শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন

আফগানিস্তানে এখন সন্তান জন্মদানও দুঃস্বপ্নের!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১১৪ বার

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ক্ষমতার দখল নিয়েছে তালেবান। এর মধ্যেই আফগান নারীদের জন্য সন্তান জন্মদানও দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে। হাসপাতালগুলো বেহাল।

প্রসূতি বিভাগের অবস্থা আরও করুণ। ওষুধ নেই, খাবার নেই; নেই বিদ্যুৎও। ন্যূনতম সেবাটুকুও পাচ্ছেন না রোগীরা। ফলে নবজাতক ও মাতৃমৃত্যু বাড়ছে।

নিজের নবজাতক শিশুকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় বসে মা রাবিয়া। কয়েকদিন আগেই আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের প্রদেশ নানগারহারের ছোট্ট এই হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেন তিনি। এটা তার তৃতীয় সন্তান।

কিন্তু আগের দুবারের চেয়ে তার এবারের অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন। বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে সেই কথাই জানালেন রাবিয়া। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে জন্ম নেওয়া এটা আমার তৃতীয় সন্তান।

কিন্তু অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ আলাদা। দুঃস্বপ্নের মতো।’ হাসপাতালটির প্রসূতি বিভাগে রোগীদের ভিড় থাকলেও মৌলিক সেবাগুলোও এখন আর দেওয়া হচ্ছে। সেবা পাননি রাবিয়াও।

সন্তান জন্মদানের আগে কোনো ব্যথানাশক বা ওষুধ তাকে দেওয়া হয়নি। খাবারও বন্ধ। বাইরে থেকেই খাবার আনতে হয় স্বজনদের।

মরুপ্রধান দেশ আফগানিস্তানে তাপমাত্রার পারদ এখন ঊর্ধ্বমুখী। ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় হাসপাতালের ভেতরে রোগী ও স্বজনদের সিদ্ধ হওয়ার জোগাড়। কিন্তু কোনো বিদ্যুৎ নেই। তাই ঘুরছে না পাখাও।

জেনারেটর ঘুরবে, তাতে নেই জালানি। ফলে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা রোগী ও হাসপাতাল স্টাফদের। হাসপাতালের ধাত্রী আবিদা বলেন, ‘গরমে দরদর করে ঘামে শরীর। একেবারের গোসল হওয়ার উপক্রম।’ তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর এটাই এখানকার প্রতিদিনের চিত্র।

আবিদা আরও জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় রাতের বেলা মোবাইল ফোনের আলোই ভরসা। বলেন, ‘আমার চাকরিজীবনে যত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে, তার মধ্যে এটা সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা। এটা খুবই পীড়াদায়ক। কিন্তু এটাই আমাদের প্রতিদিনের-প্রতিরাতের গল্প।’ এতসব না পাওয়ার মধ্যেও ভালোভাবেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন রাবিয়া। তার নবজাতক সন্তানও সুস্থ আছে। কিন্তু আফগানিস্তানে বর্তমানে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছেন বহু মা। নবজাতকের সংখ্যাও কম নয়। ক্ষমতা দখলের পর থেকেই নারীদের ওপর বাড়ছে তালেবান বিধিনিষেধ। ইতোমধ্যে নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মেয়েদের বাদ দিয়ে শুধু ছেলেদের স্কুলে যেতে বলা হয়েছে। এবার নিষেধাজ্ঞা এলো কর্মজীবী নারীদের ওপর। রাজধানী কাবুলের কর্মরত বেশিরভাগ নারীকে কাজে যোগ দেওয়ার বদলে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার কাবুলের মেয়র হামদুল্লাহ নোমানি এ নির্দেশনা দেন। তবে তালেবান সরকারের এসব হঠকারী সিদ্ধান্ত বিনা প্রতিবাদে মেনে নিচ্ছেন না আফগান নারীরা।

নিজেদের শিক্ষার অধিকারসহ সব অধিকারের দাবিতে ফুসে উঠেছেন তারা। চাকরি ফিরে পাওয়ার অধিকারসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন এসব নারীরা। একই সঙ্গে তালেবানের নতুন সরকার নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন তারা। আলজাজিরা।

এদিকে রোববার এক নির্দেশনায় কাবুলের অন্তর্বর্তী মেয়র হামদুল্লাহ নোমানি বলেন, রাজধানী সিটি করপোরেশনের নারী কর্মীদের পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকার জন্য বলা হচ্ছে। তবে যেসব নারী টয়লেট পরিষ্কারের কাজ করেন, তাদের এই নির্দেশনার বাইরে রাখা হয়েছে। সিটি করপোরেশনে প্রায় ৩ হাজার কর্মী রয়েছেন যার এক-তৃতীয়াংশই নারী।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করে খোলা হবে মেয়েদের স্কুল : মেয়েদের স্কুল খোলার ব্যাপারে তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত হলে মেয়েদের স্কুল খুলে দেওয়া হবে। শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) থেকে ছেলেদের জন্য স্কুল খুলে দেওয়া হয়। তালেবানের অন্তর্র্বর্তী সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে অল্পসংখ্যক স্কুল কার্যক্রম শুরু করেছে।

এর মধ্যে কিছু স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েরা ক্লাসেও যাচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীদের ক্লাস করতে দেখা গেছে। তবে উচ্চমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়গুলো এখনো খুলে দেওয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত মেয়েদেরও স্কুলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com