বেড়েই চলছে পিয়াজের দাম। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম সব রেকর্ড ভেঙেছে। খুচরা বাজারে পিয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছুঁই ছুঁই অবস্থা। দেশি পিয়াজ খুচরা বাজারে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১৫০ টাকাও দাম চাওয়া হচ্ছে। আমদানি করা ভারতীয় পিয়াজও ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমার বা মিশর থেকে আনা পিয়াজের দামও সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে আরও আগে। বাজারে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানীকারক ও মজুতদাররা ইচ্ছে করেই দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নজরদারি না থাকার কারণেই এমনটি হচ্ছে। গতকাল পাইকারি বাজারেই পিয়াজের কেজি ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায় উঠে। কাওরান বাজার ও কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। কাওরান বাজারের পাইকারি বাজারে দেশি পিয়াজের দাম এখন ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পিয়াজও ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর মিসরের পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ভালো মানের দেশি পিয়াজ ১৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একটু নিম্নমানের দেশি পিয়াজ ১২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আমদানি করা পিয়াজও বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ১২০-১৩৫ টাকার মধ্যে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে পিয়াজের দাম। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির খোলাবাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরে পিয়াজ বিক্রি ও বাজার অভিযানে কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না পিয়াজের দামে।
সরকারি বিক্রয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যে দেখা গেছে, এক বছরে পণ্যটির দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। আর এ মাসে বেড়েছে ৬১ শতাংশ। টিসিবির তথ্য বলছে, এক বছরে পণ্যটির দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। আর এ মাসে বেড়েছে ৬১ শতাংশ। টিসিবি বলছে, গত ২৯শে সেপ্টেম্বর দেশি ও আমদানি করা পিয়াজের দাম ছিল কেজি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। ঠিক এক মাস পর পিয়াজের দর হয়েছে কেজি ১০৫ থেকে ১২০ টাকা। এদিকে পিয়াজের চড়া দামের মধ্যে শুধু ঢাকায় সামান্য আয়োজন রয়েছে টিসিবির। ৪৫ টাকা কেজি দরে ৩৫টি ট্রাক দিয়ে ১ হাজার কেজি করে পিয়াজ বিক্রি করছেন ডিলাররা। লম্বা লাইনে থেকে দুই কেজি করে পিয়াজ নেয়ার এই সুযোগ নিতে পারছেন মাত্র সাড়ে ১৭ হাজার মানুষ। ট্রাকের মাধ্যমে আরো বেশি পিয়াজ বিক্রির সক্ষমতা নেই টিসিবির।
কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা কাদের বলেন, সহসাই দাম কমবে বলে মনে হচ্ছে না। বাজারে নতুন পিয়াজ উঠতেও অন্তত দুই মাস বাকি। তখন হয়তো পিয়াজের দাম কমবে। আরেক বিক্রেতা মনির বলেন, মিসরের পিয়াজ এখন ৯৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাস খানেক আগে যখন আমদানির সুযোগ দেয়া হয় তখন এই পিয়াজের দাম ছিল কেজিতে ৬০ টাকা। কাওরান বাজারের লাকসাম বাণিজ্যালয়ের মালিক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মোকামগুলোতে দাম বেড়েই চলছে। বেশি দামে কিনে আনায় আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া আগের চেয়ে এখন পিয়াজের বিক্রিও কম। দাম বাড়তি থাকায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি।
মগবাজার মধুবাগ বাজারের মুদিদোকানি আব্বাস আলীর কাছে জানতে চাইলে দেশি পিয়াজের কেজি চান ১৪০ টাকা। তার মতে, দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। রামপুরা বাজারের মুদি দোকানি আমিনুল ইসলাম বলেন, নিম্নমানের পিয়াজের দামও এখন ১২০ টাকা। আর ভালো দেশি পিয়াজ নিলে এক দাম ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা পড়বে। ফার্মগেটের বাসিন্দা তারিকুল বলেন, দাম বাড়ায় আগের চেয়ে এখন পিয়াজ কম কিনি, তারপরও তো আগের চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে। বাজার খরচ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীন বলেন, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পিয়াজের বেশি দাম রাখছেন। বেশি দামের আশায় পিয়াজ যারা ধরে রাখছেন বা চালাকি করছেন, আমি নিশ্চিত যে তারা ঠকবেন। উল্লেখ্য, ভারতের বাজারে পিয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পিয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। গত মাসে এই ঘোষণা দেয়ার পর রাতারাতি বাংলাদেশের বাজারে পিয়াজের কেজি ১২০-১৩০ টাকায় ওঠে। এর সপ্তাহখানেক পরই আবার পিয়াজের দাম কমতে থাকে। কমে ৭০-৮০ টাকার মধ্যে এলে এক সপ্তাহ না যেতেই আবার পিয়াজের দাম ১০০ টাকায় ওঠে। ১০০ টাকায় দু-তিন দিন থাকার পরই আবার বাড়তে থাকে পিয়াজের দাম। বাড়তে বাড়তে এখন প্রতি কেজি পিয়াজের দাম উঠেছে ১৪৫ টাকায়।