বাংলাদেশী পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আনা এবং মার্কিনী পণ্য বাংলাদেশে প্রেরণের মধ্যদিয়ে আমেরিকার বহুজাতিক সমাজে বাঙালি নারীরা ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। করোনাকালে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠার সময়েই প্রবাসের নারী উদ্যোক্তারা স্বপ্নের সিঁড়ি খুঁজে পেয়েছেন। স্বামী-সন্তানের জন্যে গৃহিনীর দায়িত্বটি পালনের পাশাপাশি পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য প্রসারের অভিপ্রায় সময়ের পরিক্রমায় লাভজনক একটি পেশায় পরিণত হয়েছে অনেক গৃহিনীর। কেউ কেউ এই ব্যবসার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে হাজারো নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান তৈরীতেও সক্ষম হয়েছেন। এমন প্রসঙ্গের অবতারণা করে কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা তাদের আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের পথে অনেক দূর এগিয়েছেন বলে উল্লেখ করলেন। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা স্বামী এবং সন্তানের সহায়তাও পাচ্ছেন পুরোদমে-একথাও স্বীকার করলেন অকপটে।
১৭ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক সিটির লাগোয়ার্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলের বলরুমে নারী উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি ও তাদের উৎসাহিত করতে জমকালো এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘ইউএস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ (ইউএসবিসিসিআই)। এটি ছিল সংস্থাটির দ্বিতীয় বার্ষিক এওয়ার্ড বিতরণী অনুষ্ঠান। নারী উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি ও উৎসাহিত করতেই মূলত: এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয় বলে উদ্যোক্তারা উল্লেখ করেন। নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণের প্রতিনিধিত্বকারি পেশাজীবী ছাড়াও ছিলেন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। এরফলে নারী উদ্যোক্তাগণের পাশাপাশি উদ্যোক্তা হতে আগ্রহীরাও সবিশেষ উপকৃত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের প্রতিনিধি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল এ্যাফেয়ার্স বিষয়ক ডেপুটি কমিশনার দিলীপ চৌহান বলেন, মাইনোরিটি এবং উইমেন উদ্যোক্তাগণের জন্যে সিটি অফিসে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বিপুল বরাদ্দও রয়েছে। তার সদ্ব্যবহার করতে আজকের এ অনুষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। দিলীপ চৌহান সকলকে সিটি মেয়র অফিসের সাথে যুক্ত থাকার উদাত্ত আহবান জানান।
দিলীপ উল্লেখ করেন, এই সিটিতে সোয়া দুই লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই মালিক হচ্ছেন ইমিগ্র্যান্ট অথবা মাইনোরিটি কম্যুনিটির লোকজন। কমপক্ষে সাড়ে ১৪ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে নারীর মালিকানায়। অর্থাৎ নারী উদ্যোক্তাগণ এই সিটিকে সমৃদ্ধ করতে নিরন্তরভাবে সচেষ্ট রয়েছেন।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্র্যান্ট কম্যুনিটিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সুন্দরী প্রতিযোগিতায় ‘মিস ইমিগ্র্যান্ট’ খেতাবপ্রাপ্ত মেকডালিনা কুলসিজ ও আয়োজক সংস্থাটির পরিচালক শেখ ফরহাদ।
স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের প্রধান কার্যনির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট লিটন আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু, নিউইয়র্ক স্টেট এ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড আই ওয়েপ্রিন, কুইন্স ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রঙ্কস চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট এ্যান্ড সিইও লীসা সরিন।
