ঈদে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত দুটি সিনেমা ‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’। দুটোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হল নিয়ে চলছে ‘বিদ্রোহী’। আর ‘গলুই’র হল সংখ্যা কম হলেও সিনেমাটির প্রদর্শনী নিয়ে ইতিমধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুর্শেদা জামানের বাধার কারণে আপাতত সেখানকার কয়েকটি হলে বন্ধ আছে ‘গলুই’র প্রদর্শনী। যা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে শাকিব খান বর্তমানে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এবার সেখান থেকেই কথা বলেছেন সিনেমাটি নিয়ে। জানিয়েছেন, করোনায় গত দুই বছর দেশের সিনেমা অনেকটাই থমকে ছিল। এবারের ঈদে ভালো মানের সিনেমা মুক্তিতে গতি আসা শুরু করছিল। সবাই ইন্ডাস্ট্রিতে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নও দেখছিলেন। প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী কলাকুশলী থেকে শুরু করে সিনেমা হল মালিক- প্রত্যেকের তাই দৃষ্টিই ছিল ঈদের সিনেমার দিকে।’
সিনেমার এই সুপারস্টার বলেন, ‘‘মুক্তির প্রথমদিন থেকেই আমার অভিনীত দুটি সিনেমা ‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’র হল রিপোর্টও দারুণ পাচ্ছিলাম। বিশেষ করে ‘গলুই’ এর দর্শকপ্রিয়তা ছিল শুরু থেকেই ছিল অন্যরকম ভালো লাগার। সুস্থ ধারার এই সিনেমা দেখতে মানুষ পরিবার নিয়ে আবার সিনেমা হলমুখী হয়েছেন; সংশ্লিষ্ট সবাইও তেমনটাই বলছিলেন। সব শ্রেণির দর্শকদের থেকে ইতিবাচক সব প্রতিক্রিয়া পাচ্ছিলাম। এমনকি দেশের প্রতিষ্ঠিত সব গণমাধ্যমেও সেই খবর উঠে আসছিল।’’
‘গলুই’র প্রসঙ্গে এই তারকাশিল্পী বলেন, ‘‘নতুন প্রজন্ম সরকারি অনুদানে তৈরি ‘গলুই’ সিনেমার মাধ্যমে নতুন করে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছিল; যা আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করছিল। কারও হয়তো অজানা নয় যে, ‘গলুই’র বেশিরভাগ শুটিং জামালপুর জেলায় হয়েছে। ফলে অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে ‘গলুই’ নিয়ে সেখানকার মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ এই জেলা শহরে নেই কোনো সিনেমা হল! বাধ্য হয়ে সংশ্লিষ্টরা জেলা শিল্পকলাসহ চারটি মিলনায়তনে ঈদের দিন থেকে সিনেমাটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। এসব মিলনায়তনে দর্শকেরও উপস্থিতি ছিল উপচেপড়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘একের পর এক সিঙ্গেল স্ক্রিন বন্ধ হওয়ার এই সঙ্কটকালে জামালপুরে বিকল্প ব্যবস্থায় ‘গলুই’ মুক্তির বিষয়টি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। যা হতে পারতো সিনেমা হলহীন অন্য জেলা কিংবা উপজেলা শহরগুলোর জন্য দৃষ্টান্ত। বাস্তবে ঘটলো উল্টোটা! বাঁধ সাধলো জামালপুর জেলা প্রশাসন! সিনেমাপ্রমীদেরও মন ভেঙে গেল।
নানান মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি, শত বছর আগের তৈরি ‘সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্ট’ এর দোহাই দিয়ে মিলনায়তনগুলোতে ‘গলুই’র প্রদর্শনী বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে! যা শুধু আমাকে ব্যথিত করেনি, বরং বিস্মিত ও হতবাক করেছে।‘গলুই’ সিনেমাটি যখন সাধারণ মানুষেরা সানন্দে গ্রহণ করেছেন, পরিবার নিয়ে দেখছেন; তখন এর প্রদর্শনী বন্ধের খবরে চলচ্চিত্রের প্রত্যেকটি মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরাও প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন।’
সবশেষে শাকিব খান বলেন, ‘‘অতীতে বিকল্প ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক সিনেমার প্রদর্শনী হয়েছে। সেসব সিনেমা প্রদর্শনে প্রশাসন সহায়তা করেছে। তাহলে ‘গলুই’ বিকল্প ব্যবস্থায় প্রদর্শন হতে সমস্যা কোথায়?
চলচ্চিত্রের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে সরকারের নানামুখী পরিকল্পনার কথা শুনে আসছি। সিনেমা হল মালিকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া, সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের সঠিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা, সিনেমা নির্মাণে বড় অনুদানসহ সরকারের বেশকিছু পরিকল্পনা হয়তো এখন বাস্তবায়নের পথে। একই সঙ্গে সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও চলচ্চিত্র উন্নয়নের আশ্বাস সবসময়ই দিয়ে থাকেন। আর সেই সময় যখন ব্রিটিশ আমলে তৈরি সিনেমা স্বার্থবিরোধী আইন দিয়ে পথ রোধ করা হয়, তখন বিষয়টি হয়ে ওঠে সাংঘর্ষিক। এমন অবস্থা বিরাজমান থাকলে বাংলা সিনেমা দিয়ে বিশ্বজয় করা তো দূরে থাক, এগিয়ে যাওয়াই অসম্ভব!
আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগীতায় খুব শিগগির জামালপুরসহ যেসব জেলায় সিনেমা হল নেই, সেখানকার মিলনায়তনগুলোতে সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘গলুই’ এর মতো সুস্থধারার সিনেমা দেশের মানুষকে উপভোগ করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’