ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বিমান বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় ইরানি শীর্ষ সেনা অফিসার নিহত হওয়ার ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কয়েক দিন ধরেই ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। কিন্তু জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর পারস্য উপসাগরে এখন সত্যিই রণদাদামা বেজে গেছে। ইরান বলছে, তারা এই হামলার জবাব দেবে। বলা হয়েছে ভয়ঙ্কর জবাব পাবে ওয়াশিংটন। এর পরেই প্রশ্ন কী করতে পারে বিশ্বের অন্যতম তেল সমৃদ্ধ তথা চরম মার্কিন বিরোধী লবির দেশটি।
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া
১. জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম দুই মার্কিন বিরোধী দেশ রাশিয়া ও চীনকে দিয়ে চরম হুঁশিয়ারি দেওয়া। ইতিমধ্যে মস্কোর পক্ষ থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে।
২. মার্কিন বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর প্রতি হুঁশিয়ারি। বলা হবে, আমেরিকার পক্ষে থাকলে তেল মিলবে না।
৩. শিয়া মুসলিম বহুল দেশ হলেও অন্যান্য ইসলামি রাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্রোহের ভাব জাগিয়ে তোলা।
৪. বৈরি সম্পর্কের বেড়া পেরিয়ে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ দেশগুলোর কাছে প্রচুর তেল ব্যবসার কূটনৈতিক প্রস্তাব দেয়া। সৌদি তেল অর্থনীতিতে ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা।
বিশ্ব তেল বাণিজ্য বানচালের হুমকি
কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি ইরান যা পারে তা হলো বিশ্ব তেল রফতানি বাণিজ্য বানচাল করার হুমকি। তেহরানের পক্ষ থেকে এমন অবস্থানের হুঁশিয়ারি নতুন কিছু না। কারণ, বিখ্যাত পারস্য উপসাগরীয় এলাকার দুই পারে ছড়িয়ে বিশ্বের সর্বাধিক আলোচিত খনিজ তেলের ভাণ্ডারটি। তরল সোনার এই প্রাচুর্য আরব দুনিয়াকে প্রবল আর্থিক ক্ষমতা দিয়েছে। বিশ্বের সব দেশই কম বেশি এই অঞ্চলের উপর নির্ভরশীল।
হরমুজ ঘিরে হরেক কূটনীতি
এই পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরের মধ্য এলাকাটি এক জটিল বাঁকা নৌপথ। এটিই বিশ্ব বিখ্যাত হরমুজ প্রণালী বা পারস্য প্রণালী। এই নৌপথের একদিকটি সম্পূর্ণ ইরানের কব্জায়। আর অন্যপারে রয়েছে সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলো যথা ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন। তবে রাশিয়ার অস্ত্র কেনার বিষয়ে ছোট্ট দেশ কাতারের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক তেমন ভালো নয়। আর রুশরা ইরানের সঙ্গেই মাখামাখি করছে বেশি।
এই ভৌগোলিক পরিসীমায় ছড়ানো হরমুজ প্রণালী-তে ইরানি নৌবাহিনীর প্রবল দাপট। মধ্য প্রাচ্যের চালু কথা, হরমুজের চাবি নাকি তেহরানে রাখা আছে। বিশাল উপকূলীয় সুবিধার কারণে, হরমুজ দিয়ে তেলবাহী জাহাজ চলাচল ইরান সরকার বন্ধ করলে তার ধাক্কা লাগবে মার্কিন ঘনিষ্ঠ আরবে। তখন সৌদি চাপ পড়বে ওয়াশিংটনের উপর। এর জেরে বিশ্ব তেল বাণিজ্যে প্রবল ধাক্কা লাগবে। বলতে গেলে হরমুজের ভৌগোলিক অবস্থান ইরানকে প্রভুত সুবিধা দেবে। এমন আশঙ্কা, সৌদি আরবের বিশ্ব তেল বাণিজ্যে ধাক্কা দিতেই ইরান কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে। প্রকারন্তরে সেটাই তেহরানের হুঁশিয়ারি । মার্কিন এয়ারস্ট্রাইকের পর থেকেই তোলপাড় গোটা বিশ্বের রাজনীতি থেকে অর্থনীতি। বাড়ছে তেলের দাম, পড়ছে টাকার দাম, কেউ কেউ বলছেন যুদ্ধের ইঙ্গিত।
সূত্র : ওয়েবসাইট