করোনাভাইরাসের টিকার পরীক্ষায় স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবী রাহাত আহমেদ রাফি। ২৬ বছর বয়সী এই যুবকের বাড়ি সিলেটে। অন্য অনেক মানুষের সঙ্গে তার শরীরে এখন সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষা চলছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, করোনাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনে যেসব প্রতিষ্ঠান তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করেছে, সেরকম একটি পরীক্ষায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশি তরুণ রাহাত আহমেদ রাফি। তিনি বলছেন, আমার কোনো ভয় লাগেনি। মানুষ তো মরণশীল, আজ হোক কাল হোক মারা যেতে হবে। এর মধ্যে মানুষের কল্যাণের জন্য যদি কিছু করতে পারি, সেটাই আমার সার্থকতা। বিবিসি আরো লিখেছে, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় কয়েক হাজার মানুষের ওপর টিকা প্রয়োগ করে এর কার্যকারিতা ও কতটুকু নিরাপদ, সেটা যাচাই করা হয়।
চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের সঙ্গে যৌথভাবে আবুধাবির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর-সেহা এবং গ্রুপ-৪২ নামের একটি কোম্পানি এই পরীক্ষা শুরু করেছে। এর আগে চীনে এই টিকার প্রথম আর দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা হয়। দুইশর বেশি দেশের নাগরিক থাকায় তৃতীয় দফার পরীক্ষার জন্য আবুধাবিকে বেছে নিয়েছেন গবেষকরা। তৃতীয় দফায় সফল হলে সেই টিকার অনুমোদন দেয়া হয়ে থাকে। আবুধাবি এবং আল আইন শহরে পরীক্ষায় অংশ নিতে সাত হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবীর নাম তালিকাভুক্ত করেছেন বলে জানিয়েছে সে দেশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। সব মিলিয়ে ১৫ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা করানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। দেশটিতে প্রথম টিকা নিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান। তাদেরই একজন বাংলাদেশি ২৬ বছর বয়সী তরুণ রাহাত আহমেদ রাফি। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, আমি রেডক্রিসেন্টের ভলান্টিয়ার হিসেবে এখানকার করোনা টেস্টিং সেন্টারে গত দুই মাস ধরে কাজ করছি। আমার দায়িত্ব যারা টেস্ট করাতে আসবেন, তার নাম-ঠিকানা কম্পিউটারে তালিকাভুক্ত করা। যখন জানতে পারলাম যে, করোনাভাইরাসের টিকার জন্য স্বেচ্ছাসেবী চাওয়া হচ্ছে, তখন আমিও ইন্টারনেটে নাম তালিকাভুক্ত করি। এরপর কয়েকদিন পরে আমার স্বাস্থ্য পরীক্ষা, করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়। গত ২৪শে জুলাই তারিখে আমাকে টিকার প্রথম ডোজ দিয়েছে। ২১ দিন পরে আবার দ্বিতীয় ডোজ দেবে।
তিনি জানান, আবুধাবিতে বিনামূল্যে টিকার পরীক্ষায় অংশ নিতে স্বেচ্ছাসেবী চাওয়ার পর হাজার হাজার মানুষ অংশ নিতে অনলাইনে আবেদন করেছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর যাদের শরীরে গুরুতর কোনো রোগ পাওয়া যাচ্ছে না, তাদেরকেই টিকা দেয়ার জন্য বাছাই করা হচ্ছে। এদের মধ্যে স্থানীয় মানুষজনই বেশি। টিকা দেয়ার পর তার হালকা মাথা ঘোরানো ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে তিনি জানান। রাহাত আহমেদ বলেন, টিকা দেয়ার পর থেকেই প্রতিদিন আমাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছে। কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা, বর্তমানে কেমন লাগছে, সেটা জানতে চাইছে। তারা সবসময় আমাদের ফলোআপে রাখছে। তিনদিন পরপর তাদের অফিসে গিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে বলেছে।
আগামী এক বছর এভাবে তাদের ফলোআপে রাখা হবে বলে আবুধাবির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ধারণা দেয়া হয়েছে। আপাতত তাকে অন্যদের থেকে আলাদা থাকার জন্য বলা হয়েছে। তিনি ছাড়া আর কোনো বাংলাদেশি এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন বলে তার জানা নেই বলে জানান রাহাত আহমেদ। জাতিসংঘের সর্বশেষ ২০শে জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকা বানাতে ১৭৩টি উদ্যোগ চলছে। এর মধ্যে কয়েকটি টিকার মানবদেহে পরীক্ষা চলছে।
সিলেট থেকে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আবুধাবি যান রাহাত আহমেদ। সেখানে ভাইয়ের সঙ্গে মিলে ব্যবসা করতে শুরু করেন। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে থাকার সময়েও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রাহাত আহমেদ রাফি। তাই আবুধাবিতে গিয়েও রেডক্রিসেন্টের সঙ্গে যুক্ত হন। এই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আর্থিক কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে না। আবুধাবির পত্রিকা দ্য ন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর এই পরীক্ষা চালানো হবে। টিকার দুইটি ডোজ দেয়ার পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা, সেটা বোঝার জন্য তাদের কয়েক মাস ধরে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
ইনজেকশনের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে করোনাভাইরাসের একটি নিষ্ক্রিয় সংস্করণ ঢুকিয়ে দেয়া হবে। শরীরের ভেতর প্রবেশ করে সেটি অ্যান্টিবডি বা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা তৈরি করবে।
বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশের ধারণা, মানবদেহে ব্যবহারের জন্য টিকা পুরোপুরি প্রস্তুত হতে এই বছর পার হয়ে যাবে। চীনের সিনোভেক বায়োটেক কোম্পানির একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশে নৈতিক অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল। এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করবে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)। তবে এখনো বাংলাদেশে তৃতীয় দফার হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমোদন পাওয়া যায়নি, যদিও ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় তারা পরীক্ষা শুরু করেছে।