১৪ বছরের কিশোরী আসমা খাতুন। এই বয়সে যার দূরন্তপনায় মেতে থাকার কথা ছিল, দারিদ্রতার অভিশাপে সে এখন নির্যাতিত। বিভৎস্য সেই নির্যাতনের কথা মনে হলেই কখনো ডুকরে কেঁদে উঠছে, আবার কখনো সৃষ্টিকর্তার কাছে অভিসম্পাত দিচ্ছে এই কিশোরী।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের ইমান আলীর কিশোরী কন্যা আসমাকে রাজধানীতে গৃহকর্মীর কাজে দিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। এই পরিবারের ভাষ্যমতে, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৭/বি রোডের ৩১ নম্বর বাসায় কাজ করত আসমা। বাড়ির মালিক ফারসিন গার্মেন্টস কারখানার মালিক আবু তাহের। আসমাকে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজে নেন তাহের-শাহজাদী দম্পতি। কথা দিয়েছিলেন, মেয়ের মতো করে রাখবেন। সে কথা তারা রাখেননি, উপরন্তু শারীরিক ও মানসিক আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করেছেন আসমাকে।
নির্যাতনের শিকার আসমার ভাষ্য, প্রথম থেকেই তাকে দিন-রাত এক করে কাজ করতে হতো। ঘুমানোর সময় পর্যন্ত দেওয়া হতো না। কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়লেই চলত নির্যাতন। বাড়ির মালিক আবু তাহের মাঝে-মধ্যেই কিল-ঘুষি দিয়ে নির্যাতন করতেন এই কিশোরীকে। কয়েকবার সিগারেটের আগুনের ছেঁকাও দিয়েছেন তিনি। মালিকের স্ত্রী শাহজাদীও শরীরে দিতেন গরম তেলের ছিটা। তারপর দগ্ধ ঘায়ের ওপর মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিতেন তিনি।
ভুক্তভোগী কিশোরী আরও জানায়, এভাবে দীর্ঘ চার মাস ধরে এই কিশোরীর ওপর চলে নির্যাতন। মাঝে মধ্যে নির্যাতনের মাত্রা এতই বেড়ে যেত যে, আসমার চেতনা চলে যেত। তার ওপর এমন নির্যাতনের কারণে সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়ির মালিক আবু তাহের তার গাড়িচালকের মাধ্যমে আসমার হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে গত ২৯ জুন তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেন।
এ বিষয়ে কিশোরীর মা জোৎস্না বলেন, ‘দারিদ্রতার কারণে দুমুঠো ভাত দিতে পারতাম না, লেখাপড়াও করাতে পারছিলাম না। এমন অবস্থায় শিল্প মালিকের বাসায় কাজে দিয়েছিলাম, আশা ছিল অন্তত খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকবে। কিন্তু এখন আমার মেয়েকে নির্যাতন করে প্রায় শেষ করে দিয়েছে। গত ১ বছর আমার মেয়েকে দেখতে দেয়নি তারা। ফোনেও বাড়িতে যোগাযোগ করতে দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ে বাড়িতে আসার পর গৃহকর্তী শাহজাদী কয়েকবার ফোনে হুমকি দিয়েছেন, যাতে আমরা বাড়াবাড়ি না করি। অন্যথায় নানাভাবে হেনস্তা করার কথাও বলেছেন। আমরা এখন ভয়ে আছি তাই মেয়ে আসমাকে এক স্বজনের বাড়িতে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান খান বলেন, ‘কিশোরীকে সাথে নিয়ে তার পরিবারের লোকজন থানায় অভিযোগ করতে এসেছিল। তবে ঘটনাস্থল রাজধানীর উত্তরায় হওয়ায় সেখানকার থানায় অভিযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে বাড়ির মালিক আবু তাহেরের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার কারখানায় গেলেও সেখানকার কেউ এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।