শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: মানবিক জাতি গঠনে অগ্রসর হই

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩৪৮ বার

আজ ১৪ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত বেদনাবিধুর একটি দিন। দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঠিক বিজয়ের প্রাক্কালে তদানীন্তন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা দেশের বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশকে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ছিলেনÑ সিরাজুদ্দীন হোসেন, নিজাম উদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নাজমুল হকের মতো খ্যাতিমান সাংবাদিক; মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার, আনোয়ার পাশার মতো সাহিত্যিক; আবুল খায়ের, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, রশীদুল হাসানের মতো শিক্ষাবিদ এবং আলীম চৌধুরী, ফজলে রাব্বি, আজহারুল হকের মতো চিকিৎসক। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ২৫ মার্চের কালরাতেও বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে মর্মান্তিকভাবে জীবন দিয়েছেন। আজকের এই দিনে জাতি তাদের গুরুত্বের সাথে স্মরণ করছে। বুদ্ধিচর্চার মাধ্যমে জাতীয় প্রগতি অর্জনের জন্য তাদের কর্মকাণ্ডকে সামনে আনতে হবে।
১৯৭১ সালে ডিসেম্বরে হারানো বুদ্ধিজীবীরা নিবিড় বুদ্ধিচর্চার মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন। তাদের মতো খ্যাতনামা লেখক-সাংবাদিক-সাহিত্যিক-শিক্ষক-শিল্পীসহ নানা প্রতিভার অধিকারী বুদ্ধিজীবীরা জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা আর দূরদর্শিতা দিয়ে সাধ্যমতো ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যাপক সহায়তা দিয়েছিলেন। সে পথে অবশেষে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র এবং জাতিসত্তার নিজস্ব পরিচিতি। এ জাতির সার্বিক মুক্তি ও মঙ্গলের অপার বাসনায় তাদের স্বীকার করতে হয়েছে সর্বোচ্চ ত্যাগ। দেশের এই মেধাবী মানুষদের ঐকান্তিক প্রত্যাশা ও দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন ছিল এমন এক বাংলাদেশের সুপ্রতিষ্ঠা, যা হবে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষাদীক্ষা ও বিত্ত-সম্পদের ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বে একটি উল্লেখযোগ্য দেশ। তাদের আন্তরিক কামনা ছিল অশিক্ষা, অপুষ্টি, দারিদ্র্য ও দুর্নীতি থেকে সর্বতোভাবে মুক্ত একটি কল্যাণময় রাষ্ট্র। সে দেশটিতে সবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করা হবে। ধর্ম-বর্ণ শ্রেণী-ভাষা নির্বিশেষে সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার কায়েমের মধ্য দিয়ে মানবিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ ছিল সেই সব বুদ্ধিজীবীর বিরাট আশা। তারা চেয়েছেন ঐক্যবদ্ধ জাতি। এক সুসংহত রাষ্ট্র। কল্যাণময় ও শান্তিপূর্ণ সমাজে সবার মর্যাদা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তার পাশাপাশি সর্ববিধ সন্ত্রাস সহিংসতামুক্ত অনাবিল পরিবেশই ছিল সেই হারানো বুদ্ধিজীবীদের আকাক্সক্ষা। তাদের কাক্সিক্ষত সমাজ আমরা কতটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি এখন সেই প্রশ্ন আমাদের সামনে। একটি স্বাধীন দেশের জন্য অর্ধশতাব্দী কম সময় নয়। আজকের বুদ্ধিজীবী দিবসে এর যথাযথ মূল্যায়নে জাতিগত আত্মপর্যালোচনা জরুরি।
আজ চার দিকে হাহকার। জ্ঞান, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার চর্চা অনেকটাই নির্বাসনে। সবার ওপরে গুরুত্ব পেয়েছে উন্নয়ন। এই উন্নয়নও বড় প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। কারণ উন্নয়নের চেয়ে কিছু মানুষের উদগ্র বাসনা চরিতার্থ করতে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থই প্রাধান্য পেয়ে গেছে। ফলে প্রকল্পের আকার-আয়তন বাড়ছে; কিন্তু কাক্সিক্ষত উন্নয়ন আমাদের সামনে ধরা দিচ্ছে না। নীতি-নৈতিকতা শুভচর্চা আজ পিছু হটছে। এই পরিস্থিতিকে পাল্টাতে হলে ফের জাগ্রত করতে হবে ঘুমন্ত বিবেককে। নির্বাসিত জ্ঞান, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। অশুভ শক্তিকে করতে হবে পরাজিত। তাহলে আবারো মানবিক বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রসর হওয়া যাবে।
এ ক্ষেত্রে সমূহ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে, যাবতীয় ব্যর্থতাকে সাফল্যে রূপান্তরের জন্য চাই পর্যাপ্ত আত্মসমালোচনা। আসুন, বুদ্ধিজীবীসমেত সব শহীদের স্বপ্নপূরণে আমরা সবাই এক হয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই এবং যথার্থ পন্থায় দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্য পালনে এ মুহূর্তেই করণীয় নির্ধারণ করে তৎপর হয়ে উঠি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com