পবিত্র শবেবরাত আজ। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দেশের মুসলিম সম্প্রদায় আজ দিনটি পালন করবে। এ উপলক্ষে সারা দেশে মসজিদ ও মাদরাসাগুলোয় বিভিন্ন আয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, দোয়া ও মুনাজাতের আয়োজন করেছে। শবেবরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে আজ পত্রিকা অফিস এবং আগামীকাল সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে।
হিজরি ১৪ শাবান দিবাগত রাতে পবিত্র শবেবরাত পালন করা হয়। শবেবরাত ‘লাইলাতুল বরাত’ নামেও পরিচিত। ফার্সি শব্দ ‘শব’ অর্থ রাত। আর বরাত অর্থ ভাগ্য। এ জন্য এ রাতকে ভাগ্য রজনীও বলা হয়। এ রাতে মহান আল্লাহর কাছে পাপ থেকে মুক্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। অনেকেই এ রাতে নফল নামাজ ও কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অতিবাহিত করেন। এ ছাড়াও বাবা-মাসহ আত্মীয়দের কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন অনেকেই।
পবিত্র শবেবরাতের পবিত্রতা রক্ষা ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বাদ মাগরিব থেকে শুরু হয়ে সারা রাত ‘শবেবরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’সহ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ভোরে দোয়া ও মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
পনেরো শাবানের রাতের ফজিলত সম্পর্কে একাধিক ‘মারফু’ হাদিস ও ‘আসারে সাহাবা’ বর্ণিত রয়েছে। এগুলো দ্বারা ওই রাতের ফজিলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। সালাফে সালেহিনের কেউ কেউ এ রাতে নফল নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হতেন। আর শাবানের রোজার ব্যাপারে তো সহিহ হাদিসগুলো রয়েছে। অবশ্য শুধু পনেরো তারিখের দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া মাকরূহ। পনেরো তারিখের সাথে দু-একদিন মিলিয়ে নেয়া উত্তম। আর এই দিন বা রাতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা এবং সাজ-সজ্জার ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে এমন নির্দেশনা বিদয়াত ও ভিত্তিহীন। তবে বাংলাদেশের অনেক মুসলিম শবেবরাত উপলক্ষে অধিক এবাদত বন্দেগি করার জন্য রাতে ভালো খাবারের আয়োজন করে এবং অজু, গোসল ও সুগন্ধি ব্যবহার করে ইবাদতে লিপ্ত হয়। এ রাতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাধারণ নফল নামাজের মতো নামাজ পড়া উচিত। হাদিস দ্বারা শুধু এতটুকুই প্রমাণিত হয়, এ রাতের নফল নামাজ হবে লম্বা, সেজদা হবে দীর্ঘ। দুই রাকাত করে যত ইচ্ছা পড়া যাবে; রাকাত সংখ্যাও নির্দিষ্ট নেই; কোনো নির্দিষ্ট সূরার সীমাবদ্ধতাও নেই।
ইমাম যাইনুদ্দীন ইবনে রজব দামেস্কী বলেন, একজন মুমিন বান্দার উচিত, এ রাতে জিকির ও দোয়ার জন্য পুরোপুরি অবসর হওয়া। প্রথমে খাঁটি মনে তওবা করবে; এরপর মাগফিরাত ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে; আপদ-বিপদ দূর হওয়ার জন্য দোয়া করবে এবং নফল নামাজ পড়বে। সব সময় সেসব গুনাহ থেকে বিরত থাকবে যেগুলো ওই রাতের বিশেষ ফজিলত (ব্যাপক ক্ষমা) থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে। যেমন শিরক, হত্যা, জিনা, হিংসা ইত্যাদি।
ইমাম ইবনুল হাজ্জ বলেন, এ রাত যদিও শবেকদরের মতো নয়; কিন্তু এর অনেক ফজিলত ও বরকত রয়েছে। আমাদের পূর্বসূরি আলেমরা এ রাতের যথেষ্ট মর্যাদা দিতেন এবং এর যথাযথ হক আদায় করতেন। কিন্তু আজ সাধারণ লোকেরা বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উল্টো করে ফেলেছে। তারা রসম-রেওয়াজ ও কুসংস্কারের পেছনে পড়ে এর খায়ের বরকত ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।