শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:০২ অপরাহ্ন

বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ ডেটা সেন্টার বাংলাদেশের

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১১৬ বার

বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ ডেটা সেন্টার এখন বাংলাদেশে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের হাইটেক সিটিতে ৭ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে এই জাতীয় তথ্যভাণ্ডার বা ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণে এখন আর বিদেশের ডেটা সেন্টারের দ্বারস্থ হতে হবে না। তথ্যের সুরক্ষায় দরকার হবে না বিদেশি প্রযুক্তিবিদ। এরই মধ্যে এই ডেটা সেন্টারে নিজেদের তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে বছরে সাশ্রয় হচ্ছে ৩৫৩ কোটি টাকা। এমনকি হাতছানি আছে অন্যান্য দেশের তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের। ইতোমধ্যে উচ্চমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কারণে আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠান এখন এই তথ্যভাণ্ডার ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্ব^র আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা করেন। সেই রূপরেখা বাস্তবায়নেই গাজীপুরের হাইটেক সিটিতে নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক মানের এই জাতীয় তথ্যভাÐার। দেশের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিরাপদে সংরক্ষণ ও নিরবচ্ছিন্ন গুণগত মানসম্পন্ন ই-সেবা নিশ্চিতে এই প্রতিষ্ঠান এখন গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৬০০ কোটি টাকারও বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, নির্বাচন কমিশন, ভ‚মি জরিপ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, এটুআই (এক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য-উপাত্ত এরই মধ্যে এই তথ্যভাণ্ডারের আওতায় এসেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাতীয় তথ্যভাণ্ডার নির্মাণের কারণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণের ক্ষমতা বেড়েছে। পাশাপাশি নিশ্চিত হয়েছে তথ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের তথ্য সংরক্ষণের জন্য বড় পরিসরে ডেটা সেন্টারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার

কাউন্সিল ‘ফোর টিয়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার’ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করে। জনপ্রশাসনে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কাজের দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানো, তথ্য সংরক্ষণ ও জনগণের দোরগোড়ায় ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিতেই সরকারের এই উদ্যোগ। এতে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্তগুলোর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি কার্যালয়ের আইসিটি কার্যক্রম সরাসরি যুক্ত থাকবে। দেশে আধুনিক ডিজিটাল কার্যক্রম, সেবা প্রদান ও ই-বিজনেসের মূল ভিত্তি এই ডেটা সেন্টার।

সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, এ ডেটা সেন্টারকে টেকনিক্যাল ভাষায় বলা হচ্ছে ‘হার্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ’। ক্লাউড কম্পিউটিং ও জি-ক্লাউড প্রযুক্তি থাকা ডেটা সেন্টারগুলোর মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্থাপনা এটি। যার ডাউন টাইম শূন্যের কোঠায়। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আপটাইম ইনস্টিটিউট থেকে টায়ার সার্টিফিকেশন অব অপারেশনাল সাসটেইনেবিলিটির সনদ পেয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তর ডেটা সেন্টারের স্বীকৃতিও এসেছে।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৯ সালে মাত্র ১০ পেটাবাইট তথ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা নিয়ে শুরু হয় জাতীয় তথ্যভাÐার। এখন প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংরক্ষণ সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ পেটাবাইট। এই ডেটা সেন্টারে আছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ৬০৪টি র‌্যাক, ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য নিজস্ব ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন, জেনারেটর, উচ্চগতিসম্পন্ন ডেটা কানেকটিভিটি, ইন্টারনেট সংযোগ, অত্যাধুনিক রাউটার, সুইচ, ফায়ারওয়াল, স্টোরেজ সার্ভার, ভার্চুয়াল মেশিনসহ প্রিসিশন এয়ার কন্ডিশন সিস্টেমস, অনলাইন ৮ মেগাওয়াট ইউপিএস সিস্টেম, ইনটেলিজেন্ট বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা, ক্লাউডের জন্য বিশেষ সফটওয়্যার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক ও সিকিউরিটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মতো নানা প্রযুক্তি।

ডেটা সেন্টার কোম্পানির সচিব একেএম লুৎফুল কবীর বলেন, জাতীয় ডাটা সেন্টার উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় এখন আর তথ্য সংরক্ষণের জন্য বিদেশে যেতে হয় না। বাংলাদেশে এত বড় ডাটা সেন্টার দেখে বিদেশিরাই এখানে তথ্য রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বর্তমানে ডেটা সেন্টারে ওরাকল পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আগামীতে জি ক্লাউড স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই জি ক্লাউড স্থাপিত হলে তথ্য আরও নিরাপদে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। বর্তমানে দেশে নিজেদের তথ্য সংরক্ষণের কারণে বছরে ৩৫৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে এটি বেড়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি সাশ্রয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com