রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন

অস্বাভাবিক খেলাপি ঋণ ১৯ ব্যাংকে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩৬৩ বার

অস্বাভাবিক অবস্থায় চলে গেছে ১৯ সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। তাদের কোনো কোনোটির মোট ঋণের ৮৩ শতাংশ চলে গেছে ঋণখেলাপিদের পেটে। আবার কোনোকোনোটির খেলাপি ঋণের ৯০ শতাংশই মন্দ ঋণ বা আদায় অযোগ্য ঋণে পরিণত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সম্পদের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে ঋণের সুদ ও আয়ের ওপর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, সাধারণত খেলাপি ঋণ ২ থেকে আড়াই শতাংশ থাকে। আমাদের ৫ শতাংশ পর্যন্ত সহনীয় বলা যায়। আর ১০ শতাংশের ওপরে হলে এটা ওই ব্যাংকের জন্য অ্যালার্মিং বলা চলে। খেলাপি ঋণ বেশি হলে একটি ব্যাংকের নানা দিক থেকে ঝুঁকি বেড়ে যায়।

যেমন, প্রথমেই ব্যাংকটির সম্পদের গুণগত মান কমে যায়। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের সংরক্ষণেরসীমা বেড়ে যায়। তৃতীয়ত, ব্যাংকটির আয় কমে যায়। কারণ খেলাপি ঋণ বেশি হলে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের মুনাফা থেকে।

এতে ব্যাংকটির আয় কমে যায়। চতুর্থ হলো ব্যাংকটির ঋণের সুদহার বেড়ে যায়। কারণ খেলাপি ঋণের কারণে একটি ব্যাংকের বিনিয়োগযোগ্য তহবিল কমে যায়। এতে বেড়ে যায় তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়। এ ব্যয় সমন্বয় করা হয় ঋণের সুদহার বাড়িয়ে। আর আমানতকারীদের আমানতের সুদহার কমিয়ে। অর্থাৎ আমানতকারীদের আয় কমে যায়, আর বিনিয়োগকারীদের ব্যয় বেড়ে যায়। এর সামগ্রিক প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতের মানদণ্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার এক অঙ্কের ঘরে থাকা সহনীয়। এর বেশি হলেই ওই ব্যাংকের জন্য ঋণঝুঁকি বেড়ে যায়। খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের অধিক হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঋণঝুঁকি বেড়ে যাবে। এতে ব্যাংকের সামগ্রিক অবস্থা দুর্বলতার পরিচয় বহন করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে মোট ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ১৯টি ব্যাংকেরই খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি সরকারি ও বিশেষায়িত, দুইটি বিদেশী এবং বাকি আটটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে।

সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ বেসিক ব্যাংকের ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ৫৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। অপর দিকে জনতা ব্যাংকের ৪৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সোনালী ব্যাংকের ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ, রূপালী ব্যাংকের ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং অগ্রণী ব্যাংকের ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ খেলাপি ঋণ রয়েছে।

অপর দিকে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ১৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার হলো মোট ঋণের ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ।

অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপিঋণের গড় হার মোট ঋণের ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ। যেখানে গত ডিসেম্বরে ছিল ২৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ ৯ মাসের ব্যবধানে সরকারি ব্যাংকগুলোর গড় খেলাপি ঋণের হার বেড়ে গেছে। আর বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের গড় খেলাপি ঋণ হলো মোট ঋণের ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ।

এ দিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোরও গড় খেলাপি ঋণের হার বেড়ে গেছে। যেমন, গত ডিসেম্বরে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গড় খেলাপি ঋণের হার ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, সেখানে মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে পৌনে আট শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে সমস্যাকবলিত আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৮৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকটির মোট ঋণের ৮৩ দশমিক ৪৫ শতাংশই ঋণখেলাপিদের পেটে চলে গেছে।

একই সাথে নতুন প্রজন্মের ব্যাংক পদ্মা ব্যাংকের মোট ঋণের ৭১ দশমিক ৬২ শতাংশই চলে গেছে ঋণখেলাপিদের পেটে। আর ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশ খেলাপি ঋণ রয়েছে আরেক সমস্যাকবলিত ব্যাংক বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের। ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশ খেলাপি ঋণ রয়েছে এবি ব্যাংকের। অপর ৬টি খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের ঘরে রয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর বর্ধিত হারে মুনাফা থেকে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে; এতে কমে যাচ্ছে আয়। অপর দিকে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতিও বেড়ে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগযোগ্য তহবিল। সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে আর্থিক সূচকের ওপর।

নিউজটি শেয়ার করুন..

One thought on "অস্বাভাবিক খেলাপি ঋণ ১৯ ব্যাংকে"

  1. Like!! I blog quite often and I genuinely thank you for your information. The article has truly peaked my interest.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com