ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চেয়ে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আরজি জানালেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেছেন, ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁদের সবিনয় অনুরোধ, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও বুয়েটকে যাতে ছাত্র রাজনীতির বাইরে রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী যেন তাঁদের পাশে থাকেন।
বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা একটি খোলা চিঠি পড়ে শোনানো হয়। এই চিঠিতে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁদের আরজি তুলে ধরেন।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার শিকার হওয়ার পর ক্যাম্পাসে ২০১৯ সালের অক্টোবরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। গতকাল সোমবার আদালতের সিদ্ধান্তের পর এই ক্যাম্পাসে ফের চালু হতে যাচ্ছে ছাত্ররাজনীতি। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যসহ শিক্ষকদের প্রতি বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখতে উদ্যোগী হওয়ার আরজি জানান। আজ সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একই আরজি জানালেন।
সংবাদ সম্মেলনে খোলা চিঠি পড়ে শোনান বুয়েটের পাঁচজন শিক্ষার্থী ৷ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা ত্রাসের রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না; আমরা শুধু দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে জানি। নিজেদের কাজ দিয়ে তা আমরা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের সবার অভিভাবক, দেশের অভিভাবক। আমরা জানি দেশের কোথাও কোনো দুঃখজনক পরিস্থিতি চললে, কোথাও সংকট চললে আপনার হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ হয়।’ চিঠিতে বলা হয়, ‘বিগত বছরগুলোতে আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলোই প্রত্যক্ষ করেছি। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মাঝে সূচনা ঘটেছে আধিপত্য, দাপট, র্যাগিং, শিক্ষকদের অপমান, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও খুনোখুনিতে মেতে ওঠার মতো ঘটনার। ঘটেছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও।’
খোলা চিঠিতে বলা হয়, ‘ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’ চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়ার পর থেকে আজ অবধি প্রতিটি জাতীয় দিবস সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে বুয়েট প্রাঙ্গণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করা হচ্ছে। আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জাতীয় মূল্যবোধ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে-প্রাণে ধারণ করি।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে কতিপয় ব্যক্তি বা গণমাধ্যমের তৎপরতায় ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েট ক্যাম্পাসকে জাতীয় চেতনার বিরোধী মতাদর্শের স্থান হিসেবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে ৷ বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের ব্যাপারে যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। তাই দেশের যেকোনো স্থানের মতো আমাদের ক্যাম্পাসকে আমরা অবশ্যই যেকোনো ধরনের সন্ত্রাস, মৌলবাদ বা নিষিদ্ধ গোষ্ঠী থেকে নিরাপদ রাখতে সর্বদা তৎপর।’
শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা আপনাকে নির্দ্বিধায় বলতে চাই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেকোনো মুহূর্তে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যেকোনো কার্যকলাপ ক্যাম্পাসে দেখলে শিগগিরই তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব এবং প্রশাসনকে অবহিত করব। এমনকি ভবিষ্যতে যদি ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধেও আমাদের দৃঢ় অবস্থান থাকবে।’
বুয়েট শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আরও বলেন, ‘বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতির বাইরে রাখুন, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও ৷ কারণ সুবিচারের জন্যই আইনের সৃষ্টি ৷ আমাদের অনুরোধ, আপনি দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন। ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই। আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দেব খুব শিগগিরই। আমাদের এই পথচলা আপনিই নির্বিঘ্ন রাখতে পারেন। সেই আশাতেই এই চিঠি। আমরা আপনার হাজারো সন্তান, আপনার সহযোগিতার প্রতীক্ষায় আছি।’