শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন

জাফলং খুবলে খাচ্ছে পাথরখেকোরা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২১
  • ১০৩ বার

ভোলাগঞ্জ কোয়ারি ‘ডেটলক’। লোভাছড়াও বন্ধ। অদৃশ্য শক্তিবলে কেবল খোলা জাফলং। এক দশক ধরে কোয়ারি লিজে নেই। এরপরও জাফলংয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকার বালু লুটের পর পাথর লুটের মহোৎসব শুরু করেছে চিহ্নিত পাথরখেকোরা। সম্প্রতি জাফলংয়ে বিবদমান দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়ে পাথরখেকো ফয়জুল ও তার সহযোগীরা পলাতক থাকলেও থেমে নেই জাফলংয়ের পাথর লুটপাট। স্থানীয় বিট পুলিশের সহযোগিতায় প্রতিদিন ২০-২৫ লাখ টাকার পাথর লুটপাট করা হচ্ছে। জাফলংয়ের জুমপাড়।

শ্রমিকদের ডেডস্পট এটি। দিনে ভেসে উঠে
তাণ্ডবের চিত্র। আর রাতভর চলে বেপরোয়া লুটপাট। বোমা মেশিনের তাণ্ডবে মানচিত্র বদলে ফেলা হচ্ছে জাফলংয়ের। আর শব্দ দূষণে এলাকার মানুষের ঘুম হারাম। পুলিশে নালিশ করলে উল্টো এলাকার মানুষকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। মামলায় করা হচ্ছে আসামি। সিলেটে এখন তুমুল আলোচনায় জাফলং। কারণ পাথর ও বালুখেকো চক্রের সদস্যরা জাফলংয়ের পিয়াইন নদীর পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ জোনে গত ৫ মাসে অন্তত ২০ কোটি টাকার বালু লুটপাট করেছে। এতে করে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়, বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়ায় এবং শতকোটি টাকা ব্যয়ে জাফলং ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ১৫ দিন আগে নয়াবস্তি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইনসান আলী আদালতে মামলা করেছেন। এই মামলা এখন গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের কাছে তদন্তাধীন রয়েছে। এর আগে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি দেয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি। তবে সিলেটের জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বালু লুটপাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বালু লুটপাট বন্ধ হওয়ার কারণে এখন জাফলংয়ে পাথর লুটপাট শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তি এলাকার পিয়াইন নদীর তীরবর্তী এলাকায় রাতের আঁধারে বোমা মেশিন দিয়ে প্রায় কোটি টাকার পাথর লুটপাট করা হয়েছে। কান্দুবস্তি ও নয়াবস্তি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন- সন্ধ্যা নামলেই এলাকার চিহ্নিত পাথরখেকো সুমন ও ফয়জুলের নেতৃত্বে পিয়াইন নদী তীরবর্তী এলাকায় অর্ধশতাধিক বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হয়। এ কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় বড় বড় গর্ত করা হয়েছে। এসব গর্ত থেকে বালু সঙ্গে পাথর তোলা হচ্ছে। আর রাতের মধ্যে ট্রাক দিয়ে এসব বালু ও পাথর এনে মজুত করা হচ্ছে মেলার মাঠের নিকটবর্তী জুমপাড় এলাকায়। দিনের বেলা শ্রমিকরা চালনির মাধ্যমে বালু ও পাথর আলাদা করার কাজে ব্যস্ত থাকছেন। মেলার মাঠ এলাকায় পাথরখেকোরা বসতি গড়ে তুলেছে। জাফলংয়ের জুমপাড়। শ্রমিকদের মৃত্যুপুরী। জুমের আড়ালে পিয়াইনের তীরবর্তী ওই এলাকার অবস্থান। আগে ওই এলাকায় ছিল সারি সারি পানের জুম। খাসিয়ারা বাগান করে পান চাষ করতেন। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে খাসিয়ারা আর নেই ওখানে। এখন সেটি চলে গেছে চিহ্নিত পাথরখেকো সুমন ও ফয়জুলের দখলে। তারা গত ৫-৬ বছর ধরে পান বাগান ধ্বংস করে দিয়ে ওই এলাকায় ৫০-৬০ ফুট গর্ত খুঁড়ে পাথর লুটপাট করেছে। প্রতি বছর এখান থেকে ৫-৬ কোটি টাকার পাথর লুটপাট করা হয়েছে। এরই গেল কয়েক বছরের মধ্যে অন্তত ১০ জন শ্রমিক পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে মাটিচাপায় মারা গেছে। পাথরখেকোরা শ্রমিক মৃত্যুর বিষয়টিও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায়। এবার আরও বেপরোয়া পাথরখেকোরা। বালু বন্ধ হতে না হতেই তারা পাথর লুটপাট শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে জুমপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে; সারি সারি গর্ত। এক্সেভেটর দিয়ে মাটি খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করছে শ্রমিকরা। শতাধিক শ্রমিকও রয়েছে ওই এলাকায়। তারা অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- বালু বন্ধ হওয়ার পর পাথরখেকোরা নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তি এবং জুমপাড় এলাকার নজর দিয়েছে। তারা রাতের আঁধারে বোমা মেশিন দিয়ে কোটি টাকার পাথর লুট করছে। বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করার কারণে রাতে এলাকার মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। রাতের বেলা পাথর তোলা হলেও গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করেন তারা। পুলিশের বিট কর্মকর্তা এসআই লিটন ও এএসআই মারুফের সঙ্গে আঁতাত করেই পাথরখেকোরা রাতের আঁধারে বোমা মেশিন চালাচ্ছে। সহকারী বিট কর্মকর্তা এএসআই মারুফ পরিবার নিয়ে জাফলং বাজারে বসবাস করলেও তিনি এসব দেখেও না দেখার ভান করছেন। আর এলাকার মানুষের জমি দখল করে পাথর লুটপাটের প্রতিবাদ জানালে মামলা দিয়ে বিপর্যস্ত করে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এলাকার মানুষ। তারা জানান, কান্দুবস্তি ও নয়াবস্তি এলাকা এক দশক আগেও ছিল শান্তিপূর্ণ এলাকা। যখন থেকে ছাতকের আলাউদ্দিন ও বিশ্বনাথী ফয়জুলের নেতৃত্বে পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে তখন থেকেই মামলার পর মামলায় বিপর্যস্ত হয়েছে নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তির মানুষ। তোপের মুখে আলাউদ্দিন জাফলং ছাড়লেও তার অন্যতম সহযোগী ফয়জুল জাফলংয়ে থেকে শাসন করছিল। গত এক মাসে দুই গ্রামে পাল্টাপাল্টি ৬-৭টি মামলা করা হয়েছে জানান এলাকার মানুষ। বর্তমানে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান তারা। গোয়াইনঘাট থানার ওসি পরিমল চন্দ্র দেব জানিয়েছেন; বালু ও পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। লুটপাট বন্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেহেতু সীমান্ত এলাকা; এ কারণে বিজিবিকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com