একাত্তরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করে বাঙালি। কিন্তু যুদ্ধের ওই থমথমে সময়ে এ বিজয় সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। তবে তাদের এটুকু ধারণা ছিল যে বিজয়ী হবে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই হবে। যুদ্ধবিক্ষুব্ধ ওই সময় পৃথিবীতে জন্ম নিলেন একজন শিশু। সেই শিশুর নাম রাখা হলো ‘জয়’ ও ‘সজীব’। বাংলাদেশের আকাশে সেই উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম সজীব ওয়াজেদ জয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য পুত্র ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য দৌহিত্র। যিনি ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেও এর উত্তাপ ও চাপকে জয় করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। উচ্চশিক্ষিত মেধাবী তরুণ হিসাবে আইটি খাতে তরুণদের জন্য স্বপ্নের দুয়ার খুলে দিয়েছেন। তারুণ্যের ভেতরে নিজের স্বপ্নকে সঞ্চালন করে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন নায়কের ভূমিকায়। তথ্য ও প্রযুক্তির বিস্ময়কর বিপ্লব ঘটিয়ে সজীব ওয়াজেদ পরিণত হয়েছেন তারুণ্যের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে, আইডলে।
বড় মেয়ে শেখ হাসিনার ছেলের ‘জয়’ নামটি রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ প্রসঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দুটি নাম তার প্রিয় দুই ব্যক্তিত্ব রেখেছেন। জাতির পিতা একাত্তরের মার্চে মেয়ে হাসিনাকে বললেন, ‘তোর একটি ছেলে হবে। ও জন্ম নেবে স্বাধীন বাংলাদেশে। তার নাম রাখিস জয়।’ আর ‘সজীব’ নামটি রেখেছেন নানী শেখ ফজিলাতুন্নেছা। জন্মের পর তিনি এ নামকরণ করেন আদরের নাতির।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্রও একদিন তার শিক্ষা, মেধা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে বদলে দেবেন বাংলাদেশকে। বাংলার মানুষ সেই স্বপ্নেই এগিয়ে যাচ্ছে।
জয়ের মাতামহ শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’য় রূপান্তর করার। এর শুরুটা তিনি করেছিলেন এ দেশের মাটি ও মানুষকে নিয়ে। কিন্তু পঁচাত্তরের পর থমকে যায় সেই যাত্রা। তবে এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই থমকে যাওয়া বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে দুর্দান্ত গতিতে। এখন জয়ের পরিকল্পনায় ডিজিটাল সেবায় উন্নত ও সহজ হচ্ছে মানুষের জীবনযাপন।
বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ ও তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ তথা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ- মূল উদ্দেশ্য একই। দুটি প্রজন্মগত ও ভিন্ন ধারণা। শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেন, যা ‘দিনবদলের সনদ’ হিসাবে পরিচিত।
তবে এই ‘দিনবদলের’ যাত্রার কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। ওই বছর সরকার গঠনের পরই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছেলে কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে কম্পিউটার ও কম্পিউটারসামগ্রী থেকে কর তুলে দেন। এরপর তিনি আড়ালে থেকে প্রযুক্তিতে অর্জিত নিজের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, গবেষণা, পরিশ্রম ও নিষ্ঠা দিয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার ভিশনকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজ শুরু করেন।
২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর সজীব ওয়াজেদকে অবৈতনিকভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। সজীব ওয়াজেদ জয় তথ্যপ্রযুক্তি, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে, তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। মা শেখ হাসিনার উপদেষ্টা হিসাবে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগানকে প্রথম সামনে আনেন জয়। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র অ্যাকশন প্ল্যান, টাইম ফ্রেম, মিশন-ভিশন, রোডম্যাপ- এগুলো এসেছে তার চিন্তা থেকেই। এভাবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ভোগ করে জনগণ। সত্যিকারের ‘গ্লোবাল ভিলেজে’ যুক্ত হয় বাংলাদেশ। আর এর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন অর্থনৈতিক অবকাঠামো। তার নেতৃত্বেই শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দিকে এগিয়ে গেছে দেশ। তার সেই চিন্তায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র বিকশিত রূপটি এখন আমরা দৈনন্দিন জীবনে উপভোগ করছি। মরণব্যাধির চিকিৎসা থেকে শুরু করে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছে অনলাইন প্রযুক্তি।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ তরুণ। সজীব ওয়াজেদ জয় এ তারুণ্যকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চান। তিনি মনে করেন, দেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণকে প্রশিক্ষিত করে আমরা যদি তাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে খুবই দ্রুত তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্ববাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অর্জন করতে পারব।
