অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমাতে বাধ্য হলো সরকার। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছরের মাঝপথে অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় এসে দেখা গেল এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কখনোই সম্ভব হবে না। তাই জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখন প্রায় এক শতাংশ হ্রাস করে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনা হয়েছে তাই নয়, একই সাথে মূল বাজেটের আকারও কাটছাট করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবায়ন সক্ষমহীনতার কারণে এখন তা কমিয়ে সাত লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মূল বাজেটের চেয়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ কম। অন্যদিকে, আগামী জুন থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন বাজেট প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে আট লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। যা কি না চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি এবং সংশোধিত বাজেট থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেন্স কাউন্সিল ও বাজেট ও সম্পদব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত’ বৈঠকে বাজেটের এসব অঙ্ক নির্ধারণ করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছেন।
বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, অর্থসচিব, বাণিজ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। বৈঠক দুটি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়।
মূল্যস্ফীতি টার্গেট বাড়ল : টানা পাঁচ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে থাকলেও বাজেটে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতির টার্গেট দিয়েছিলেন ছয় শতাংশ। কিন্তু এই সীমার মধ্যে কোনো অবস্থায় মূল্যস্ফীতিকে ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে এখন মনে করা হচ্ছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। কিন্তু বছর শেষে এটিই ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করছে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এটি শেষ পর্যন্ত সাত শতাংশের উপরেই থাকবে।
কমছে এডিপিও : চলতি বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবায়ন করার যাচ্ছে না বলে এই টার্গেট কমিয়ে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে বৈঠকে।
বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন : চলতি বাজেটে অনুদান ব্যতীত সার্বিক ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এটি বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এবং জিডিপি’র ৫ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
মোট রাজস্বপ্রাপ্তি : এ দিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থায়ন তথা রাজস্ব আদায়। বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট রাজস্বপ্রাপ্তি প্রাক্কলন করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। যা কিনা চলতি অর্থবছরে এ খাতে আদায়ের টার্গেট থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। জানা গেছে, গতকালের বৈঠকে আমদানি, রফতানি, মুদ্রা বিনিময় হার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আলোচনা করা হয়। বলা হয়, বর্তমানে এ খাতের সূচকগুলো নিম্নমুখী হলেও আগামী বছরের প্রথামার্ধ থেকে তা ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকবে। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। রিজার্ভের বিষয়ে বৈঠকে বলা হয়, বর্তমানে রিজার্ভ কিছু কম থাকলেও আগামী বছর থেকে তা বাড়তে শুরু করবে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা আগামী ১২ ডিসেম্বর আইএমএফ বোর্ড সভায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের অনুমোদন করা হবে।