রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ পূর্বাহ্ন

ঐতিহাসিক মে দিবস

মো: আবু নসর
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১ মে, ২০২১
  • ১৭২ বার

আজ মহান ও ঐতিহাসিক মে দিবস। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামের স্মারক হিসেবে পয়লা মে সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ পালিত হয়। এ দিবসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস আছে। ঊনিশ শতকের শেষার্ধ পর্যন্ত শ্রমিকদের ছিল না কোনো ন্যায্য মজুরির নিশ্চয়তা, ছিল না কাজের নির্দিষ্ট সময়ের সীমা। মালিকরা তাদের খেয়ালখুশি মতো শ্রমিকদের দৈনিক ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত খাটাতেন। ১৮৭৭ সালে ন্যায্য মজুরি, আট ঘণ্টা কর্মদিবস ও অন্যান্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শ্রমিকরা ব্যাপক ধর্মঘট পালন করেছিল। এই ন্যায্য আন্দোলনের বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দেয়া হয়। গুলিতে ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত ৩০০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। ১৮৮৬ সালের পয়লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে অনেক শ্রমজীবী মানুষ নিপীড়নের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিলেন প্রচণ্ড দুর্বার আন্দোলন। সেই দিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১ হাজার ৫৬২টি শিল্পকারখানাসহ সব শিল্পাঞ্চলে আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন শ্রমিকরা।

১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক’ শ্রমিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ‘পয়লা মে’ তারিখকে ঘোষণা করা হয় ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয়ে আসছে ‘মে দিবস’।

ঐতিহাসিক ও মহান ‘মে দিবস’ শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এবং বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশের দিন। মনে রাখতে হবে, দেশ ও জাতির উন্নয়নে শ্রমিকদের মর্যাদা প্রদান অতি আবশ্যক।

এক অর্থে সব শ্রমজীবী মানুষকে শ্রমিক বলা যেতে পারে। শুধু পরিবহন, পোশাক কিংবা কলকারখানায় কাজ করা, নিচের পদের মানুষকে শ্রমিক হিসেবে গণ্য না করে কায়িক পরিশ্রম করা মানুষকেই শ্রমিক হিসেবে দেখা যেতে পারে। হোন তিনি দিনমজুর কিংবা চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী। সবাই শ্রম দিচ্ছেন যার যার স্তরের শ্রমিক হিসেবে।

আমাদের দেশেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও গুরুত্বসহকারে ‘মে দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু আজো শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণ সুনিশ্চিত হয়নি। শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ ব্যতীত শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, গত ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজায় পোশাক তৈরি কারখানা ভবন ধসে পড়ে। এতে পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। আহত হলেন সহস্রাধিক শ্রমিক। তাদের মধ্যে অঙ্গ হারিয়েছেন ২৭ জন।

২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল সাভারের পলাশবাড়ির শাহরিয়ার ফ্যাব্রিকস ইন্ডাস্ট্রিজ ও স্পেকট্রাম সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজের ভবন ধসে ৬২ জন শ্রমিকের মৃত্যু, ২০১০ সালে ১ জুন তেজগাঁও এলাকার বেগুনবাড়িতে ভবনধসে ২৫ জনের মৃত্যু, ২০১২ সালের নভেম্বরে আশুলিয়ার তাজরীন গার্মেন্টস ভবনে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১০০ শ্রমিকের মৃত্যু, আশুলিয়ার প্রাণকেন্দ্রের একটি ভবনধসে কয়েকজনের মৃত্যু এবং গাজীপুরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পুরান ঢাকার চকবাজার ও বনানীর বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকসহ অনেকের প্রাণহানির মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা আমাদের নিদারুণভাবে শোকাহত ও বেদনাহত করে রেখেছে। তাই আজ নিহত ও আহত সব শ্রমিকের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা, সহমর্মিতা ও সহানুভূতি জানানো অপরিহার্য।

বস্তুত বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতির মূলে সৃজনশীল গরিব শ্রমিক। শ্রমিকদের জীবন নিয়ে টানাহেঁচড়া যেমন কাম্য নয়, তেমনি সবার শ্রমিকবান্ধব হওয়াও বাঞ্ছনীয়। পরিবহন শ্রমিক, পোশাক শ্রমিক, বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকসহ ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সব কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত সব শ্রমিকের সামগ্রিক স্বার্থ ও সঠিক মর্যাদা রক্ষার্থে মালিক পক্ষকে সব গাফিলতির ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায্য মজুরি প্রদানসহ শ্রমিকসেবা নিশ্চিত ও ত্বরান্বিত করা জরুরি। তবেই হবে মহান ও ঐতিহাসিক ‘মে দিবস’-এর অঙ্গীকার পূরণ এবং ‘এ দিবস’ হবে সার্থক।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, কলারোয়া সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com