রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে ইচ্ছুক গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব নির্দেশনার মধ্যে বলা রয়েছে- সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রে ১০ মিনিটের বেশি অবস্থান করতে পারবেন না।
একইসঙ্গে এবার সংবাদ সংগ্রহের কাজে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের জন্য কোনো স্টিকার ইস্যু করা হবে না বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে জানিয়ে তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করতে পারবেন সাংবাদিকরা।
এদিকে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে ১৩টি নির্দেশনার মধ্যে কয়েকটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর ‘সরাসরি হস্তক্ষেপ’ বলে মনে করছেন সাংবাদিক নেতারা। গণমাধ্যমের শক্তিশালী ভূমিকা আড়াল করে রাখার চেষ্টাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন অনেক প্রার্থী। তাদের আশঙ্কা গণমাধ্যমের ওপর এমন হস্তক্ষেপের সুযোগ নিতে পারে অশুভশক্তি।
রসিক নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহে ১৩ নির্দেশনা
১. ইসির পক্ষ থেকে দেওয়া বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন তবে কোনোভাবেই গোপনকক্ষের ছবি সংগ্রহ কিংবা ধারণ করতে পারবেন না।
২. একইসঙ্গে একাধিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং ১০ মিনিটের বেশি ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করতে পারবেন না।
৩. ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না।
৪. ভোটকক্ষের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না।
৫. সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে।
৬. সাংবাদিকরা ভোট গণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না।
৭. ভোটকক্ষ থেকে ফেসবুকসহ কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না।
৮. কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়, এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
৯. ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকরা প্রিসাইডিং অফিসারের আইনি নির্দেশ মেনে চলবেন।
১০. নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
১১. কোনো প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না।
১২. নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যেকোনো ধরনের প্রচারণা বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকবেন এবং
১৩. নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য নির্বাচনী আইন ও বিধি-বিধান মেনে চলবেন।
উল্লেখিত নির্দেশ পালন না করলে বা তার ব্যত্যয় ঘটালে নির্বাচনী আইন, বিধি ও কোড অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ও যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান।
এদিকে সংবাদ সংগ্রহে ইসির এই নির্দেশনার কয়েকটি বিষয় নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। কেউ কেউ এ ধরনের কড়াকড়ি নির্দেশনাকে ‘কালাকানুন’ হিসেবেও অবিহিত করেছেন।
বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহুল মোকাররবিন হিমেল বলেন, ‘ইসি থেকে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আপত্তিকর বিষয়টি হচ্ছে- ১০ মিনিটের বেশি ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করা যাবে না। এ ধরনের নির্দেশনা এর আগে অন্য কোনো নির্বাচনে শুনিনি। এবারই প্রথম নির্বাচন কমিশন থেকে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারে স্টিকার দেওয়া হচ্ছে না। আমরা যারা সংবাদ সংগ্রহের কাজে মোটরসাইকেল ব্যবহার করি, তারা কিভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবো, এটাও তো ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে।’
রংপুর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী বলেন, ‘এ ধরনের নীতিমালার নিন্দা জানাচ্ছি। নির্বাচন কমিশনের এসব নির্দেশনা স্বাধীন সাংবাদিকতায় এক ধরনের বাধা। এবার সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, এটা দুঃখজনক। এ ছাড়া পিআইডির অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড না থাকায় অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদ কর্মীদের নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের জন্য কার্ডও দিচ্ছে না কমিশন। আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু তিনি নাকি কিছুই করতে পারবেন না।’
রসিক নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন বলেন, ‘সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভোটগ্রহণের দিনসহ বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকরা যাতে সহজে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেন সেজন্য সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। তবে তা অবশ্যই নির্বাচনের সময়, ভোটগ্রহণ ও ভোট গণনার সময় প্রযোজ্য বিধি-নিষেধ মেনে করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইসির অনুমোদিত ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন। এজন্য ভোটকেন্দ্রের সংবাদ সংগ্রহের জন্য ইসি থেকে সাংবাদিকদের কার্ড সরবরাহ করা হবে। আর বিগত বিভিন্ন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকেই এবার সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি বা কমিশন প্রদত্ত স্টিকার দেওয়া হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থক সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহার করে দ্রুত অপরাধ করে সটকে পড়েনম যা নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।’
প্রসঙ্গত, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রংপুর সিটি করপোরেশনে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী ভোটার ২২৯টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এবার মেয়র পদে ৯ জনসহ সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৮ এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।