বাগদাদ বিমানবন্দরে মার্কিন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দিয়েছে নানা দেশ।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেবে। মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, জেনালের কাসেমকে হত্যার ঘটনাকে তারা ‘এক হঠকারী পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন।
রুশ সংসদের উচ্চকক্ষের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির প্রধান কন্সট্যান্টাইন কোসাচেভ মার্কিন বিমান হামলাটিকে ‘এক ভুল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যা বুমেরাং হিসেবে দেখা দেবে। শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, এ পদক্ষেপ ইরানের পারমাণবিক চুক্তি ঘিরে শেষ আশাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন তারা হয়তো আগে পরিকল্পনা করে না থাকলেও এবার পারমাণবিক অস্ত্র বানানো জোরদার করতে পারে।
চীন বলছে তারা এ ঘটনায় ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। তারা সব পক্ষ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘শান্ত থাকা ও সংযম দেখানোর’ আহ্বান জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেনারেল সোয়াং শুক্রবার বলেন, চীন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পাশাপাশি ইরাকের স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
মুখপাত্র আরো বলেন যে চীন সবসময় আন্তর্জাতিক সম্পর্কে শক্তি প্রয়োগের বিপক্ষে। সেই সাথে তিনি উত্তেজনা আরো বাড়ার বিষয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করেন।
ইরাকের সংসদের ডেপুটি স্পিকার হাসান আল কাববি জানিয়েছেন, বাগদাদে মার্কিন বিমান হামলায় ইরানের জেনালের ও ইরাকি কর্মকর্তাদের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে আলোচনার জন্য শনিবার সংসদের জরুরি অধিবেশন বসবে।
তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বেপরোয়া ও ঔদ্ধত্য আচরণের ইতি টানার। ইরাকের ভেতরে মার্কিন উপস্থিতির অবসান ঘটানোর জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে শনিবারের অধিবেশনটি নিবেদিত থাকবে।
বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহাদি এ জরুরি অধিবেশন আহ্বান করে বলেন, ইরাকে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইরাকি বাহিনীগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। শুক্রবারের হামলাটি এ শর্তের লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গ্রিস সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসছেন। ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত গোলান মালভূমির মাউন্ট হারমনে একটি স্কি রিসোর্ট বন্ধ করতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আদেশ দিয়েছে। দেশটি তাৎক্ষণিকভাবে আর কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়নি।
বিরোধী ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টির নেতা ইয়ার লাপিড জেনারেল কাসেম হত্যার ঘটনার প্রশংসা করে বলেছেন, তার যা প্রাপ্য ছিল তিনি ঠিক তাই পেয়েছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি তার দেশের রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল কাসেমকে যুক্তরাষ্ট্রের হত্যার ঘটনাকে এক ‘জঘন্য অপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রুহানি শুক্রবার এক টুইটে জানান, মহান জাতি ইরান বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন বিমান হামলার প্রতিশোধ নেবে। মার্কিন বাড়াবাড়ি প্রতিরোধের পথ চলমান থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খোমেনি সতর্কবার্তা দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠোর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে। আর দেশটির মন্ত্রিসভার মুখপাত্র আলি রাব্বানি এক টুইটে বলেছেন, ইরানের কঠোর জবাব খুব বেশি দূরে নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের ‘অবিলম্বে’ ইরাক ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইরাক ও ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছে। এতে আরও বলা হয় যে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাস প্রাঙ্গণে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের আক্রমণের কারণে সব কনস্যুলার সেবা স্থগিত করা হয়েছে এবং সেখানে মার্কিন নাগরিকদের না আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সিরিয়া এ ঘটনাকে ‘বিশ্বাসঘাতক আমেরিকার অপরাধমূলক আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলে, ইরাকের অস্থিতিশীলতায় যে যুক্তরাষ্ট্র দায়ী তা এ হামলা পুনরায় প্রমাণ করেছে। এপি/ইউএনবি।