সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন

পবিত্র হজ আজ

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪
  • ৫১ বার

পবিত্র হজ আজ। ৯ জিলহজ (সৌদি আরবের স্থানীয় সময়) আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়। এ দিনের নাম ইয়াওমুল আরাফা। ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আজ আরফাতের ময়দান মুখরিত হবে। সারা বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ মানুষ এবার হজে অংশ নিচ্ছেন।

পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে মিনায় মুসল্লিদের জড়ো হওয়ার মধ্য দিয়ে। শুক্রবার (স্থানীয় সময় ৮ জিলহজ) সকাল থেকে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবা শরিফ তাওয়াফের পর বিকেল থেকেই হাজিরা মক্কা থেকে আট কিলোমিটার দূরের মিনার উদ্দেশে কেউ হেঁটে, আবার কেউ গাড়িতে চড়ে মিনার উদ্দেশে রওনা দেন। অন্যান্য দেশের হাজীদের সাথে বাংলাদেশের ৮৫ হাজার হাজীও রওনা হন মিনার পথে। এ সময় গুঞ্জরিত হয় তালবিয়া-‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নালহামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মূলক, লা শারিকা লাক।’ মিনায় পৌঁছে হাজীরা ফজর থেকে শুরু করে এশা অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন নিজ নিজ তাঁবুতে। মিনায় রাতে অবস্থান করে হাজীরা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন।

আজ শনিবার হাজীরা আরাফাত ময়দানে সমবেত হবেন। তবে গতকাল রাতেই অনেকে মিনা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানের দিকে রওনা হন। আরাফাতে যাওয়ার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে মুসল্লিরা হেঁটে, হুইল চেয়ারে, বাসে- যে যেভাবে পারেন পৌঁছবেন। সেখানেই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হবে। মিনা থেকে এসে হাজিরা এখানে খুতবা শোনার পর একই সাথে জোহর ও আসরের নামাজ সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করবেন। এ আরাফাতের ময়দানেই মানবতার মুক্তির দূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা দেয়ার জন্য মসজিদুল হারামের জনপ্রিয় ইমাম ও খতিব শায়খ ড. মাহের বিন হামাদ বিন মুয়াকল আল মুয়াইকিলিকে নিযুক্ত করেছেন সৌদি বাদশাহ। একইসাথে মসজিদে নামিরাতে নামাজ পড়াবেন তিনি।

এবার বিশ্বের ৫০টি ভাষায় অনুবাদ করা হবে হজের খুতবা। বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তের মানুষের কাছে হজ ও ইসলামের শান্তির বার্তা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। ৫০টি ভাষার মধ্যে অন্যতম হলো- বাংলা, ফরাসি, ইংরেজি, ফার্সি, উর্দু, হাউসা, রুশ, তুর্কি, পাঞ্জাবি, চীনা, জার্মান, সুইডিশ, ইতালিয়ান, মালায়ালাম, বসনিয়ান, ফিলিপিনো, মালয়, সোয়াহিলি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ এবং আমহারিক ইত্যাদি। খুতবার বাংলা অনুবাদ করবেন সৌদি আরবে অধ্যয়নরত চার বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক এবং নাজমুস সাকিব। তারা দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। স্মার্ট ফোন, হারামাইন শরিফাইনের ওয়েবসাইট, মানারাতে হারামাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে শোনা যাবে হজের খুতবা।

আরাফাতের দিনের ফজিলত ও তাৎপর্য অপরিসীম। এ দিনকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন, আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত এবং গুনাহ থেকে পরিত্রাণের দিন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হাজীদের জন্য ফরজ। আরাফাতের ময়দানে হাজীরা হাজির হয়ে আল্লাহর রহমত তালাশ করেন। সমবেত সবাই ইবাদত-বন্দেগি ও গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করে আল্লাহর জিকির, দোয়া, মুনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন। আর আল্লাহ তায়ালাও বান্দাদের ইবাদত-বন্দেগি ও কান্নাকাটির বিনিময়ে তাদের ক্ষমা ও জান্নাত লাভের ঘোষণা দেন।
আরাফা দিবসে দ্বীন পূর্ণতার ঘোষণা : আরাফার দিনে আরাফাতের ময়দানে নবীজি ও সাহাবায়ে কেরাম যখন উকুফে আরাফা করছিলেন তখনই আল্লাহ তায়ালা নবীজি সা:-এর ওপর কুরআনুল কারিমের আয়াত নাজিল করে দ্বীনকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। আর সেটি হলো সূরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াত। এ আয়াত নাজিল করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নিয়ামতকে পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য চূড়ান্ত দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’

আরাফার দিন সর্বোত্তম দিন : হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা: সূত্রে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আরাফা দিবসের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই। এ দিনে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীবাসীকে নিয়ে গর্ব করে বলেন, তোমরা আমার ওইসব বান্দাদেরকে দেখো, যারা বিক্ষিপ্ত ও এলোমেলো চুল নিয়ে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আমার রহমতের আশায় ও শাস্তির ভয়ে আমার কাছে এসেছে। এ জন্য আরাফা দিবসের চেয়ে বেশি দোজখ থেকে মুক্তির আর কোনো দিন নেই। এ দিনে যে পরিমাণ লোক দোজখ থেকে পরিত্রাণ লাভ করবে অন্য কোনো দিন করবে না (সহিহ ইবনে হিব্বান-৩৮৫৩)।
আরাফা দিবস গুনাহ মাফের দিন : হজরত নাফে রা: হজরত ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আরাফার দিন স্বীয় বান্দার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। যার অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমান থাকবে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ হজরত নাফে রা: বলেন, আমি ইবনে ওমর রা:-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ ক্ষমা কি সব ঈমানদারের জন্য নাকি শুধু আরাফাবাসীর জন্য খাস? উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই ক্ষমা সব ঈমানদারের জন্য’ (ইবনে রজব হাম্বলি রহ:, লাতায়েফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা-৪৭১)।

আরাফার দিন জাহান্নামীদের মুক্তির দিন : আরাফার দিনে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। হজরত আয়েশা রা: সূত্রে বর্ণিত-নবীজি সা: ইরশাদ করেন, ‘আরাফা দিবসের চেয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য অন্য কোনো দিন নেই’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা-৪/৪৪২)।

ইসলামের বিধান অনুসারে, আজ সূর্যাস্তের পর হাজিরা মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই আরাফাতের ময়দান থেকে রওনা দেবেন প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার দিকে। সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ একসাথে আদায় করবেন তারা। এখানে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করবেন।

তারপর মিনার জামারায় শয়তানকে (প্রতীকী) নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন। এরপর ফজরের নামাজ শেষে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরবেন হাজিরা। মিনায় প্রত্যাবর্তনের পর হাজীদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি, মাথা মু-ন করা এবং তাওয়াফে জিয়ারত। এরপর ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান করে প্রতিদিন শয়তানকে তিনটি প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করবেন হাজিরা। সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

২০১৯ সালে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ হজ পালন করেন। তবে পরের বছরগুলোতে কারোনা মহামারীর কারণে আকার সীমিত করতে হয়। ২০২০ সালে মাত্র ১০ হাজার এবং ২০২১ সালে ৫৯ হাজার সৌদির বাসিন্দা হজ পালনের সুযোগ পান। ২০২২ টিকাপ্রাপ্ত ৯ লাখ ২৬ হাজার মুসলিম হজ পালন করেন। গত বছর ১৮ লাখ ২০ হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ পবিত্র হজ পালন করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com