রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ক্যানসার আক্রান্ত মায়ের করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে ব্যর্থ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে মারধর করেন সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে দুই আলোকচিত্র সাংবাদিকের ওপরও হামলা করেন তারা, ভেঙে ফেলেন একজনের ক্যামেরার প্রটেক্টরও। এবার ঘটনায় জড়িত দুই আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আনসারের উপপরিচালক মেহেনাজ তাবাস্সুম রেবিন। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার পর সেখান থাকা দুই আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মুগদা জেনারেল হাসপাতাল আনসার ক্যাম্পের সহকারী কমান্ডার রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ক্যাম্প থেকে আনসার সদস্য আফসারসহ দুজনকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
শাওন বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ৪০ জনের পরীক্ষা করার কথা, কিন্তু আমার মায়ের সিরিয়াল ছিল ৩৬ নম্বর। ৩৩ নম্বর সিরিয়াল চলে যাওয়ার পর হঠাৎ করে আনসার সদস্যরা এসে বলে, আজ আর হবে না। এরপরে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা (আনসার) বলে, ৪০ জন হয়ে গেছে। তাই আর হবে না। তখন আমি প্রতিবাদ করলে আনসার সদস্যরা আমাকে কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে পাশে আনসার ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং রশি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে মারতে উদ্যত হয়। আমাকে দুটি চড়ও মারে এবং গালাগাল করে।’
এ সময় শাওনকে মারধরের ছবি তুলতে গেলে দৈনিক দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সাংবাদিক রুবেল রশীদ এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের আলোকচিত্রী জয়ীতা রায়ের ওপরও আনসার সদস্যরা হামলা করেন। এতে রুবেল রশীদের ক্যামেরার প্রটেক্টর ভেঙে গেছে।
হামলার শিকার রুবেল রশীদ বলেন, ‘হাসপাতালে কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য আজ ৪০ জনকে টিকিট দেওয়া হয়। কিন্তু ৩৪ জনের পরীক্ষা করেই আনসার সদস্যরা বলেন, আজ পরীক্ষা শেষ। তখন ৩৬ নম্বর সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা শাওন হোসেন নামের এক যুবকের সঙ্গে আনসার সদস্যদের তর্কাতর্কি হয়।’
ভুক্তভোগী রুবেল বলেন, ‘একপর্যায়ে আনসাররা তার গায়ে হাত তোলেন। এ ঘটনার ছবি তুলতে যান বাংলাদেশ প্রতিদিনের আলোকচিত্রী জয়িতা রায়। এ সময় আনসার সদস্যরা তাকে থাপ্পড় দিতে এলে জয়িতা সরে পড়েন। এরপর ঘটনার ছবি তুলতে আমি এগিয়ে যাই। তখন আনসার সদস্যরা থাপ্পড় মেরে আমার ক্যামেরার ফিল্টার ভেঙে ফেলে।’
রুবেল রশীদ আরও বলেন, ‘এ সময় আনসার সদস্যরা সাংবাদিকদের গালাগাল করতে থাকেন এবং বেঁধে রাখার হুমকি দেন। একপর্যায়ে তারা বলেন, এখানে সাংবাদিকদের রংবাজি চলবে না। শুধু আমাদের রংবাজি চলবে।’
এই বিষয়ে জানতে মুগদা হাসপাতালের পরিচালক ডা. রওশন আনোয়ারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার সাহা বলেন, ‘মুগদা হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সাথে আনসার সদস্যদের ঝামেলা হয়েছে। সেখানে ছবি তোলার সময় সাংবাদিকের ওপরে হামলা করা হয়েছে বলে সংবাদ পেয়ে থানা থেকে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপরে হামলা বা ক্যামেরা ভাঙচুরের বিষয়ে কেউ এখনো থানায় কোনো অভিযোগ করতে আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’