জনরোষের ভয়ে শিক্ষা প্রশাসন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নিজ থেকেই পদ ছাড়ছেন কর্তা ব্যক্তিরা। গত কয়েক দিনে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তির পদত্যাগের তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সদ্য বিদায়ী সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদগুলো আঁকড়ে ছিলেন অযোগ্য আর দলীয় লোকজন। সৎ দক্ষ আর যোগ্য ব্যক্তিরা ছিলেন বরাবরই কোণঠাসা। গত ৫ আগস্টের পর দেশের আপামর জনতা যখন আওয়ামী দুঃশাসনের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছেন তখন জনরোষের ভয়ে নিজ থেকেই পদ ছেড়ে পালাচ্ছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তা ব্যক্তিরা।
গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা পদ ছেড়ে স্বেচ্ছায় অবসরে চলে গেছেন। অনেকে আবার অধস্তন কর্মকর্তাদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের স্বেচ্ছায় জমা দেয়া পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো: সাহাবুদ্দিন। ভিসি পদ থেকে পদত্যাগ করে অনেকে আবার স্বেচ্ছায় অবসরও নিয়েছেন। তবে যারা অবসর নেননি তাদেরকে অর্থাৎ ওই সদ্য সাবেক ভিসিদের মূল পদে (বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) যোগদানের অনুমতি দেয়া হয়েছে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা আলাদা আদেশে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) সাবেক প্রেসিডেন্টের ভাগিনা হওয়ার সুবাদে ডিজি পদটিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। নানা অনিয়মের প্রমাণ থাকলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে পারতেন না। কিন্তু আওয়ামী সরকারের পতনের পর কর্মকর্তাদের রোষানলের ভয়ে গত ৬ আগস্ট থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। গত ১০ দিনের মধ্যে এক দিনের জন্যও তিনি মাউশিতে আসেননি। অন্য দিকে অধিদফতরের কর্মকর্তাদের দাবির মুখে গত ১৩ আগস্ট পদত্যাগ করেছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলী মো: দেলোয়ার হোসেন মজুমদার। দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন দুই বছরের চুক্তিতে থাকা এই কর্মকর্তা।
অন্য দিকে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন পর পর দুইবার চুক্তিভিক্তিক নিয়োগে থাকা প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ। তিনি দেশ থেকে পলায়নকারী শেখ হাসিনার নিজস্ব লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি পদে দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ পান প্রফেসর সাদেকা হালিম। তিনিও জনরোষ থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। অন্য দিকে গত তিন দিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদ থেকে একই সাথে পদত্যাগ করেছেন ভিসিসহ মোট ২৯ জন কর্মকর্তা। তারা সবাই রাজনৈতিক বিবেচনায় আওয়ামী আমলে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত তিন-চার দিনের ব্যবধানে নিজ থেকেই পদত্যাগ করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নুরুল আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহের, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান ও শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর। গতকাল তাদের প্রত্যেকের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।
অন্য দিকে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: কামরুল আলম খান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: হাবিবুর রহমান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মিহির রঞ্জন হালদার ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: ফরহাদ হোসেনের পদত্যাগপত্রও প্রেসিডেন্ট গ্রহণ করেছেন।
সূত্র জানায়, পদত্যাগপত্র জমা দেয়া এই ১৬ অধ্যাপকের মধ্যে ১২ জনকে মূল পদ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে যোগদানের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর অবসরে চলে যাওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নুরুল আলম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: ফরহাদ হোসেন নিজ ক্যাম্পাসে শিক্ষকতা করার কোনো অনুমতি পাননি।