আফগানিস্তানে তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণার পরপরই প্রেসিডেন্ট ভবনে ঠিক কী হয়েছিল, তা নিয়ে এখনো রহস্যের জট খোলেনি। কিন্তু সেখানে নিজেদের মধ্যে বড় ধরনের ভুল বোঝাবুঝি, এমনকি গুলির ঘটনাও ঘটেছিল তা বেশকিছু সূত্র নিশ্চিত করেছে। যদিও সেই সময় গুঞ্জন শোনা গিয়েছে- তালেবানের শীর্ষনেতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আবদুল গনি বারাদার মারা গেছেন। সেই জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে তিনি অডিও-ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু ওইদিন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন এমন কয়েকজন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে জানিয়েছেন- সেদিন বারাদার মারধরের শিকার হয়েছিলেন। এমনকি তাকে ঘুষিও মারা হয়। তবে ব্লুমবার্গ সূত্রের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি।
খবরে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ গঠন নিয়ে আলোচনার সময় তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করতে তালেবান নন এমন নেতা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ মন্ত্রিসভা গঠনের দিকে জোর দেন বারাদার। আলোচনার একপর্যায়ে হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা খলিলুর রহমান হাক্কানি তার চেয়ার থেকে উঠে বারাদারকে ঘুষি মারেন। তাদের দেহরক্ষীরাও এই সংঘর্ষে যোগ দিয়ে পরস্পরের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করলে কয়েকজন মারা যান এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। ওই ঘটনার পর বারাদার কাবুল ছেড়ে কান্দাহার চলে যান এবং তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার সঙ্গে দেখা করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের দিকে হাক্কানি নেটওয়ার্ক তালেবানের সঙ্গে একীভূত হয়। ৭ সেপ্টেম্বর তালেবান মন্ত্রিসভার যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তাদের বাইরের কেউ নেই। যারা আছেন, তাদের ৯০ শতাংশই পশতুন সম্প্রদায়ের। হাক্কানি পরিবারের সদস্যরা চারটি মন্ত্রণালয় পেয়েছেন। এফবিআইয়ের তালিকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি হয়েছেন তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তালেবানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সব সময়ই সেদিনের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে গ-গোলের খবরকে অস্বীকার করা হয়েছে। বারাদার নিজেও সেদিন তেমন কিছু হয়নি বলে দাবি করেছেন। ব্লুমবার্গের প্রশ্নের জবাবে তালেবানের মুখপাত্র বেলাল কারিমি টেলিফোনে বলেন, বারাদারকে ‘কোণঠাসা করা হয়নি এবং আমরা আশা করছি তিনি শিগগির ফিরবেন’।
জালালাবাদ-কাবুলে বিস্ফোরণে দায়ী আইএস-কে
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ নানগাহারের রাজধানী জালালাবাদ ও রাজধানী কাবুলে গত শনিবার যে ধারাবাহিক বোমার বিস্ফোরণ হয়েছে, তার জন্য আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের খোরাসান শাখাকে (আইএস-কে) দায়ী করেছে তালেবান। এদিকে শনিবারের পর গতকাল রবিবারও জালালাবাদে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবারের মতো গতকালও তালেবানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। তবে হামলার ঘটনায় হতাহতের খবর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শনিবার জালালাবাদে পরপর চারটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে নিহত হয়েছেন ৭ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। একই দিন কাবুলের দাশত ই বারচি এলাকায়ও একটি গাড়িবোমা বিস্ফোরিত হয়- তাতে অন্তত দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন।