বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য নানা পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হল ওয়াজ-মাহফিল। বাঙালি জাতির সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচার মাধ্যম। বাঙালিরা ওয়াজ-মাহফিলকে খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ভালোবাসেন। নিজ খরচে আয়োজন করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন।
গ্রাম বাংলার যুবক-বৃদ্ধ সবাই এরকম একটি আয়োজন করার অপেক্ষায় থাকেন সারাবছর। কবে শীত আসবে, কবে মাহফিলের আয়োজন করবেন- এমন অবস্থা।
আমাদের পাড়ায় কয়েকজন ছেলেকে দেখেছি, সারাবছর আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘ভাই, এবছর ওয়াজ মাহফিল কবে থেকে শুরু হবে? তাদের প্রশ্নগুলো শুনলে আমার খুব আনন্দ হয়। এমন মানসিকতার যুবক এ সমাজে নেহায়েত কম নয়। বেশি, খুব বেশি।
মাহফিলের মওসুম আসলে, সারা বাংলার যেখানেই যাই বক্তাদের সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর গুণগান শুনতে পাই। মাহফিল প্রাঙ্গন মানুষে মানুষে ভরে যায়। যেন তিল ধারণের জায়গা নেই।
ছোট্ট শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এক সামিয়ানায় জড়োসড়ো হয়ে বসেন। পর্দার আড়ালে কান পেতে রাখেন মুসলমান মা ও বোনেরা। প্রায় অর্ধ রাত পর্যন্ত শ্রবণ করেন কোরআনের ঐশী বাণী। বিষয়টা বাঙালির জন্য অবশ্যই গর্বের। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওয়াজ মাহফিল।
তবে সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা মাহফিলগুলোতে উপস্থিত হতে পারেন না। নানা সমস্যায় থাকেন। যেমন অসুস্থ ব্যক্তিগণ। অসুস্থ মানুষের মনে শত ইচ্ছে থাকলেও তারা আসতে পারেন না। ওয়াজ শোনার চেয়ে তাদের জন্য বিশ্রামটাই বেশি প্রয়োজন। তাদের ঘুমে সমস্যা হয়- ইসলাম এমন কোন কাজের সমর্থন করে না। ইসলাম অসুস্থ ব্যক্তিকে বিশ্রামের আদেশ দেন।
সেদিন আমাদের পাড়ায় একটা মাহফিল ছিল। বড় একজন আলেম তাফসির পেশ করেছিলেন। খুব ভালো লেগেছিল। ওয়াজ শুনে বাড়িতে আসার সময় ইয়াকুব চাচার সঙ্গে দেখা।
বারান্দায় বসে ছিলেন তিনি। আমি বললাম, চাচা! আপনার তো শরীর ভালো না। রাত তো অনেক হয়েছে। এখনো জেগে আছেন কেন?
ইয়াকুব চাচা বিরস মুখে বললেন, সন্ধ্যা থেকে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। মাহফিলের আওয়াজে ঘুমুতে পারছি না। আচ্ছা, তুমিই বলো, এতো সাউন্ড দিয়ে মাহফিল করার কি খুব দরকার?
চাচার কথার কোন উত্তর দিতে পারিনি সেদিন। তার প্রশ্ন শুনে মনটা ভীষণ খারাপ হয়েছিল। তিনি আসলেই সত্য বলেছেন। এতো সাউন্ড দিয়ে ওয়াজ-মাহফিল না করেও ইসলাম প্রচার হয়। আমাদের নবী (সা.) সারাজীবন দীনের কথা বলেছেন, মানুষকে আল্লাহর দিকে ডেকেছেন, কিন্তু কাউকে কষ্ট দেননি।
তার কারণে কোন মুসলিম বা অমুসলিম কষ্ট পায় নি। দ্বীনের দাওয়াত দেয়া যেমন নবীওয়ালা কাজ ঠিক তেমনি কাউকে কষ্ট না দিয়ে দ্বীনের প্রচার করাও রাসূল (সা.)-এর উম্মতের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
ওয়াজ-মাহফিল একটি পূণ্যের কাজ। এর বহুবিধ ফায়দা আছে। তবে এর মাধ্যমে যেন কারো কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকেও পূর্ণ লক্ষ্য রাখা আমাদের কর্তব্য।
লেখক: তরুণ লেখক ও মুদাররিস, জামিয়া মাহমুদিয়া সাভার
Like!! I blog frequently and I really thank you for your content. The article has truly peaked my interest.