জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছে আফগানিস্তানের শাসকগোষ্ঠী তালেবান। বিবিসি বলছে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ কথা জানিয়েছেন। ওই চিঠিতে তালেবান তাদের দেশে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা, জাতিসংঘ কর্মীদের সুরক্ষা এবং নারীদের অধিকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিষয়ে কথা বলেছে।
বিবিসি আরেক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গতকাল থেকে আফগানিস্তানে মাধ্যমিক স্কুল খুলেছে। তবে শুধু পুরুষ শিক্ষার্থীদের নিয়ে। নারী শিক্ষার্থীরা কবে স্কুলে যেতে পারবে, কিংবা আদৌ যেতে পারবে কিনা, এ বিষয়ে কোনো কিছুই স্পষ্ট করেনি তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিদেশি সেনারা সরে যাওয়া শুরু করলে আগস্টের শুরু থেকে মাত্র কয়েকদিনেই বিজলিগতিতে একে একে সব প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নেয় তালেবান। ১৫ আগস্ট তাদের কাছে একরকম বিনা প্রতিরোধে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকার।
৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা সরে যায়। তালেবান দ্বিতীয় মেয়াদে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করে ৭ সেপ্টেম্বর। ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার হামলার ২০ বছর পূর্তির দিন শপথ নেওয়ার কথা থাকলেও পরে তা স্থগিত করা হয় ‘মিত্র রাষ্ট্রগুলোর চাপের কারণে’।
১৯৯৬-২০০১ সালের দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি হবে না বলে শুরুতেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালেবান; কিন্তু বিদেশিরা চলে যাওয়ার পর পরই ঘুরেফিরে পুরনো কঠোর ও কট্টর চেহারাতেই তাদের আবির্ভূত হতে দেখা যাচ্ছে। এ কারণে চীন, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের স্বাগত জানালেও এখনো কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।
জাতিসংঘের মহাসচিব রাশিয়ার বার্তা সংস্থা স্পুৎনিকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘ত্রাণসহায়তা নিয়ে তালেবানের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। কোনো ধরনের বৈষম্য ছাড়া পুরো আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানো, জাতিসংঘে কর্মরতদের সুরক্ষা, নারী অধিকার ইস্যুতেও তালেবানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
গুতেরেস বলেন, তালেবানের সঙ্গে এসব ইস্যুতে গঠনমূলক ও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এসব ইস্যুতে তালেবান বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী দেশটিতে সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক তহবিলে আফগানিস্তানের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড এবং ইউএস সেন্ট্রাল ব্যাংক। ফলে চরম সংকটে পড়েছেন আফগানরা। জাতিসংঘ এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানো না গেলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে প্রায় ১০ লাখ শিশু মারাও যেতে পারে। এর পর আফগানিস্তানকে ১০০ কোটি ডলারের বেশি আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেয় বিভিন্ন দেশ।
এদিকে শনিবার থেকে আফগানিস্তানের মাধ্যমিক স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। বিবিসির খবর অনুযায়ী এসব স্কুলে নারী শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের যেতে বারণ করা হয়েছে; কিন্তু গতকাল এএফপির তোলা ও সরবরাহ করা ছবিতে দেখা গেছে, কাবুলে একটি স্কুলে ছাত্রদের পাঠদান করছেন এক নারী শিক্ষক।
বিবিসি বলছে, তালেবানের একটি সূত্র জানিয়েছে, শিগগির নারী শিক্ষার্থীদেরও স্কুলে যেতে দেওয়া হবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। কয়েক স্কুলবালিকা বিবিসিকে বলেছে, ‘সব কিছুই যেন অন্ধকার মনে হচ্ছে।’