তখনো মানুষ ক্যাসিনো কী তা জানত না। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের মতো অনেকে তখন দেশের বাইরে যেতেন জুয়া খেলতে। সেখান থেকেই ক্যাসিনোর সরঞ্জাম যারা এ দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
তিনি দেশে না থাকলেও তার সহযোগীরা ওই সময় দেশে ক্যাসিনো সরঞ্জাম এনে তার গুলশানের বাসাতেই ব্যবসা শুরু করেন। প্রায় অর্ধযুগ ধরে তার গুলশানের ওই বাসায় ক্যাসিনো ব্যবসা চলে আসছিল। সাধারণ ক্লাব, বার বা হোটেলের ক্যাসিনোতে সাধারণের প্রবেশাধিকার থাকলেও আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ওই বাসায় যেতেন শুধুই ভিআইপিরা।
পারিবারিক সূত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই একজন ব্যবসায়ী। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিউটিক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। তিনি সার্ক চেম্বারের আজীবন সদস্য।
ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে তিনি মাফিয়া ডন হিসেবেই পরিচিত। এমন এক সময় ছিল যখন কেউ আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সাথে একটি ছবি তুলতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতেন। নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকাসহ অনেক পেশার মানুষও তার সান্নিধ্যে যাওয়ার চেষ্টা করত। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার শোবিজ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি খুনের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন।
পারিবারিক ব্যবসা ও ফিল্ম ব্যবসার পাশাপাশি আজিজ মোহাম্মদ ভাই নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশ-বিদেশে তিনি জুয়ার আসরে যেতেন। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডেরও নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। ইমন, টিটন, লেদার লিটনসহ অনেক সন্ত্রাসীকে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করতেন বলে অভিযোগ আছে।
ঢাকার শোবিজ জগতের অনেক নামীদামি নায়িকা তার বাসায় গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। তাকে সবাই সমীহ করে চলত। এমনকি, গণমাধ্যমের লোক, প্রশাসনের লোকরাও তাকে সমীহ করত। অনেক মানুষ তার দ্বারা নিঃগৃহীত হয়েছেন। অপমান অপদস্থ হয়েছেন। বাসায় ডেকে নিয়ে অনেক মানুষকে তিনি অপদস্থ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের পর তিনি দেশ ত্যাগ করেন। প্রায় এক যুগ ধরে তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
বর্তমানে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে তার বসবাস। মাঝে মধ্যে কানাডায় যান তিনি। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক সময়ে যারা কিং ছিলেন তাদের অনেকেই এখনো নিয়মিত আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের কাছে হাজিরা দেন বলে জানা গেছে। এত কিছুর পরও আজিজ মোহাম্মদ ভাই অনেকটাই আড়ালে পড়ে গিয়েছিলেন। হঠাৎ গত রোববার থেকে আবারো তিনি ব্যাপক আলোচনায়।
গত রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশান ২ নম্বর এর ৫৭ নম্বর রোডের ১১/এ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। ওই বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশী মদ, ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। মদের পাশাপাশি সীসা বারও পাওয়া যায় ওই বাড়ির ছাদে।
বারটি গড়ে উঠেছিল মূলত ক্যাসিনোকে কেন্দ্র করে। ক্যাসিনোতে যারা খেলতে যেতেন তাদেরকে আপ্যায়নের জন্যই সেখানে মিনি বার তৈরি করা হয়েছিল।
জানা যায়, ২০১১ সালের দিকে সারা বিশ্বেই জুয়ার জগতে ক্যাসিনোর আধিপত্য শুরু হয়। আর তখনই এ দেশে ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠা করেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ অনেকে। ক্লাব-বারের ক্যাসিনোতে যে কেউ সদস্য হতে পারতেন।
কিন্তু আজিজ ভাইয়ের বাসার ওই ক্যাসিনোতে যারা যেতেন তাদের টাকা থাকলেই চলত না, সামাজিক অবস্থানও লাগত। আজিজ ভাই বিদেশে বসেই তার ভাতিজা ওমর মোহাম্মদ ভাইকে দিয়ে এই ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন।