সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন

লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০২২
  • ১২৫ বার

সব মাসের (চন্দ্র মাস) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা রাসূল সা:-এর সুন্নাত। লাইলাতুন নিসফ বা শবেবরাত কেন্দ্রিক রোজা রাখার বিষয়ে কোনো সহিহ হাদিস নেই। এ বিষয়ে কোনো দুর্বল হাদিসও নেই বললে চলে। ইবনে মাজার একটা হাদিসে নিসফে শাবানের পরের দিন রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে তবে হাদিসটি খুবই দুর্বল, সনদটিও জাল পর্যায়ে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল এই হাদিসের রাবিকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। তবে যেকোনো চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ এই তিন দিন রোজা রাখাতে সুন্নাত। কাজেই অন্য মাসের মতো শাবান মাসেও এই তিন দিন রোজা রাখবেন। অনেকে বলবেন হুজুর, অন্য মাসে তো এই সুন্নাত রোজা রাখি না। এতে কোনো সমস্যা নেই। আপনি অন্য মাসে না রাখলেও এই মাসে রাখতে পারবেন। কারণ শাবান মাসে রোজা রাখতে রাসূল সা: বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। কাজেই অন্য মাসের এই তিন দিন যারা রোজা রাখতে পারেন না বা রাখেন নাই তারাও শাবান মাসের এই তিন দিন রোজা রাখতে পারেন। এটা অনেক বরকতময় সুন্নাত রোজা।

শবেবরাত বা নিসফে শাবানকে ঘিরে তিনটি বিষয় আমাদের বোঝা দরকার। প্রথম কথা হলো শাবান মাসের এই বিশেষ রজনীকে ‘শবেবরাত’ বা ‘লাইলাতুল বারায়াত’ বলে ডাকা সুন্নত না। আমরা সুন্নাতকে জানব, মানব, মর্যাদার স্থানে রাখব। সুন্নাতকে পালন করার সময় অন্য কিছুকে মানদণ্ড হিসেবে রাখব না। সমাজে আমরা সবাই সুন্নাতের দাবিদার। তারপরও অনেকে বিশেষ করে যারা সালাত, সাওম পালন করি তারও অনেক সময় সুন্নাতকে দেখেও মুখ আটকে রাখি।

একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, তা হলো- আমরা দ্বীনি পোশাককে শ্রদ্ধা করি। তাই আমাদের কাছে ঈমানের চোর পাগড়ি পরে, জুব্বা গায়ে, টুপি মাথায় দিয়েই আসবে। সে আমাদের এই পছন্দের পোশাক পরিধান করেই আমাদের ধোঁকা দিতে আসবে। অনেক মানুষ দেখবেন সমাজে আছে টুপি, পাগড়ি মাথায় দিয়ে আসছে, নিজের জামা-টুপি সুন্নতি বলে দাবি করছে। তারা কুরআন হাদিস ঘেটে সুন্নতি টুপি-জুব্বা বানিয়েছে কিন্তু কুরআন হাদিস ঘেটে সুন্নতি ইবাদত তারা বানাতে পারেনি। এদের কথা মনে হয়, ‘রাসূল সা: আমাদের দর্জির কাজ তথা শুধু পোশাকের ধরন শেখাতে দুনিয়ায় এসেছেন। আর ইবাদত বন্দেগি পির সাহেব-হুজুরদের কাছ থেকে আমাদের শিখতে হবে।’ নাউজুবিল্লাহ। এটা মূলত পোশাকধারীদের সুন্নাতের নামে প্রতারণা-ধোঁকা। রাসূলের সুন্নাত আমাদের কাছে প্রতিটাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। পোশাকের সুন্নাত রাসূল সা: যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন সেভাবে মানব। আবার ইবাদতের বিষয়ে রাসূল সা: যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন সেভাবে মানব। আমরা রাসূল সা:-এর মতো পাগড়ি মাথায় দেবো আর পির সাহেবের মতো মিলাদ পড়ব এটা একটা ধোঁকাবাজি। আমার সব কিছুই হবে রাসূল সা:-এর মতো। প্রতিটি কাজ আমরা রাসূল সা: ও সাহাবিদের অনুসরণ করেই করব। এখানো অন্য কাউকে অনুসরণ করতে আমরা রাজি না।

সুতরাং ‘শবেবরাত’ বা ‘লাইলাতুল বারায়াত’ শব্দ দু’টা সুন্নাত নয়। কুরআনে এই রাতের নাম কোথাও নেই। হাদিস শরিফে এই রাতের নাম ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’ অর্থ- মধ্য শাবানের রাত। আমরা রাসূল সা:-এর ব্যবহৃত এই শব্দটাই এই রাতের জন্য ব্যবহার করব। কারণ রাসূল সা: ও সাহাবিরা এই রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’ বলেই আখ্যায়িত করেছেন। তাছাড়া তাবেয়ী, তাবেতাবেয়ী, চার ইমামসহ ইসলামের প্রথম চার-পাঁচ শত বছরের মধ্যেই ‘শবেবরাত’ বা ‘লাইলাতুল বারায়াত’ শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায় না। তবে কেউ ‘শবেবরাত’ বললে গুনাহ নেই। কিন্তু কেউ যদি সুন্নাত শব্দ ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবানকে অস্বীকার করে তবে তার ঈমানটা দুর্বল হবে নষ্টও হতে পারে। যেমন- যদি কেউ বলে, ‘সারা জীবন আলেমদের মুখে শুনে আসলাম ‘শবেবরাত’ আর এখন কে কোথা থেকে ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’ বের করেছে। এসব মানি না।’ এভাবে বললে ঈমানের ক্ষতি হবে। কারণ রাসূল সা: যে পদ্ধতিতে কথা বলতেন বা কাজ করতে তা আপনি জানার পরে আপনি উপহাস করেছেন। আপনার যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় আপনি নিজে সত্য অনুসন্ধান করুন। আপনি অনুসন্ধান করে নিজে আমার কথার বাইরে কিছু না পেলে আপনাকে এই সুন্নাত পদ্ধতিটিই মানতে হবে। কোনোভাবেই আপনি সত্যকে উপহাস করতে পারবেন না। সুন্নাত সর্বোচ্চ মর্যাদায় রাখতে হবে। আপনি মনে ভুলে বা অভ্যাসগতভাবে শবেবরাত হলেছেন তাতে সমস্যা নেই। কোনো অপরাধ হবে না এতে। কিন্তু আমাদের চেতনাতে এই রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’ বলেই ধারণ করতে হবে।

আমাদের সমাজে অনেক পরিভাষার মধ্যে ‘শবেবরাত’ একটি। ‘শবেবরাতর’ মতো আরো একটি পরিভাষা ‘তাসাউফ’। আপনার অবশ্যই শুনেছেন। ‘তাসাউফ’ না শুনলে ‘সুফি’ তো শুনেছেন। এখানে ‘তাসাউফ’ শব্দটিও সুন্নাত পরিভাষা নয়। রাসূল সা: সাহাবি, তাবেয়িদের যুগে ‘তাসাউফ’ শব্দটি ছিল না। শব্দটি তাবেয়িদের পরে এসেছে। কুরআন হাদিসে ‘তাসাউফ’ শব্দটি নেই। তবে আমরা ‘তাসাউফ’ বলতে যে কাজগুলোর কথা বলি সেই কাজগুলোর কথা আছে। কুরআন-হাদিসে এটিকে বলা হয় তাজকিয়া। তবে মনে রাখতে হবে, রাসূল সা: ও সাহাবিদের পরে আসা পরিভাষাগুলো নাজায়েজ নয়। কিন্তু সুন্নাত পরিভাষাগুলো উত্তম। আমাদের চেষ্টা করতে হবে সুন্নাত পরিভাষাগুলো ব্যবহার করতে। কাজেই আমরা ‘শবেবরাত’ না বলে যদি ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’ বলি তাহলে একটা সুন্নাত শব্দ অনুসরণ করা হবে। আবার যদি ‘মধ্য শাবানের রাত’ও বলি তাতেও রাসূল সা:-এর মুখ নিঃসৃত কথাটি বাংলায় অনুবাদ করে বলা হবে। কিন্তু ‘শবেবরাত’ বললে কিছুই হবে না। তাই আমরা রাসূল সা:-এর শব্দটাই ব্যবহার করার চেষ্টা করব। (শেষাংশ কাল)

ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) এর বক্তব্য থেকে অনুলিখন : সাইফুল্লাহ হিমেল

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com