শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫০ অপরাহ্ন

বাণিজ্যমেলা: ২৮ দিনে বিক্রি তিন কোটি ১০ লাখ টাকার টিকিট

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২২
  • ৯৭ বার

দেরিতে হলেও শেষদিকে এসে জমে উঠেছে বাণিজ্যমেলা। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যাচ্ছে উপচেপড়া ভিড়। শেষ মুহূর্তে ক্রেতা টানতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বিক্রেতারাও। মেলাজুড়ে তাই বিভিন্ন ছাড় ও অফারের ছড়াছড়ি। একটি কিনলে একটি ফ্রি, বান্ডেল অফার, প্যাকেজ পণ্যে বড় ছাড়, পণ্য কিনলেই গিফট, স্ক্র্যাচকার্ডসহ অফারের হিড়িক পড়েছে দেশি-বিদেশি প্যাভিলিয়নগুলোতে। সেই সঙ্গে পণ্য কেনায় পাওয়া যাচ্ছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। তবু ব্যবসায়ীদের আক্ষেপ আশানুরূপ বিক্রি বাড়ছে না। মেলায় কেনাকাটার চেয়ে ঘোরাঘুরি আর ছবি তোলাতেই নাকি ব্যস্ত দর্শনার্থীরা।

শুরুতে ব্লেজারে ২০ শতাংশ ছাড় দিলেও এখন ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বিক্রি করছেন মো. জিন ইসলাম। মেলার ব্লেজারের স্টল ‘সালভিলে-র’-এর এ বিক্রেতা জানান, বাণিজ্যমেলার বিগত নয়টি আসরে অংশ নিয়েও এমন মন্দা বাণিজ্য দেখেননি তিনি। শেষ মুহূর্তে এসে অর্ধেক দামে পণ্য ছাড়ছেন। তিনি বলেন, এক হাজার ৩শ টাকায় বিক্রি করেও ব্লেজারের ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এক হাজার টাকায় ডিজাইনার কোটি ছাড়ছি। তাও ক্রেতা পাচ্ছি না। একদিকে নতুন জায়গা, অন্যদিকে করোনা সব মিলিয়ে ব্যবসা এবার অনেক খারাপ।

পাকিস্তানি আসবাবের স্টল ‘তাওয়াক্কাল ফার্নিচারের’ বিক্রেতা মোহাম্মদ লান নাভীও বলেন, অনেক টাকা বিনিয়োগ ও কষ্ট করে মেলায় অংশ নিয়ে খুব একটা লাভ করতে পারিনি। শুরুর দিকে ১০ শতাংশ ছাড় দিয়েছি। এক সপ্তাহ হলো ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। তার পরও ক্রেতা পাচ্ছি না। মেলায় সবাই কেবল ঘোরাঘুরি করছে। পণ্য কিনছেন কম।

গতকাল সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিকালের পরে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করেন প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোর বিক্রয়কর্মীরা। এদিন মেলাজুড়ে ছিল ছাড় ও অফারের হিড়িক। কোরিয়ান ‘লোটে’, ইনডোনেশিয়ান ‘নিসিন’, দেশীয় প্রসাধনী ‘রঙ্গণ হারবাল’সহ আরও অনেকগুলো স্টলে চলছে ‘বাই ওয়ান- গেট ওয়ান’ অফার। কোথাও কোথাও পাওয়া যাচ্ছে ‘বাই টু- গেট ওয়ান’ অফার। প্রাণ ও ভাইয়া ডেইরি মিল্কসহ বেশ কয়েকটি খাবারের স্টলগুলোয় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন প্যাকেজ পণ্য বা বক্স সেল। ওয়ালটন, ভিশন, মিনিস্টারসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পণ্যেও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন হারে ছাড়। ব্লেজার ও থ্রি-পিস, বোরকাতে পাওয়া যাচ্ছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। এ ছাড়া মাইলোসহ বেশ কয়েকটি স্টলে রয়েছে বিভিন্ন ‘একটিভিটি ও গেমস’। যেগুলো জিতলে থাকছে আকর্ষণীয় উপহার। অনেক প্যাভিলিয়নে কেনাকাটায় বিকাশ পেমেন্টে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন হারে ‘ক্যাশ ব্যাক’ সুবিধা।

