জুটি ছাড়া চলচ্চিত্র হয় না! কারণ চলচ্চিত্র মানেই প্রেমের গল্প। আর প্রেম বিপরীত লিঙ্গের দুজনের মধ্যেই হয়। ফলে একটি সফল চলচ্চিত্রের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা থাকে একটি জুটির। একটি জুটি যদি পর পর দুই-তিনটি সফল চলচ্চিত্র উপহার দিতে পারে, তা হলে তারা হয়ে যান জনপ্রিয়। এর পর থেকে তাদের নিয়ে নির্মিত হতে থাকে একের পর এক চলচ্চিত্র। জুটি হিসেবে তারা থাকেন দর্শক চাহিদার শীর্ষে। আমাদের আজকের আয়োজন তেমন পাঁচ জনপ্রিয় জুটি নিয়ে। লিখেছেন- ফয়সাল আহমেদ
ফারুক-ববিতা
চিত্রনায়ক ফারুক সবচেয়ে বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন ববিতার সঙ্গে। তাই নিজের সফল বা প্রিয় নায়িকা হিসেবে ববিতাকেই এগিয়ে রাখেন তিনি। ১৯৭৩ সালে আবার তোরা মানুষ হ ছবি দিয়ে প্রথমবারের মতো জুটি হন তারা। এর পর আলোর মিছিল, কথা দিলাম, প্রিয় বান্ধবী, লাঠিয়াল, সূর্যগ্রহণ, গোলাপী এখন ট্রেনে, নয়নমণি, মিয়া ভাই, পদ্মা মেঘনা যমুনাসহ ৩৩টি ছবিতে অভিনয় করেন তারা। তার মধ্যে কালজয়ী হয়ে আছে আলোর মিছিল, গোলাপী এখন ট্রেনে ছবিগুলো। আর নয়নমণি ছবির মিষ্টি রসায়নে ফারুক-ববিতা আজও দর্শকের মনে নিটোল প্রেমের প্রতীক হয়ে আছেন। সর্বশেষ এ জুটিকে দেখা গিয়েছিল ২০০৮ সালে, ঘরের লক্ষ্মী ছবিতে।
শাবনাজ-নাঈম
প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম ১৯৯০ সালে তার নতুন ছবি চাঁদনীর জন্য দুজন নতুন মুখ খুঁজছিলেন। অবশেষে তাদের পেয়েও যান তিনি। আর যাদের পেলেন তারা প্রথম ছবিতেই স্থান করে নিয়েছেন দর্শকহৃদয়ে। সেটা একক অভিনয় এবং জুটি দুই দিয়েই। সেই দুজন হলেন নাঈম আর শাবনাজ। এর পর একে একে অভিনয় করেন লাভ, চোখে চোখে, দিল, টাকার অহঙ্কার, ঘরে ঘরে যুদ্ধ, সোনিয়া ও অনুতপ্তসহ আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে। প্রতিটি ছবিই ব্যবসায়িক সফলতা পায়। চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েই প্রেমে পড়েন একে অপরের। ১৯৯৬ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন এ জুটি। ২০০০ পরবর্তী সময়ে এ জগৎ থেকে আড়ালে চলে যান তারা।
রাজ্জাক-কবরী
রাজ্জাক-কবরী জুটি দর্শকদের সব সময় ভীষণভাবে টেনেছে। ১৯৬৮ সালে এই দুজন প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করেন। পর্দার এই জুটির সিনেমার সংলাপ, গান, স্টাইলের বর্ণনা দিয়ে সেই যুগের প্রেমিক-প্রেমিকারা প্রেমপত্র লিখতেন। কবরীর সঙ্গে রাজ্জাকের জুটি গড়ে উঠেছিল ‘ময়নামতি’ সিনেমা দিয়ে। এর পর আবির্ভাব, নীল আকাশের নিচে, বাঁশরী, রংবাজ, অধিকারসহ আরও অনেক ছবি দিয়ে তাদের জুটি পাকাপোক্ত হয়। শুটিংয়ের সময় জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই অভিনয় করতেন রাজ্জাক-কবরী। তাদের নিয়ে আগে থেকেই প্রযোজক, হলমালিক ও দর্শকদের আগ্রহ থাকত। তাদের অনেক ছবিই প্রায় বছর ধরে সিনেমা হলে চলেছে। ক্যারিয়ারে ১৪০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছিলেন কবরী। কিন্তু দর্শকদের কাছে রাজ্জাকের নায়িকা হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত তিনি। জনপ্রিয় এই জুটির কেউই আর আমাদের মাঝে নেই।
সালমান শাহ-শাবনূর
ঢাকাই চলচ্চিত্রে সবচেয়ে সফল রোমান্টিক জুটি হিসেবে মনে করা হয় সালমান শাহ-শাবনূরকে। প্রয়াত নির্মাতা জহিরুল হক ১৯৯৪ সালে নির্মাণ করেন তুমি আমার। এই ছবির মাধ্যমে প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করেন সালমান শাহ ও শাবনূর। এটি সালমানের দ্বিতীয় ছবি হলেও নায়িকা হিসেবে শাবনূর তখন বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবে সালমানের সঙ্গে জুটি গড়ার পরেই শাবনূরের ক্যারিয়ারে সুবাতাস বইতে থাকে। প্রথম ছবির পরই পরিচালক-প্রযোজকরা একের পর এক ছবিতে নিতে থাকেন তাদের। সালমান শাহ তার স্বল্প আয়ুর জীবনে অভিনয় করেছিলেন ২৭টি ছবিতে। এর মধ্যে ১৪টি ছবিতেই তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন শাবনূর। সালমানের বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমেই চিত্রজগতের অন্যতম তারকায় পরিণত হন তিনি। যে কটি ছবিতে একসঙ্গে তারা ছিলেন, তার মধ্যে তোমাকে চাই, জীবন সংসার, স্বপ্নের ঠিকানা, আনন্দ অশ্রু, স্বপ্নের নায়কসহ প্রায় প্রত্যেকটিই এখনো দর্শক দারুণভাবে মনে রেখেছেন।
শাবানা-আলমগীর
জুটি হিসেবে তাদের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। রাজ্জাকের নাম বললে যেমন সবাই নায়িকা হিসেবে কবরীকে ভাবেন, ঠিক তেমনি আলমগীরের নায়িকা মানেই শাবানা। আর এই জুটি এখনো মানুষের মুখে মুখে। পারিবারিক আটপৌরে গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিতে উজ্জ্বল হয়ে আছেন আলমগীর-শাবানা জুটি। দেশীয় চলচ্চিত্রের জুটি প্রথার ইতিহাসে আলমগীর-শাবানা সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাদের অভিনীত ছবি ১২৬টি। আর এই ছবিগুলোর বেশিরভাগই ব্যবসাসফল। তাদের অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছে, ভাত দে, অপেক্ষা, স্বামী-স্ত্রী, রাঙা ভাবি, মরণের পরে এবং অচেনা। শাবানার অর্জিত ১১টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ৬টিই এসেছে আলমগীরের সঙ্গে অভিনীত ছবি থেকে।