একটি প্লাস্টিকের বস্তা পড়েছিল ধান ক্ষেতে।ওই বস্তাটি নিয়ে কয়েকটি কুকুর টানাটানি করছিল। এ সময় বস্তা থেকে বেরিয়ে আসে মানবদেহের পচে যাওয়া টুকরো টুকরো কিছু মাংস এবং হাড়ের খণ্ড খণ্ড অংশ। বস্তাটি টানতে দেখে ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক উৎসুক জনতার ভিড় লেগে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পায় বস্তাবন্দি একটি শিশুর মরদেহ।
আজ সোমবার দুপুরে টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলা গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়া এলাকার ধান ক্ষেত থেকে বস্তাবন্দি শিশুটির মরদেহের খণ্ডখণ্ড অংশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার ও ভুঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আহসান উল্লাহসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসে। পরে ঘটনাস্থলের পুরো অংশ ঘিরে রেখে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা হাড় ও দেহের অন্য অংশ সংগ্রহ করে পুলিশ।
জানা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মাংসের টুকরো। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল চারদিকে। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। এদিকে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরেই মো. সুমন মিয়ার বাড়ি। ৯ দিন আগে (২৬ মে) তার মেয়ে নওশীন ইসলাম শর্মিলা (১০) নিখোঁজ হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, মাথার খুলিটি শিশু শর্মিলার। তবে তার দেহের অন্য অংশের এখনও কোনো সন্ধান মেলেনি। কোথায় রয়েছে বাকি অংশ এ নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মাথার খুলির ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এরপরই এর রহস্য উদঘাটন হবে।
স্থানীয়দের ধারণা, শিশুটিকে হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য মরদেহ বস্তাবন্দি করেছিল দুর্বৃত্তরা। তবে শিশুটি শর্মিলার মাথার খুলি কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এ বিষয়ে শর্মিলার চাচা কাইয়ুম মিয়া বলেন, ‘আজ সোমবার সকালে বাড়ির পাশের ধান ক্ষেতে কয়েকটি কুকুর একটি বস্তা টানাটানি করেছিল। কুকুরগুলো সমস্ত মাথার খুলি বের করে দেহ লণ্ডভণ্ড করে ফেলে। দেহের হাড়গোড়ও ছিল খণ্ডখণ্ড। লাশ দেখে চেনার কোনো উপায় নেই কার লাশ। এটি শর্মিলার লাশ কি না আমরা এখনও নিশ্চিত না। তবে, তার পরনের লাল পাজামার অংশ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, এটিই শর্মিলার লাশ হতে পারে।’
শিশু শর্মিলার বাবা সুমন মিয়া বলেন, ‘গত ২৬ মে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফিরে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শর্মিলা। পরে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। থানায় জিডিও করা হয়। আজ যেখানে খুলি পাওয়া গেছে ওই জায়গা দিয়ে কয়েকবার খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে। কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। আজ সকালে কুকুর মাথার খুলি টানাটানি করছিল। খবর পেয়ে এখানে আসি। বস্তা থেকে যে জামা পাওয়া গেছে সেটি নিখোঁজের সময় শর্মিলার পরনে ছিল।’
এ ঘটনায় ভুঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আহসান উল্লাহ্ জানান, ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করেছে। মাথার খুলির ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। পরে জানা যাবে মাথার খুলিটি নিখোঁজ শিশু শর্মিলার কিনা। এ নিয়ে আমাদের তদন্ত চলছে।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, দ্রুতই এর রহস্য উদঘাটন করা হবে।