এতসব ছাড় ও অফারেও পণ্য বিক্রি বাড়েনি বলে আক্ষেপ জানিয়েছেন মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা। মেলার মিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল প্যাভিলিয়নের পোশাকের স্টল ‘স্টাইল ইনডেক্স’-এর কর্ণধার সুমন আশারাফ বলেন, এ নিয়ে সাত বছরের মতো মেলায় অংশ নিলাম। কিন্তু এবারই দেখলাম ভিন্ন চিত্র। এবার যারা মেলায় আসছেন তাদের বেশিরভাগই আশপাশের জেলাগুলো থেকে এসেছেন। তারা মূলত মেলা দেখতে এসেছেন। তারা পণ্য কিনছেন কম। অথচ মেলার কেনাকাটার বছরজুড়ে ঢাকার যারা টাকা জমিয়ে রাখেন, তারা এবার মেলায় আসছেন কম। কারণ, রাজধানী থেকে মেলার লোকেশনের দূরত্ব ও যাতায়াতে ভোগান্তি। এতে আমরা ক্রেতা হারিয়েছি। ব্যবসাও কম হয়েছে।

‘মাইলো’ প্যাভিলিয়নের প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ আজিজুল হকও বলেন, এবার দর্শনার্থী বেশি, ক্রেতা কম। রাজধানী থেকে কম মানুষ আসছেন। একে দূরত্ব, অন্যদিকে গণপরিবহন সংকট। এ ছাড়া সন্ধ্যার পরই মেলা প্রাঙ্গণ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কারণ রাজধানীর শেষ প্রান্তে হওয়ায় অনেকেই এখান থেকে রাতে বাড়ি ফিরতে নিরাপদ বোধ করছেন না। তবু ১৫ তারিখের পর ভিড় বেড়েছে। ক্রেতা-দর্শনার্থীরা আমাদের একটিভিটিসগুলোতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ততটাও খারাপ সময় যায়নি আমাদের।

আইসক্রিমের প্যাভিলিয়ন ‘স্যাভয়’-এর সেলস সাপোর্ট অফিসার আবদুর রহমান বলেন, আমরা শুরুতে ক্রেতা পাইনি। শেষদিকে এসে ক্রেতা পেয়েছি। তবে তা মন্দের ভালো। এতে মেলার সার্থকতা মিলবে। মেলায় যারা আসছেন তারা মূলত ঘোরাঘুরি আর ছবি তোলায় বেশি ব্যস্ত। কেনাকাটা কম করছেন।

একই কথা জানালেন নাদিয়া ফানির্চারের অ্যাসিস্টেন্ট জেনারেল ম্যানেজার (সেলস্) মো. হেদায়েত উল্লাহ, রিগাল এম্পোরিয়ামের ম্যানেজার (সেলস্) রিপন কুমার ও মিনিস্টার কোম্পানির করপোরেট সেলের ডিভিশনাল ম্যানেজার এফএম মাহফুজ ইসলামও।

এদিকে মেলার ইজারাদার ও মেসার্স মীর ব্রাদার্সের অপারেশনাল ম্যানেজার ছায়েদুর রহমান বাবু জানান, মেলার ২৮ দিনে মোট ৩ কোটি ১০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। আমাদের সময়কে বাবু বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ দর্শনার্থীদের কাছে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। তবে আমরা আরও প্রত্যাশা করেছিলাম। ওমিক্রন রোধে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ ও করোনা আতঙ্কে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। এ কারণে টিকিটও বিক্রি কম হয়েছে। এ বছরের সর্বোচ্চ টিকিট বিক্রি হয়েছে ১৪ জানুয়ারি শুক্রবার। ওই দিন সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আরোপিত বিধিনিষেধে বাণিজ্যমেলা বন্ধের বিষয়ে কিছু বলা নেই। তাই মেলা চলবে। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে মেলা কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি শেষ হবে মেলা।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের চিরচেনা ঠিকানা ছেড়ে পূর্বাচলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব স্থানে অর্থাৎ বিবিসিএফইসি-তে চলছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। গত ১ জানুয়ারি মেলার ২৬তম এ আসরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলায় বাইরে ও ভেতরে মোট ২২৫টি স্টল রয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল ও ১৫টি ফুড স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তুরস্ক, ইরান, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ১১টি স্টল রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com