শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১৮ অপরাহ্ন

সিনোফার্মের টিকা দাম প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ চীন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৫ জুন, ২০২১
  • ১৩৭ বার

জুন, জুলাই ও আগস্ট এ তিন মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে চীনের চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ বা সিনোফার্ম থেকে মোট দেড় কোটি টিকা আনার জন্য দেশটির কাছে ক্রয় প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় প্রথম চালানে এর ৫০ লাখ টিকা চলতি জুনে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। তবে গোপনীয়তার শর্ত ভেঙে দাম প্রকাশ করায় চীন থেকে টিকা পাওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। উপরন্তু টিকার দাম এখন বাড়াতে পারে চীন। জানা গেছে, টিকা পাওয়া নিয়ে চীনের সঙ্গে অপ্রকাশযোগ্য চুক্তিতে সই করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দাম প্রকাশ হওয়ায় ক্ষোভ

প্রকাশ করে চীন। তবে একে অনিচ্ছাকৃত ভুল দাবি করে এরই মধ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। পরিস্থিতির বিস্তারিত জানিয়ে চীনকে চিঠিও লিখেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর মেলেনি।

এদিকে বাংলাদেশ টিকার দাম প্রকাশ করে দেওয়ায় চীনা কর্তৃপক্ষও বিপাকে পড়েছে। তারা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ টিকা রপ্তানি করছে। অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি দামে টিকা নিচ্ছে। এখন ওইসব দেশে টিকার দাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে চীনা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগে কড়া ভাষায় চিঠি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চিঠিতে গোপনীয় বিষয় কেন প্রকাশ করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। তারা বলছে, ব্যবসায়িক নীতির কারণে তারা একেক দেশের কাছে একেক দামে টিকা বিক্রি করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কারণে বিশেষ মূল্যে টিকা সরবরাহ করতে চেয়েছে। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় অন্য দেশগুলো খুব খারাপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিনোফার্ম। একটি অপ্রকাশযোগ্য চুক্তির বিষয় কীভাবে প্রকাশ পেল সে কথাও জানতে চায় চীন।

তিন মাসে সিনোফার্মের কাছ থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কিনতে দুই পক্ষ তিনটি চুক্তি সইয়ের জন্য খসড়া তৈরি করা হয়। ক্রয় প্রস্তাবসহ চুক্তির কাগজ চীনের কাছে পাঠানো হয় গত সপ্তাহে। এর আগে সিনোফার্মের করোনা টিকা কিনতে চীনের সঙ্গে গোপনীয়তার চুক্তি করে বাংলাদেশ। যার অন্যতম শর্ত টিকার বিক্রয় মূল্য প্রকাশ করা যাবে না। গত ২৭ মে দেড় কোটি টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয় সরকারি মন্ত্রিসভার ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. শাহিদা আকতার গণমাধ্যমকে জানান, প্রতি ডোজের দাম হবে ১০ ডলার। আর এতেই বিষয়টি নজরে এলে বাংলাদেশকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় চীনা দূতাবাস।

এদিকে ঘটনার পর অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া দেড় কোটি টিকা কিনতে রাশিয়াকে গত ২৮ মে প্রস্তাব দেওয়া হলেও তার জবাব দেয়নি দেশটি। ফলে রাশিয়া থেকে টিকা পেতেও বিলম্ব হতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা চীনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছি। চীন আমাদের বিষয়টা বোঝে। বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অন্য দেশের তুলনায় কম দামে টিকা দিয়েছিল তারা। শর্ত ছিল চুক্তি প্রকাশ করা হবে না। সে অনুযায়ী নন ডিজক্লোজার স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। কিন্তু একজন কর্মকর্তা না বুঝে দাম প্রকাশ করে দেওয়ায় দুঃখ পেয়েছে চীন। বিষয়টা তারা নোট ভালবালের মাধ্যমে জানিয়েছে। তৎক্ষণাৎ আমরাও দুঃখ প্রকাশ করে চিঠি দেই। সেই চিঠির আনুষ্ঠানিক জবাব এখনো না এলেও বাংলাদেশের অনিচ্ছাকৃত ভুলের বিষয়টা বেইজিং আমলে নিয়েছে মর্মে বার্তা পেয়েছি। তারা এখন অন্য কিছু চাইছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। টিকার দাম নিয়ে হয়তো দরকষাকষি করবে না কিন্তু তারা অনত্র বাংলাদেশের সমর্থন চায় সেই বার্তা স্পষ্ট। মন্ত্রী আশা করেন বাংলাদেশ বিষয়টি ম্যানেজ করতে পারবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com