এ তরুণ জনগোষ্ঠীই আমাদের সম্পদ। আইসিটি খাতে এ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে তুলতে সরকার তাদের প্রশিক্ষণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তরুণদের উদ্দেশে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘আপনারা আপনাদের নিজস্ব উদ্ভাবন এবং ভিশন ঠিক করুন। নিজস্ব ধারণা অনুসন্ধান করুন, নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করুন, কাউকে নকল বা অনুসরণ করবেন না, উদ্ভাবন করুন।’
এসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থেকেই আমরা বুঝতে পারি তিনি কত বড় ‘ভিশনারি লিডার’। এজন্য ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি দেশের তরুণদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের পথে আত্মনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে এবং তাদের অংশগ্রহণে প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কর্মযজ্ঞ চলছে। দেশ গঠনে তরুণদের মতামত, পরামর্শ শুনতে তার ‘লেটস টক’ ও ‘পলিসি ক্যাফে’ দুটি প্রোগ্রাম ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। তরুণ উদ্যোক্তা ও তরুণ নেতৃত্বকে একসঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষিত করতে বৃহত্তম প্ল্যাটফরম ‘ইয়ং বাংলার’ সূচনা করেন তিনি।
সরকার প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড সহজ ও সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছে দিতে দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে স্থাপন করেছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি এ অতিমারির সময়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হচ্ছে অনলাইনে। এগুলোর মধ্যে পরীক্ষার ফরম পূরণ, চাকরির আবেদন, করোনা পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিও নেওয়া যাচ্ছে ঘরে বসেই। ব্যাংকে না গিয়ে মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং এবং আই-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজেই সেবা নিতে পারছে। করোনাকালে ঘরে বসে অনলাইনে অফিস করছে, ক্লাস করছে। এসব সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণেই।
এ বছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি; সেই সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীও। ২৭ জুলাই পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হতে চলেছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের। তার জন্ম ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায়। শিক্ষাজীবন শুরু হয় ভারতে। বেঙ্গালুরুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে। উচ্চতর শিক্ষার জন্য জয় ভর্তি হন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে লোক প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান জয়। শিক্ষাজীবন শেষে শুরু করেন চাকরি, আইটি প্রফেশনাল হিসাবে যোগ দেন বিশ্বখ্যাত সিলিকন ভ্যালিতে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে আরও দক্ষ হয়ে ওঠেন। তার অর্জিত শিক্ষা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতালব্ধ চিন্তা দেশের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। কঠোর পরিশ্রমী ও তারুণ্যের প্রাণময়তার অধিকারী জয় ২০০৭ সালে ২৫০ জন তরুণ বিশ্বনেতার মধ্যে একজন হিসাবে সম্মানিত হন।
তার ধমনিতে শেখ মুজিবের রক্ত, শেখ হাসিনার রক্ত, বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার রক্ত। তাদের প্রত্যেকে দেশের কল্যাণে কাজ করেছেন, করছেন। মাতামহ ও পিতা-মাতার মতোই নির্লোভ সজীব ওয়াজেদ জয় মানুষকে ভালোবাসেন অন্তর থেকে। তিনিও মায়ের মতো, নানার মতো এই মাটি, মানুষের নিকটজন হিসাবে প্রতিপন্ন হবেন বলে মনে করেন দেশের মানুষ।
সজীব ওয়াজেদ জয় ২০১০ সালে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন। তবে রাজনীতিতে সক্রিয় হননি। কিন্তু রাজনীতি সচেতন জয়ের স্বপ্নজয়ের বিজয় রথ থেমে নেই। দেশের প্রত্যেক তরুণের মনে ‘স্বপ্নের বীজ’ বপন করে চলেছেন তিনি, যা একদিন ফুলে-ফুলে পুষ্পালয় গড়ে তুলবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তিনি উপহার দিয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তিতে বিপ্লব সাধন করায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা ডিজিটাল প্রজন্মের কাছে তিনি হবেন দৃষ্টান্ত। আসুন আমরাও তারুণ্যকে নিয়ে এক হয়ে এগিয়ে যাই বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’র পানে। জন্মদিনে সজীব ওয়াজেদ জয়কে শুভেচ্ছা।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ : উপাচার্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়