যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমূখর পরিবেশে ১৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন নিউইয়র্ক-এ মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় সম্পৃক্ত তরুন বাংলাদেশী-আমেরিকানসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রবাসী বাংলাদেশী নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সকাল সাড়ে দশটায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। আলোচনা পর্ব শুরুর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্ম-উৎসর্গকারী বীর শহীদগণের স্মরণে একমিনিট নিরবতা পালন ও তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। এর পর উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশী-আমেরিকান নেতৃবৃন্দ। তাঁরা তাঁদের অর্জিত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্পসমূহের বাস্তবায়নে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আগত অতিথিদের আলোচনা শেষে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্টের শাহাদৎবরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সকল সদস্য, জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুইলাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১, রুপকল্প ২০৪১ ও ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ২০২১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটেগরি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য আমরা জাতিসংঘের চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছি যা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মর্যাদা ও সক্ষমতার স্বাক্ষর”।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, আমরা এখন শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, বিশ্বশান্তি রক্ষা, শান্তি-বিনির্মাণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ বিষয়ক আলোচনা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ অসংখ্য বহুপাক্ষিক প্লাটফর্মে বাংলাদেশ নেতৃত্বশীল ভূমিকা রেখে চলেছে মর্মে উল্লেখ করেন তিনি। স্থায়ী প্রতিনিধি আরও বলেন, “আমরা আজ বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতির দেশ। আশা করা যায়, ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। কোভিড ব্যবস্থাপনা ও অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বের কাছে আজ রোল মডেল বাংলাদেশ”।
প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অগ্রণী ভূমিকা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করছে। নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকানগণ এখানকার মূল ধারার রাজনীতিতে নেতৃত্বশীল ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এখানকার প্রবাসী ভাই-বোনেরা নিয়মিত রেমিট্যান্স প্রেরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখতে সহায়তা করছেন । জাতির পিতা ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের মধ্যে যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, তাদের দেশের ফিরিয়ে বিচারের আওতায় আনতে মিশনের উদ্যোগে প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
আলোচনা পর্ব শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক রথীন্দ্রনাথ রায় এবং শহীদ হাসান। নৃত্যগীতি পরিবেশন করেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস-এর একদল নৃত্যশিল্পী। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার আহবায়ক মিথুন আহমেদ এর কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে শেষ হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। শেষে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে কেক কেটে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।