শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৩ অপরাহ্ন

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী, তার কণ্ঠ ও বাঁশির সুরে হৃদয় কাড়ে সবার

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১
  • ২০৭ বার

বারী সিদ্দিকী। যে কয়টি গান কণ্ঠে তুলেছেন তার বেশিরভাগই হয়েছে শ্রোতানন্দিত। তার কণ্ঠে, বাঁশিরও সুরে হৃদয় কেড়েছে সবার। তিনি খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও বংশী বাদক। লোকজ ও মরমী ধারার এই গায়ক উপহার দিয়েছেন অসংখ্য গান। ‘শুয়া চান পাখি, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমি একটা জিন্দা লাশ’, ‘রজনী’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ প্রভৃতি গানগুলো বাংলা সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছে। আজ এই প্রখ্যাত সংগীতশিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

বয়স যখন তিন কিংবা চার- সেই বয়সেই মায়ের কাছে তার প্রথম শোনা গান ছিল- ‘শ্বাশুড়িরেও কইয়ো গিয়া’। সেই গানের সুরই বারীর মনে গেঁথে যায়। সৌখিন গানের পরিবার ছিল তার। বারীর নানা শেখ সাবির সরদ বাজাতেন। আর তার নানির কাছ থেকেই মা গান শিখেছিলেন টুকটাক। বারীর বয়স যখন পাঁচ তখন বড় ভাইয়ের বাঁশিতে ফু দেয়া তার মধ্যে অন্যরকম আগ্রহের সৃষ্টি করে বাঁশি শেখার প্রতি। বারীর নানারা দুই ভাই ছিলেন। তার নানার একটা সংগীতের দল ছিল। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পøিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের মিশ্রণে গান গাওয়া শুরু করেন বারী সিদ্দিকী।

মায়ের কাছ থেকে জীবনে তিনি প্রথম যে গানটির সুর বাঁশিতে তুলে নিয়েছিলেন সেই সুরটিই তিনি পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেছিলেন। সেটি ছিল শ্যাম বিচ্ছেদের একটি সুর। মুখটা ছিল এরকম- ‘আষ্ট আঙুল বাঁশের বাঁশি/মধ্যে মধ্যে ছ্যাদা/নাম ধরিয়া ডাকে বাঁশি/ কলঙ্কিনী রাধা।

বারী সিদ্দিকী যখন হাইস্কুলে পড়তেন তখন থেকেই তিনি নেত্রকোনা শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীত শেখা শুরু করেন । তার সংগীতের ওস্তাদ ছিলেন শ্রী গোপাল দত্ত। ওই সময় বড় দুই ভাই এবং রফিক মাহমুদ, বিপুল চৌধুরী, দুলাল দত্তনবীশ, হযরত আলীর কাছ থেকেও গানে সহযোগিতা পেয়েছেন। ছোটবেলায় মূলত সংগীতশিল্পী হওয়ারই স্বপ্ন ছিল বারী সিদ্দিকীর।

বারী সিদ্দিকীর সংগীতে প্রথম ওস্তাদ গোপাল দত্ত। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালের দিকে ঢাকায় শুদ্ধ সংগীত প্রসারে একটি অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় ওস্তাদ আমিনুর রহমানের কাছে। তিনি বিমানের পাইলট ছিলেন। ভারতবর্ষের বিখ্যাত বংশীবাদক ওস্তাদ পান্না লাল ঘোষের শিষ্য ছিলেন। সেই আমিনুর রহমানের বাড়িতে থেকেই বাঁশিতে তালিম নিতে থাকেন দিনের পর দিন। সেখান থেকেই তিনি ওস্তাদ তাগাল ব্রাদার্স, পøিত দেবেন্দ মুৎসুদ্দী, ওস্তাদ আয়েফ আলী খান মিনকারীর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন।

পøিত বিজি কারনাডের কাছেও বাঁশি শিখতে তিনি পুনেতে গিয়েছিলেন। এভাবে একসময় তিনি শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বাংলাদেশ রেডিও, টেলিভিশনসহ সম্মিলিত একটি যন্ত্রসংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এর পরপরই তিনি দক্ষিণ এশীয় সার্ক ফেস্টিভ্যালে যান বাঁশি বাজাতে ।

হুমায়ূন আহমেদের এক জš§দিনের অনুষ্ঠানে তার বাসায় যান বাঁশি বাজাতে। সেখানে বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি গানও করেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদ তাকে আরও গান গাইতে বলেন অনুষ্ঠানে। গান শুনে মুগ্ধ হন হুমায়ূন আহমেদ। ১৯৯৫ সালে বিটিভির ‘রং-এর বারৈ’ অনুষ্ঠানে প্রথম গান করেন বারী সিদ্দিকী। এর পরপরই হুমায়ূন আহমেদ তাকে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে গান গাইতে বলেন।

চলচ্চিত্রের গানে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর পরই বাজারে তার দুটি একক অ্যালবাম আসে। একটি ‘দুঃখ রইলো মনে’ এবং অন্যটি ‘অপরাধী হইলেও আমি তোর’। দুটি অ্যালবামই লুফে নেন শ্রোতারা। বারী সিদ্দিকীর প্রকাশিত অন্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘সরলা’, ‘ভাবের দেশে চলো’, ‘সাদা রুমাল’, ‘মাটির মালিকানা’, ‘মাটির দেহ’, ‘মনে বড় জ্বালা’, ‘প্রেমের উৎসব’, ‘ভালোবাসার বসত বাড়ি’, ‘নিলুয়া বাতাস’ ও ‘দুঃখ দিলে দুঃখ পাবি’।

উকিল মুন্সীর লেখা গান জনগণের কাছাকাছি নিয়ে আসেন বারী সিদ্দিকী। তিনি নিজেকে একজন বংশীবাদক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। বংশীবাদক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি বাঁশি বাজিয়ে শ্রোতা-দর্শককে মুগ্ধ করেছেন। ১৯৯৯ সালে ফ্রান্সে ওয়ার্ল্ড ফ্লুট সম্মেলনে এই উপমহাদেশ থেকে তিনিই প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। এটা ছিল বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট অর্জন। গায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার আগের দুই দশক বারী সিদ্দিকীর ছিল বংশীবাদক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি।

১৯৮০ সালে পেশাগতভাবে বাঁশি বাজানো শুরু করেন তিনি। ১৯৮৬ সালে প্রথম বিটিভিতে ‘সৃজন’ অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান। কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com