আমাদের এ পৃথিবীতে কোটি কোটি প্রাণীর একত্রে বসবাস। ইসলামে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ব্যাপারে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
এমন কোনো জিনিস নেই, আমার কাছে যার ভান্ডার রক্ষিত নেই। আমি তা প্রয়োজন অনুসারেই সরবরাহ করে থাকি। আর আমি বৃষ্টিসঞ্চারি বায়ু প্রেরণ করি এরপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তা তোমাদের পান করতে দিই। অথচ তোমরা তো সেই ভান্ডারের মালিক নও। সূরা হিজর, আয়াত (১৯-২২)। মানুষ তার খাদ্যবস্ত্র বাসস্থান ইত্যাদির জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল।
শুধু খাদ্যবস্ত্র ও বাসস্থানই নয় বরং বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি থেকে ওষুধ, ফুল, ফল, মাছ, মাংস, দুগ্ধ, চামড়া এবং মধু পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে সূরা আবাসায় আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, মানুষ তার খাবারের জিনিসগুলোর প্রতি লক্ষ করুক-আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি এরপর তাতে উৎপন্ন করেছি শষ্য, আঙুর শাকসবজি, জয়তুন, খেজুর, বিপুল বৃক্ষরাজির নিবিড় বন, ফল-ফলাদি ও ঘাস। (এভাবে আমিই ব্যবস্থা করি) তোমাদের ও তোমাদের গবাদিপশুর জীবন ধারণের সামগ্রী। আয়াত (২৪-৩২)। যে কোনো দেশের জীববৈচিত্র্য সে দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।
জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ আমাদের বাংলাদেশের এক গবেষণায় দেখা গেছে ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রতিবছর গড়ে দেশে ৪ শতাংশ হারে উভয়চর প্রাণী হ্রাস পাচ্ছে। যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের প্রত্যক্ষ কতগুলো হুমকির মধ্যে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, জনসংখ্যার চাপ, বায়ু ও পানি দূষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত সংগ্রহ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার, প্লাস্টিকজাতীয় পণ্যের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, জলবিদ্যুৎ ব্যবস্থার পরিবর্তন, ইলেকট্রনিক্স বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনা এবং মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ ইত্যাদি অন্যতম।
ইসলামে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা রয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে মানুষকে অশান্তি সৃষ্টি না করার জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যেমন সূরা আরাফের ছাপ্পান্ন নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, শান্তি স্থাপনের পর তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কর না।
এছাড়া সূরা রুমে আল্লাহতায়ালা বলেন, মানুষের কৃতকর্মের ফলে জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উৎসাহিত করতে রাসূল (সা.) বলেন, যদি নিশ্চিতরূপে জান যে, কেয়ামত এসে গেছে তখন তোমার হাতে যদি একটা চারাও অবশিষ্ট থাকে তবে সেটাও রোপণ করবে। (মুসলিম) অযথা পশুপাখি শিকার করাও ইসলামে নিন্দনীয়।
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো প্রাণীকে লক্ষ্যবস্তু বানিও না। (মুসলিম) অন্য এক হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি অহেতুক কোনো চড়ুই পাখি মেরে ফেলল কেয়ামতের দিন পাখিটি আল্লাহর কাছে এ বলে নালিশ করবে, হে আল্লাহ্! অমুক ব্যক্তি আমাকে অহেতুক হত্যা করেছে। (নাসায়ি)। অতএব, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে শিক্ষাব্যবস্থা ও গবেষণার মাধ্যমে গণসচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। তাই জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষায় আমাদের সবাইকে জনসচেতনতা তৈরিতে একত্রে কাজ করতে হবে এবং ইসলামের নির্দেশনাবলি যথাযথ পালনে সচেষ্ট হতে হবে।