েছে। একজন মোঘল সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহচর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা করতে দেওয়া হয়নি ফরাসি চিকিৎসককে। কারণ পরবর্তীতে মোঘল সম্রাটের বিরাগভাজন ছিলেন তিনি। সারাবিশ্বে এহেন দৃষ্টান্ত ভুরিভুরি। কতৃর্ত্ববাদী নাৎসী একদলীয় শাসনব্যবস্থায় বিরোধী নেতাদের কারাগারে বিষ প্রয়োগে হত্যার অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে।
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, বেগম জিয়ার রোগব্যাধীর ভয়াবহতা এখন চরমপর্যায়ে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থারাইটিসে আক্রান্ত। কারাগারে যাবার পরে যকৃতের রোগ (লিভার সিরোসিস) দেখা দিয়েছে। যে রোগের কারণে তার পোর্টাল হাইপারটেনশন, পেটে ও ফুসফুসে পানি আসা, অন্ত্রের রক্তরক্ষণ হচ্ছে, যার চিকিৎসা এ দেশে আর সম্ভব নয় বলে মেডিকেল বোর্ড ইতিমধ্যে পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়াও রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নেই। তার হৃদযন্ত্রের অবস্থাও ভযানক অবনতির দিকে। তার হৃদপিন্ডে একটি রিং বসানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি কিডনী রোগের জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে সবমিলিয়ে দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করেছে। বারবার তাকে সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ক্রোধ মেটাতে অপমান ও বিপন্নতাকে প্রকট করে তুলেছে সরকার। খালেদা জিয়ার জীবন-মৃত্যুর পথরেখায় ঠেলে দেওয়া সেই অবিরাম আগ্রাসী হিংসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন প্রতিক্ষণ। শেখ হাসিনার কাছে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র এবং বেগম খালেদা জিয়া শত্রুপক্ষ। তাই নানা কলাকৌশলে বেগম জিয়াকে দুনিয়া থেকে সরানো ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় তলে তলে মহাআয়োজন চলছে।