সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন শেষ বাংলাদেশের। সুপার এইট থেকেই বিদায় নিতে হচ্ছে টাইগারদের। টিকে থাকার লড়াইয়ে ‘ভারত বধ’ সমীকরণ মেলাতে পারেননি সাকিব-শান্তরা। পারেননি থামাতে রোহিত শর্মাদের অপরাজেয় যাত্রা৷ বিশ্বমঞ্চে আরো একবার ভারতের কাছে হার।
সুপার এইটের দ্বিতীয় ম্যাচে শনিবার এন্টিগায় টসে হেরে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৯৬ রান তুলে ভারত। এবারের বিশ্বকাপে এতো রান তাড়া করে জেতেনি কোনো দল। পারেনি বাংলাদেশও, ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ পর্যন্ত পৌঁছায় টাইগাররা। ভারতের জয় ৫০ রানে।
বাংলাদেশ মূলত হেরে গেছে বোলারদের কাছেই। যেই বোলাররা দলকে টেনে এনেছেন সুপার এইটে, আজ তারাই সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে দিয়েছেন দলকে। মোস্তাফিজ-রিশাদরা পারেননি ভারতের লাগাম টেনে ধরতে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়েছেন বটে, তবে আটকে রাখা যায়নি রানের স্রোত।
রান তাড়ায় লিটন দাস-তানজিদ তামিম জুটি অনেকটাই জমে উঠেছিল। দেখেশুনেই খেলছিলেন দু’জনে। তবে সেই ছন্দ বেশিক্ষণ থাকেনি, লিটনকে ফেরান হার্দিক পান্ডিয়া। প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও পারলেন না রানে ফিরতে। ১০ বলে ১৩ করে আউট হন তিনি।
এরপর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ইনিংসটা এগিয়ে নিচ্ছিলেন তানজিদ তামিম। তবে থিতু হয়েও তামিম পারেননি ইনিংসটা বড় করতে, ৩১ বলে ২৯ রানে কুলদীপ যাদব ফেরান তাকে। পরের দুইটা উইকেটও আসে কুলদীপের থেকেই।
প্রথমে তাওহীদ হৃদয়কে ফেরান এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে, মাত্র ৪ রানে। পরের ওভারে এসে সাকিবকেও ভরেন ঝুলিতে। ৭ বলে ১১ রানে ফেরেন তিনি। ১৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১০০ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশ। দলকে বলা যায় একাই টানছিলেন নাজমুল শান্ত।
তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক রান পেয়েছেন বটে, তবে তার ইনিংসটাও জয়ের উপযোগী ছিল না। ১৫.৩ ওভারে শান্ত আউট হন ৩২ বলে ৪০ করে। তখনো জয়ের জন্য ২৭ বলে প্রয়োজন ৮৮ রান। বলা যায় তখনই বাংলাদেশ হারার আগে হেরে যায়।
তাসকিনকে বসিয়ে এদিন সুযোগ দেয়া হয় জাকের আলিকে। তবে তিনি হতাশ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি, ফেরেন ৪ বলে মাত্র ১ রানে। তবে টিকে থেকেও মাহমুদউল্লাহ কিছু করতে পারেননি। ১৩.৩ ওভার থেকে শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করে মাত্র ১৩ রান করেন তিনি।
তবে মন্দের ভালো ছিলেন রিশাদ হোসেন। খানিকটা আনন্দ এসেছে তার ব্যাটেই। ১০ বলে তিন ছক্কায় করেন ২৪ রান। কুলদীপ যাদব ৩, বুমরাহ ও আর্শ্বদীপ নেন জোড়া উইকেট।
এর আগে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করে ভারত। দ্বিতীয় ওভারেই সাকিবের থেকে আদায় করে নেয় ১৫ রান। যদিও সাকিবের হাত ধরেই আসে প্রথম উইকেট। ৩.৪ ওভারে ভারতীয় অধিনায়ককে ফেরান সাকিব, ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি।
দারুণ শুরু করেও রোহিত আটকা পড়েন ১১ বলে ২৩ রানে। তাকে ফিরিয়ে দারুণ এক মাইলফলকে পৌঁছান সাকিব। প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উইকেটের অর্ধশতক পূরণ করেন তিনি।
পরের আঘাত আসে তানজিম সাকিবের থেকে। ৮.১ ওভারে দ্বিতীয়বার উদযাপনের উপলক্ষ পায় টাইগাররা। দারুণ এক ডেলিভারিতে ভেঙে দেন বিরাট কোহলির উইকেট। তাতে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করা হয়নি, কোহলি ফেরেন ২৮ বলে ৩৭ রানে।
তবে তৃতীয় উইকেটের দেখা পেতে দেরি হয়নি। এক বল পরই সেই উপলক্ষ এনে দেন তানজিম। এবার তার শিকার সূর্য কুমার। ছক্কা হাঁকিয়ে ইনিংস শুরু করলেও সূর্য পরের বলেই বোকা হয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। ৮.৩ ওভারে ৭৭ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত।
ভারতের চতুর্থ উইকেটের পতন হয় ১১.৪ ওভারে, দলীয় ১০৮ রানে। রিশাদ হোসেন ফেরান রিশাভ পান্তকে। আউট হবার আগে অবশ্য নিজের কাজটা করে যান রিশাভ, ২৪ বলে করেন ৩৬ রান। এরপর পঞ্চাশোর্ধ রানের এক জুটি গড়েন হার্দিক পান্ডিয়া ও শিভাম দুবে।
দেরিতে হলেও এই জুটিও থামান রিশাদ। ১৭.২ ওভারে ভেঙে দেন শিভাম দুবের উইকেট। ২৪ বলে ৩৪ করে আউট হন দুবে। তবে হার্দিককে থামানো যায়নি। ইনিংসের শেষ বলে ফিফটি তুলে অপরাজিত থাকেন ২৭ বলে ৫০ রানে।