চীনের বৃহত্তম টেলিভিশনের সম্প্রচারসত্ত্ব কেনার কয়েক মাস পরেই সেই শেয়ারগুলি বিক্রি করে দিচ্ছে আলিবাবা। কারণ, প্রযুক্তিখাতে বিশাল এই কোম্পানির ক্ষমতা এবং প্রভাবের লাগাম টানতে চাইছে দেশটির সরকার। এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের জনপ্রিয় টেলিভিশন ম্যাঙ্গো এক্সেলেন্ট মিডিয়া থেকে আলিবাবা তাদের ৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিতে চাইছে। গত বৃহস্পতিবার টেলিভিশনটির পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বর্তমানে ওই টেলিভিশনের ৫৬ শতাংশ শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক হুনান ব্রডকাস্টিং সিস্টেমের হাতে। ফলে, সেখান থেকে নিজেদের উপস্থিতি প্রত্যাহার করে নিলে চীনের এই বৃহত্তর প্রতিষ্ঠানটি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ক্রয়ের এক বছর পর ছাড়া শেয়ার বিক্রি করা যাবে না, এমন চুক্তি প্রত্যাহার করতে চাইছে আলী বাবা। তারা কোনো অপেক্ষা ছাড়াই শেয়ারগুলো বিক্রি করে দিতে চাইছে। এতে তাদের বিশাল অঙ্কের ক্ষতি হওয়া সত্বেও শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
অথচ মাত্র ৯ মাস আগে ওই শেয়ারগুলো ৯৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে ক্রয় করেছিল তারা। বর্তমানে তা বিক্রি করা হলে তাদের প্রায় ৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডালার লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হবে। তবুও শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে এই টেক জায়ান্ট।
কেন কোম্পানিটি তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে তা ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে জ্যাক মা-কে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন সরকারের অব্যাহত চাপে শেয়ার বিক্রির মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আলিবাবা গ্রুপকে। কারণ, গতবছর থেকেই দেশটির সরকারের রোষানলে রয়েছেন আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা।
এর আগে, চীনের শীর্ষস্থানীয় বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী জ্যাক মা’র আর্থিক-প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যান্ট গ্রুপকে পুনঃগঠনে বাধ্য করে দেশটির নীতিনির্ধারকরা। কোম্পানিটিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির মধ্যে রেখে ব্যাংকের মতো পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
এরপর অ্যান্ট গ্রুপের বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নেয় চীনা নীতিনির্ধারকরা। গত নভেম্বরে আর্থিক মডেল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে কোম্পানিটির মেগা ৩৭ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার বাজার চালুর উদ্যেগটি ভেস্তে দেন তারা। কারণ, দেশে দ্রুত বর্ধনশীল প্রযুক্তিখাত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছে চীন সরকার।
চীনের নীতিনির্ধারকদের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ শুধুমাত্র অ্যান্ট গ্রুপ সংস্কারের উদ্দেশ্যে নয়; এখানে এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মাও রয়েছেন তাদের নিশানায়। এরসূত্রপাত জ্যাক মা’র নীতিনির্ধারকদের সমালোচনা জের ধরে। ‘নীতিনির্ধারকরা উদ্ভাবন দমিয়ে রাখতে চাইছে’, জ্যাক মা এমন মন্তব্য করার পরই গত অক্টোবরে রেগুলেটররা অ্যান্ট গ্রুপ সংস্কারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।