চলতি বছরে থেকে দেশে ‘শস্য বীমা’ চালু করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এখন আগামী বছরে এই বীমা চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য এই বীমার আওতায় তাদের নিয়ে আসা হবে। প্রাথমিকভাবে হাওড় বেষ্টিত সাত জেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে শস্য বীমা চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে পুরো দেশের কৃষকদের এর আওতায় আনা হবে। শস্য বীমার প্রিমিয়ামের অর্ধেক সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে, বাকি অর্ধেকটা কৃষকদের কাছ থেকে নেয়া হবে। অর্থমন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে এই বীমা চালু করার পুরো প্রস্তুতি শুরু করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
চলতি বছরে কেন শস্য বীমা চালু করা সম্ভব হলো সে বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছর থেকেই শস্য বীমা চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে মতানৈক্যের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এখন সে মতভেদ দৃশত কেটে গেছে। ফলে আশা করা যায় আগামী বছরের মাঝামাঝিতে পরীক্ষামূলকভাবে হলেও দেশে শস্য বীমা চালু করা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, এর আগে এ বছরের আগস্ট মাসে শস্য বীমার ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি ধারণাপত্র জমা দেয় সাধারণ বীমা করপোরেশন। ধারণাপত্রে ২০০৪, ২০১০, ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির বিভিন্ন বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বোরো ধান তোলার ১৫-২০ দিন আগে আকস্মিক বন্যায় এসব এলাকার সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে যায়। ২০১৭ সালের বন্যায় হাওড় এলাকার সাতটি জেলার মোট উৎপাদিত ৫২.৫ লাখ টন ফসলে ক্ষতি হয় ৩৪৮ কোটি ছয় লাখ টাকা।
সাধারণ বীমা করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে শস্য বীমার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে সুফল পাওয়া যাবে বেশি। তাই বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোকেও এর সাথে যুক্ত করার সুপারিশ করেছে সাধারণ বীমা করপোরেশন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় সাধারণ বীমা করপোরেশনের ‘আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমা’ শীর্ষক একটি পাইলট প্রকল্প রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ পাইলট প্রকল্পের মতোই শস্য বীমা চালু করা হতে পারে। প্রথম দিকে দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি হাওড় এলাকায় এটি চালু করা হবে। অর্থাৎ এটিও হবে একটি পাইলট প্রকল্প। এডিবির পাইলট প্রকল্পটিতে কৃষকদের ক্ষতিপূরণের এক তৃতীয়াংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দিয়েছে। এডিবির ‘পাইলট প্রজেক্ট অন ওয়েদার ইনডেক্স বেইসড ক্রপ ইন্স্যুরেন্স বা ডব্লিউআইবিসিআই) প্রকল্পের আওতায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের তিন জেলার ৯ হাজার ৬৪১ জনকে সুবিধা দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে প্রায় ৬৭ লাখ টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদকালীন সময়ে প্রিমিয়ামের টাকা আদায়ের পরিমাণ প্রায় ৪৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এডিবির এ প্রকল্পের মতো এই বীমায় প্রিমিয়ামের একটি অংশ পরিশোধ করবে সরকার। আর বাকি অংশ দেবে বীমাগ্রহীতা বা কৃষক। ভারতেও এ ধরনের বীমা রয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকার যৌথভাবে শস্য বীমার ৮০ শতাংশ প্রিমিয়াম ভর্তুকি হিসেবে দিয়ে থাকে। চলতি অর্থ বছরের বাজেটে নদী ভাঙ্গনকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের পুনর্বাসনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শস্য বীমা চালু হলে এ খাত থেকে ভর্তুকির টাকা দেয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বীমা সংক্রান্ত যত আইন, বিধিবিধান রয়েছে তা অগ্নি, নৌ, মোটর ও জীবন বীমা পরিচালনার জন্য করা হয়েছে। শস্য বীমার জন্য কোনো পৃথক আইন নেই। এক্ষেত্রে একটি পৃথক আইন করা হতে পারে। কৃষকদের বীমার প্রতি আস্থা তৈরিতে কৃষি ব্যাংক, এনজিও ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে সম্পৃক্ত করা হতে পারে। এসব সংস্থা ও ব্যাংক কৃষকদের ঋণের শর্তে শস্য বীমার প্রিমিয়াম আদায় করবে। এতে ঋণ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার পাশাপাশি কৃষকদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম আদায় সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে যেসব কৃষক এসব সংস্থা কিংবা ব্যাংকের সাথে জড়িত নয় তাদেরকেও শস্য বীমার আওতায় আনা হবে।