নানা প্রতিকূলতা সত্বেও বহুজাতিক এ সমাজে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাতি অর্জনকারিগণের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন এস জে ইনোভেশনের কো-ফাউন্ডার সাহেরা চৌধুরী, স্ট্যাটস ভেঞ্চার্স ইনকের ফাউন্ডার এ্যান্ড সিইও পূজা রায়, ‘মিস ইমিগ্র্যান্ট’ মেকডালিনা কুলসিজ, আরবান সেটারের প্রেসিডেন্ট এ্যান্ড সিইও নাহিদ আহমেদ, আহাদ এ্যান্ডকোম্পানীর সিইও আহাদ আলী সিপিএ, এক্সিট রিয়েল্টি প্রাইমের ডাইরেক্টর অব সেলস ইমরান ভূঁইয়া, এস জে ইনোভেশনের ফাউন্ডার সাহেদ ইসলাম, হোস্ট সংগঠনের পরিচালক ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, ইউএসবিসিসিআইয়ের উইমেন এ্যাম্পাওয়ারমেন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপার্সন রুমা আহমেদ, ইউএসবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট বখত রুম্মান বিরতিজ, হাইমোকান্তি ট্রেড কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ফারজানা হক, প্রিসিলা নিউইয়র্ক ইনকের প্রতিষ্ঠাতা ফাতেমা নাজনীন প্রিসিলা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রতিবছর ১৯ নভেম্বরকে ‘নারী উদ্যোক্তা দিবস’ বা ‘উইম্যান এন্টারপ্রেনিউরশিপ ডে’ ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ১৩ জন নারী উদ্যোক্তাকে সম্মাননা জানানো হলো বাংলাদেশের বিজয়ের ৫১তম বার্ষিকীতে। সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন স্টাইল উইথ মি’র প্রতিষ্ঠাতা সুমনা রিমি, রিদম নেশন এন্টারটেইনমেন্টের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ডিম্পল উইলাবাস, রোকসানা হালাল ডেলাইটসের প্রতিষ্ঠাতা রোকসানা আহমেদ, স্টেটস ভেনচার করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা পূজা রায়, আরবান সেটারের প্রেসিডেন্ট ও সিইও নাহিদ আহমেদ, ইনফিনিটি বিউটি বারের সিইও মাহবুবা রহমান, ভারসাইলস ভেনচারের চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার আনা গাজার, ব্রাইড বাই অপির প্রতিষ্ঠাতা অর্পি আহমেদ, ওমেনস ফ্যাশনের সিইও মেহেজাবিন মাহাবুব মেহা, এস জে ইনোভেশনের কো ফাউন্ডার সাহেরা চৌধুরী, প্রিসিলা নিউইয়র্ক ইনক’র প্রতিষ্ঠাতা ফাতেমা নাজনীন প্রিসিলা, অরেঞ্জ রিভার মিডিয়ার সিইও মেগডালিনা কুলিটস এবং হাইমোকান্তি ট্রেড করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারজানা হক।
স্বাগত বক্তব্যে ইউএস বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ইউএসবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট ও সিইও মো. লিটন আহমেদ বলেন, আমরা সবাই এখানে জড়ো হয়েছি এই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও নারী উদ্যোক্তা দিবসের অর্জন উদযাপন করতে। আজকের এই সামিটে নতুন উদ্যোক্তারা তাদের কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত লক্ষ্য অর্জনে কিভাবে কাজ করছেন তা সুধীজনের জন্য একটি ইন্টারেক্টিভ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ এবং তথ্য গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একটি প্ল্যাটফর্ম মনে করা যেতে পারে।
লিটন আহমেদ বলেন, এই ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীরা নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত পেশাদারদের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পাচ্ছেন এবং তাদের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি মতবিনিময়েরও সুযোগ পাচ্ছেন। এই সামিট নতুন নারী উদ্যোক্তাদের তাদের পরবর্তী পরামর্শদাতা, বন্ধু এবং ক্লায়েন্টদের সাথে যুক্ত করার ক্ষেত্রে অপরিসীম ভ’মিকা রাখবে বলে আশা করছি।
লিটন আহমেদ উল্লেখ করেন, বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগে নারী উদ্যোক্তার উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। কারণ সামাজিক ও পারিবারিক দায়বদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা বিশেষ বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না বলে অনলাইন উদ্যোগে নারীরা খুব স্বচ্ছন্দে পদচারণা করতে পারেন।