রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন

৩৩ মন্ত্রী এমপি সচিবের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার জাল

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১
  • ১০৫ বার

অতিরিক্ত সচিব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মিরপুর ও গুলশান থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তারা হলেন- আব্দুল কাদের চৌধুরী, শারমিন চৌধুরী ছোঁয়া, শহিদুল আলম ও আনিসুর রহমান। মন্ত্রী, এমপি ও সচিবের নাম ভাঙিয়ে তারা নানা কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে পুলিশের তথ্য। এদের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পরিচয় দেওয়া আব্দুল কাদেরের সাক্ষাৎ পেতেই লাগে লাখ টাকা! ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান।

হাফিজ আক্তার বলেন, আব্দুল কাদেরের রয়েছে নিজস্ব দালাল ও মিডিয়া ম্যান। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া, ওয়ার্ক অর্ডার, সাব-কন্ট্রাক্ট, ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রসেসিং করত। তাদের আকৃষ্ট করার জন্য আব্দুল কাদের নিজেই অতিরিক্ত সচিব ও সিআইপি বনে যেতেন। ব্যবহার করতেন দামি দামি গাড়ি, বডিগার্ড এবং ওয়্যারলেস সেট। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া ভুয়া কার্যাদেশ, শমসের বিন মুসার সঙ্গে তোলা ছবি ও লেনদেনের ভুয়া কাগজপত্রও ব্যবহার করতেন তিনি। সচিবসহ ৩৩ জন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে তার কনসোর্টিয়াম, ব্যবসা আছে বলেও জানাতেন ‘ক্লাইন্ট’দের।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, আব্দুল কাদেরের রয়েছে ঢাকা ট্রেড করপোরেশন, জমিদার ট্রেডিং, সামীন এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী গ্রুপ, হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশন, সততা প্রপার্টিজ, ডানা লজিস্টিকস, ডানা মোটর্স ইত্যাদি নামসর্বস্ব কয়েকটি কোম্পানি। এগুলো মূলত তার প্রতারণার ফাঁদ। তিনি হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশনের ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের’ মাধ্যমে বড় রকমের প্রতারণা শুরু করেন। ২০০৪-২০০৬ সালে দেশের শত শত মানুষের কাছ থেকে সরকারি অনুদানে বাড়ি ও খামার তৈরির নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২০ কোটি বা এর চেয়েও বেশি টাকার লোন পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করে। এ ক্ষেত্রে তারা ঠিকাদার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করে। ভুয়া অতিরিক্ত সচিব সেজে সাক্ষাতেই প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ভিজিট ফি নিতেন আব্দুল কাদের চৌধুরী। ব্যাংক থেকে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার লোন পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রসেসিং ফি বাবদ ৫ থেকে ১০ শতাংশ টাকা নিতেন ডাউনপেমেন্ট হিসেবে। মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার জন্য সেনাবাহিনী পরিচালিত ও বিভিন্ন সরকারি প্রজেক্টের শত শত কোটি টাকার ঠিকাদারি পেয়েছেন বলেও দেখানো হয় ভুয়া কাগজপত্র। এসব ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে তাদের থেকে বড় অঙ্কের টাকা জামানত রেখেও প্রতারণা করতেন। তারা বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে লোক নিয়োগ দেওয়ার নামেও বিপুল টাকা হাতিয়ে নেন। সততা প্রপার্টিজের নামে নামমাত্র কিছু টাকা বায়নার মাধ্যমে জমি ও স্থাপনা ক্রয়ের জন্য চুক্তি করেন। যেগুলো দিয়ে পরে মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে টাকা আদায় করেন। এসব প্রতারণার কাজে অশিক্ষিত আব্দুল কাদের নিজেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন শেষে সর্বশেষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পরিচয় দিতেন। এমনকি তিনি নিজেকে কথিত ধনকুবের প্রিন্স মুসা বিন শমসেরের প্রতিষ্ঠান ড্যাটকোর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবেও পরিচয় দিতেন। প্রিন্স মুসা বিন শমসেরের নগদ অর্থ ও বিভিন্ন স্থাপনার কাস্টোডিয়ান হিসেবে টাকা-পয়সা তার কাছে কোনো ব্যাপার না বলেও জাহির করতেন।

এদিকে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় অস্ত্র মামলা ও তেজগাঁও থানায় প্রতারণার মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতি, বিভিন্ন প্রতারণা, ব্যাংকে নিয়োগের প্রতারণার ঘটনায় কমপক্ষে অর্ধডজন মামলা দায়ের হয়েছে মর্মে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান।

গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘মুসা বিন শমসের এই আব্দুর কাদের চৌধুরীকে ২০ কোটি টাকার চেক দিয়েছেন। আবার কাদের চৌধুরীও ৮ কোটি টাকার চেক মুসা বিন শমসেরকে দিয়েছেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। এ বিষয়ে আমরা মুসা বিন শমসেরের কাছে জানতে চাইব আসল ঘটনাটি কী। তাকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়েও ডাকা হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com