দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে প্রচার অব্যাহত রাখায় বিদ্রোহীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক ১২ কাউন্সিলর দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আর বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। এ চারজনকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সময় বেঁধে দেওয়ার পরও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে চিঠি দিচ্ছে নগর বিএনপি।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় চিঠি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আবু হাশেম বক্কর। তবে আওয়ামী লীগের ১২ বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে শেষ পর্যন্ত কোনো ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেননি স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা।
জানা গেছে, সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪ (৯, ১০, ১৩) আকবর শাহ থানা মহিলা দলের সভাপতি ইসমত আরা জেরিন, সংরক্ষিত ৫ নম্বর ওয়ার্ডে (১৪, ১৫, ১৬) নগর মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক রেজিয়া বেগম বুলু, নগর বিএনপির সাবেক সদস্য ২৬ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আজিজুল হক বাবুল ও মহসিন আলী চৌধুরী দলের সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচন করছেন।
নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর আমাদের সময়কে জানান, ৪ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নগর মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক সখিনা বেগম, সংরক্ষিত ৫ নম্বরে নগর মহিলা দলের সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম মনি এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল হাশেমকে ধানের শীষের প্রতীকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে আরও চারজন প্রার্থী হয়েছেন।
তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজনের বেশি নির্বাচন করতে পারবেন না। দলের সিদ্ধান্ত তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা না মানায় সতর্ক করা হয়েছে। তার পরও তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। তাই তাদের বহিষ্কারের সুপারিশ করে কেন্দ্রে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বারবার বৈঠক করার পরও বিষয়টির সুরাহা হয়নি। আগে কাউন্সিলর ছিলেন কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পাননি এমন ১২ কাউন্সিলরের বেশিরভাগই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের।
সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং কক্সবাজারের সংসদ সদস্যদের নিয়ে এক বৈঠকেও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে কথা হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এ বৈঠকের আয়োজন করেন। ওই বৈঠকেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে কঠোর হওয়ার কথা বলা হয়। পরদিন ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়ে কেন্দ্রের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়টির সুরাহা হয়নি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাসভবনে গিয়েও তার সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু তিনিও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
আওয়ামী লীগের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। তারা চান নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও এবারের বিদ্রোহী প্রার্থী হাসান মুরাদ বিপ্লব আমাদের সময়কে বলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনে লড়ে যাব। আমি সারাজীবন জনগণের সঙ্গে আছি। জনগণ আমাকে চায়।
জানা যায়, দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে সবার আগে তৃণমূল থেকে নেতাদের মতামত কেন্দ্রে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। এ ক্ষেত্রে তৃণমূলের কোনো মতামত না নিয়েই কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সংগঠন করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মানতেই হবে। এ ক্ষেত্রে বিদ্রোহীরা কোনোভাবেই দলের আনুকূল্য পাবেন না।
নির্বাচন কমিশনের পুনঃতফসিল অনুযায়ী আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।