দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন ১১ নভেম্বর। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। অন্যদিকে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠে নেমেছেন দলটির মনোনয়ন না পাওয়া বিদ্রোহী প্রার্থীরাও। সারাদেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই আছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা শুরু থেকেই হুশিয়ারি দিয়ে আসছেন। তবে তা আমলে নিচ্ছেন না তৃণমূলের বিদ্রোহী নেতারা। তাদের দাবি, মনোনয়নে অস্বচ্ছতা, অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ দিয়ে আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় অনেকে বিদ্রোহী হয়েছেন। স্থানীয় নেতা ও এমপিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অনেকে অবশ্য বিতর্কিতদের ঠেকাতে বিদ্রোহীদের পক্ষে আড়াল থেকে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। ফলে স্থানীয় নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিরোধ বাড়ছে। বাড়ছে কেন্দ্র ও তৃণমূলে দূরত্বও।
কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের মতো একটা দলে এক ইউনিয়নে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকা স্বাভাবিক। সেখানে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতাও স্বাভাবিক। এটি দলীয় গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু সে বিরোধ মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়াটাই উদ্বেগের বিষয়।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া ও তাকে সমর্থন দেওয়া সমান অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। যারা এমনটি করবে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দল এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছে। তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের চেষ্টা থাকবে বিদ্রোহী কমিয়ে আনা। আমরা ঘরের ছেলেকে ঘরে রাখতে চাই, কাউকে হারাতে চাই না। ইতোমধ্যে স্থানীয় নেতা ও এমপিদের নিয়ে বর্ধিতসভা করে আমরা এ বার্তাই দিয়েছি।
সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থিতা ঠেকানোর জন্য কাজ চলছে। বিশেষভাবে সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের এ বিষয়ে গভীর মনোনিবেশ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কোনো নেতা বিদ্রোহী প্রার্থীদের উৎসাহিত করলে তার বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়েও জানানো হয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে আমাদের সময়কে বলেন, জেলা থেকে নাম পাঠানো হয়নি অথচ সেই ব্যক্তি মনোনয়ন পেয়েছেন। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। পাবনা জেলার একজন নেতা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও কেন অভিযোগ আমলে নেওয়া হচ্ছে না এটা রহস্যই থেকে গেল। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের বক্তব্যও একই। তিনি বলেন, বিতর্কিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলের কিছু নেতা মরিয়া। ফতুল্লায় একজন খূমিদস্যু ও হত্যা মামলার আসামি মনোনয়ন পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, কোনো কোনো ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। সিরাজগঞ্জের ১৭ ইউপিতে ৩৫ জন বিদ্রোহী, পাবনার ১০ ইউপিতে ৩৩ জন, নেত্রকোনার ২৬ ইউপিতে ৩৬ জন, নরসিংদীর ১২ ইউপিতে ৩২ জন এবং সুনামগঞ্জের ১৯টিতে ৩৩ জন বিদ্রোহী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর বাইরে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে প্রতিপক্ষ না থাকা এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী থাকায় কিছু জায়গায় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রেখেছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, স্থানীয় এমপিদের কারণে তৃণমূলে নেতারা কোণঠাসা। এর প্রমাণ এবারের স্থানীয় নির্বাচনে আরও স্পষ্ট। হয় তারা বিতর্কিত প্রার্থীকে মদদ দিচ্ছেন অথবা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। স্বচ্ছ প্রার্থীর পক্ষে থাকা এমপির সংখ্যা খুবই কম। উদাহরণ হিসেবে যশোর, শেরপুর, রাজশাহী ও পাবনায় এমপিদের আত্মীয়স্বজনরাও মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ অক্টোবর, প্রতীক বরাদ্দ ২৭ অক্টোবর।