শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন

১০ ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে পাঞ্জাবি লুটের অভিযোগ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৬ মে, ২০২২
  • ২৭৮ বার

রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের ছয়টি কাপড়ের দোকান থেকে ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের পাঞ্জাবি ও অন্যান্য পোশাক কোথাও টাকা না দিয়ে বা কোথাও আংশিক পরিশোধ করে নিয়ে গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুটি হল শাখা ছাত্রলীগের অন্তত ১০ কর্মী। ঈদুল ফিতরের আগে গত ২১ ও ২৩ এপ্রিল প্রকাশ্যেই এমন ঘটনা ঘটে। দোকানগুলোর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আট ছাত্রলীগ কর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। এই প্রতিবেদকের কাছে সংশ্লিষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত আছে।

ফুটেজ বিশ্লেষণ ও দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২১ এপ্রিল পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ রানা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের মাসুদুর রহমান আলিফসহ আরও দুজন আজিজ সুপার মার্কেটের কে-ক্রাফট, প্লাস-পয়েন্ট, খেয়া, সিক্সটি-নাইন দোকানগুলো থেকে বেশ কিছু কাপড় নিয়ে আসেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি দোকানেও তারা কাপড়ের মূল্য পুরোপুরি পরিশোধ করেননি।

অভিযুক্তদের মধ্যে রানা ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থী এবং হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈমের অনুসারী। আলিফ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তর অনুসারী।

 

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে আলিফের মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করে ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, ‘টাকা দিয়েই কেনাকাটা করেছেন’ বলে দাবি মোহাম্মদ রানার। প্রমাণ হিসেবে নিজের বিকাশ একাউন্টের স্টেটমেন্টের একটি ছবিও দেখান তিনি। এতে সিক্সটি-নাইনে ৬০০ টাকা, প্লাস পয়েন্টকে দুই দফায় ৭০০ টাকা ও কে ক্রাফটে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছেন।

তবে, সিক্সটি নাইন দোকান কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা চার হাজার ৩০০ টাকার পোশাক নিয়ে মাত্র এক হাজার ১০০ টাকা পরিশোধ করেন। অন্য দিকে, প্লাস পয়েন্ট ও কে ক্রাফট দোকান দুটিতে নির্ধারিত মূল্যে বেচাকেনা হলেও জোরপূর্বক যথাক্রমে ৫০ ও ২৫ শতাংশ ছাড়ে কাপড় কিনেছেন অভিযুক্তরা। প্লাস পয়েন্টে তিন হাজার ৪০০ টাকা বিল হলেও তারা দিয়েছেন এক হাজার ৭০০ টাকা। অন্যদিকে, কে-ক্রাফটে ছাড়ের পর তিন হাজার ৯০০ টাকার জায়গায় দেন তিন হাজার ৩০০ টাকা।

এদিকে, ২৩ এপ্রিল ইজি ও ব্যতিক্রম নামের দু’টি দোকানে হানা দেয় ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম শুভ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শাহনেওয়াজ আরেফিন পল্লব, একই বিভাগের রায়হান, সমাজকল্যাণ গবেষণা ইন্সটিটিউটের শেখ শান্ত আলম, দর্শন বিভাগের আব্দুল মমিন, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শফিকুল ইসলাম। এরা সবাই বঙ্গবন্ধু হলের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত’র অনুসারি।

ওই দিন তারা ইজি থেকে প্রায় ১৮ হাজার টাকা সমমূল্যের পাঞ্জাবি নেয়। সিসিটিভি ফুটেজে তাদের মধ্যে তিনজনকে মোট চার হাজার ৯০০ টাকা দিতে দেখা যায়। ব্যতিক্রম থেকে বেশ কিছু কাপড় নিলেও সেখানে তারা কোনো টাকা দেননি।

তবে অভিযুক্তদের মধ্যে শেখ শান্ত আলম ও আরিফুল ইসলাম শুভ’র দাবি তারা ৪০ শতাংশ ছাড়ে টাকা দিয়ে এসেছেন। যদিও এর কোনো রসিদ দেখাতে পারেননি তারা। আর শাহনেওয়াজ আরেফিন পল্লব অভিযোগ অস্বীকার করেন। অন্য অভিযুক্তদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

ঘটনার পর আজিজ সুপার মার্কেট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের নেতারা মিটমাট করেছিলেন বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে, ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন নাঈম বলেন, আপনার থেকে ঘটনাটি প্রথম শুনছি। এর সঙ্গে আমার হলের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আকরাম হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার কাছে এরকম কোনো অভিযোগ আসেনি। আসলে সেটা কঠোরভাবে খতিয়ে দেখা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com