সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন

বিশ্বস্ত মিত্র জার্মানির গালে চড় মেরেছেন ট্রাম্প!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০
  • ২১৩ বার

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও শনিবার ওয়ারসতে পোলিশ সরকারের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করেছেন যার আওতায় জার্মানিতে মার্কিন ঘাঁটি থেকে আপাতত এক হাজার সৈন্য পোল্যান্ডে মোতায়েন করা হবে। ফলে পূর্ব ইউরোপের এই দেশে মার্কিন সৈন্য সংখ্যা দাঁড়াবে ৫,৫০০।

চুক্তির ফলে, মার্কিন সেনাবাহিনীর পঞ্চম কোরের সদর দপ্তর জার্মানি থেকে সরে পোল্যান্ডে স্থানান্তর করা হবে।

গত মাসের শেষে যখন মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে তারা জার্মানি থেকে ১২হাজার সৈন্য সরিয়ে নেবে তখন নেটোর জোটের সদস্য দেশগুলো ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

ঐ ১২ হাজারের মধ্যে অর্ধেকই নেয়া হবে পোল্যান্ডে। মি ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করলে জার্মানিতে মার্কিন সৈন্য সংখ্যা বর্তমানের ৩৬ হাজার থেকে নেমে দাঁড়াবে ২৪ হাজারে।

নেটো জোটের ওপর যেমন তেমনি জার্মানির সাথে সম্পর্কের ওপর এই সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলের অনেক নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকরা আপত্তি তোলেন।

কিন্তু শনিবারের চুক্তি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিলেন যে তিনি জার্মানির চেয়ে পোল্যান্ডকে বিশ্বস্ত মিত্র মনে করছেন।

পেন্টাগনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জার্মানি থেকে সৈন্য সরিয়ে পোল্যান্ডে নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত কৌশলগত, কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষক এর পেছনে ট্রাম্পের নিজস্ব রাজনীতি দেখছেন।

বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদদাতা জনাথন মার্কাস বলছেন, এই সিদ্ধান্ত যতটা না সামরিক কৌশল তার চেয়ে বেশি রাজনীতি।

২০১৮ সাল থেকে পোল্যান্ডের রাজনীতিকরা আরো সৈন্য মোতায়েন করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ক্রমাগত দেন-দরবার করে চলেছেন। তথাকথিত ‘ফোর্ট ট্রাম্প‘ নামে পরিচিত এই প্রস্তাবে পোল্যান্ড বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন সেখানে স্থায়ী একটি ঘাঁটি তৈরি করে পুরো এক ডিভিশন সৈন্য মোতায়েন করে।

শনিবারের চুক্তিতে তেমন কোনো প্রতিশ্রুতির কথা না থাকলেও জনাথন মার্কাস বলছেন, মি. ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন তিনি কী চান।

“তিনি পরিষ্কার করেছেন যে পোল্যান্ডের মত যে দেশ প্রতিরক্ষার জন্য যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত, তেমন একটি দেশকেই তিনি মিত্র হিসাবে বেশি পছন্দ করেন।“

‘লাভবান হবে রাশিয়া‘

জার্মান কর্মকর্তারা মার্কিন এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছেন এটি ন্যাটো জোটকে দুর্বল করবে এবং রাশিয়াকে শক্তিশালী করবে।

বাভারিয়া প্রদেশের সরকার প্রধান এবং প্রভাবশালী জার্মান রাজনীতিক মার্কাস সোয়েডার খোলাখুলি বলেছেন সৈন্য সরানোর এই সিদ্ধান্ত “জার্মান-মার্কিন সম্পর্ক নষ্ট করবে।“

নেতৃস্থানীয় অনেক মার্কিন রাজনীতিকও উদ্বিগ্ন। ডেমোক্র্যাট সিনেটর জ্যাক রিড মন্তব্য করেছেন ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত “মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী কাজ।“ রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর মিট রমনি বলেন : “মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এটি বিশ্বস্ত একটি মিত্র দেশের গালে চড় মারার সামিল।“

সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা লে. জে. বেন হজেস, যিনি ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপে মার্কিন বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন, জার্মান মিডিয়া ডয়েসে ভেলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মি.ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এবং এই সিদ্ধান্ত কৌশলগত কোনো বিশ্লেষণের ভিত্তিতে করা হয়নি।

তিনি বলেন, সৈন্য সরিয়ে নেয়ার এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র স্বার্থের বিরোধী কারণ এতে “আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশের সাথে সম্পর্ক খারাপ করবে যা রাশিয়ার জন্য ভালো হবে।”

“ক্রেমলিনকে একটি উপহার দেওয়া হচ্ছে। জার্মানিতে ৩০ শতাংশ সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে দিলে, তা রাশিয়াকে দারুণ সাহায্য করবে।“

যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি সম্পর্ক ‘লাইফ সাপোর্টে‘

ট্রাম্প এসব কোনো কথারই তোয়াক্কা করছেন না, এবং জার্মানিকে লক্ষ্য করে এমন সব কথা বলছেন যার নজির বিরল।

তিনি মন্তব্য করেছেন, প্রতিরক্ষার জন্য জার্মানি পয়সা খরচ তো করছেই না বরঞ্চ মার্কিন ঘাঁটি থেকে তারা পয়সা বানাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা সৈন্য সারাচ্ছি কারণ তারা (জার্মানি) খরচ বহন করছে না। খুব সহজ কথা। আমরা আর তাদের খাওয়াতে পারবো না।“

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বলছেন ইউরোপিয়ান সদস্যরা নেটোতে যথেষ্ট পয়সা দিচ্ছে না, প্রতিশ্রুতি মতো (জিডিপির ২ শতাংশ) প্রতিরক্ষায় খরচ করছে না।

ট্রাম্পের এসব মন্তব্য এবং সিদ্ধান্তে জার্মানিতে মার্কিনবিরোধী মনোভাব দিন দিন প্রবল হচ্ছে।

রাজনীতির খবরাখবর এবং বিশ্লেষণের জন্য বিশেষায়িত মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো সম্প্রতি তাদের এক বিশ্লেষণে লিখেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৫ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র-জার্মান সম্পর্ক শুধু সঙ্কটেই পড়েনি, এই সম্পর্ক এখন “লাইফ সাপোর্টে।“

পলিটিকো অতি সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপের ফলাফল উদ্ধৃত করে লিখেছে ৮৫ শতাংশ জার্মান নাগরিক মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক এখন “খারাপ বা খুবই খারাপ,“ এবং সিংহভাগ জার্মান এখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দূরত্ব চাইছে।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com